বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৫ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ৯ শাওয়াল ১৪৪৫


ঢাকা সিটি নির্বাচন: কতটা আশাবাদী ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীরা?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সুফিয়ান ফারাবী
বিশেষ প্রতিবেদক

ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে আগামী ৩০ জানুয়ারি। এ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন আগামী ৩১ ডিসেম্বর। বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এছাড়াও নির্বাচনী মাঠে থাকবেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টিসহ আরো কিছু দল।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। উত্তর সিটিতে আতিকুল ইসলাম আর দক্ষিণে শেখ ফজলে নূর তাপসকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।

বিএনপি থেকে ঢাকা উত্তরের প্রার্থী হচ্ছেন থাবিত আউয়াল। ঢাকা দক্ষিণে প্রার্থী হচ্ছেন অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক। ইতিমধ্যে বিএনপি'র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গণমাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে দিয়েছেন।

অন্যদিকে মাঠে সরব ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-ও। সর্বপ্রথম তারাই মনোনয়ন চূড়ান্ত করে প্রার্থী ঘোষণা দেন। ঘোষণা অনুযায়ী ঢাকা উত্তরের হাতপাখা প্রতীকে লড়বেন অধ্যক্ষ শেখ ফজলে বারী মাসউদ, অন্যদিকে দক্ষিণে আলহাজ্ব আব্দুর রহমান।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের দুই মেয়র পদপ্রার্থী বেশ জোরালো প্রচারণা নিয়ে নির্বাচনী মাঠে কাজ করছেন। গতকাল তারা নির্বাচন অফিসে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। পরিপূর্ণ নির্বাচনী মেজাজে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন তারা। দলটির কেন্দ্রীয় মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনুস আহমেদ মনে করছেন, স্থানীয় নির্বাচন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন কিছুটা ভিন্ন হতে পারে।

তিনি বলেন, “গত সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন যে সমালোচনার মুখে পড়েছে, সেই দুর্নাম কাটিয়ে উঠতে নিরপেক্ষ নির্বাচন তারা দিতে পারে। তাদের উচিত একটি ফেয়ার ইলেকশন দিয়ে জনগণের মাঝে আস্থা তৈরি করা। আর যদি তারা বরাবরের মতো এবারেও ভোট ডাকাতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয় তাহলে ইতিহাসের কালো অধ্যায়ে তাদের নাম থেকে যাবে।”

সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয় থাকা সত্ত্বেও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার কারণ জানতে চাইলে ইউনুস আহমেদ বলেন, “আমাদের প্রধান টার্গেট থাকবে যেকোন মূল্যেই হোক নির্বাচনে জয়ী হওয়া। নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন কমিশনের কারণে যদি কোনভাবে সেটা নাও হয় তবুও এই নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে প্রার্থীদের একটা সম্পর্ক তৈরি হয়। নির্বাচন হলো জনগণ ও নেতাদের মাঝে সেতুবন্ধনের মত।”

“ফেয়ার ইলেকশন হলে আমরা আশাবাদী আমরা জয়ী হবো। কারণ, মানুষ দুদিকে আস্থা হারিয়ে এখন তৃতীয় কোনো শক্তি খুঁজছে। আপনারা দেখেছেন, গত নির্বাচনে আমাদের প্রার্থীরা তৃতীয় অবস্থানে ছিল। নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতিত্ব থাকা সত্ত্বেও আমাদের প্রার্থীদের ব্যালট পেপারে বেশ ভালো সিল পড়েছে। সে থেকে বলতে পারি ফেয়ার ইলেকশন হলে সিটি নির্বাচনে আমাদের প্রার্থীরা জয়ী হচ্ছেন।” যোগ করেন অধ্যক্ষ ইউনুস আহমেদ।

এদিকে নির্বাচনে বেশ আত্মবিশ্বাসী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী আলহাজ্ব আব্দুর রহমান। গত নির্বাচনে ব্যালটে সিলের বিবেচনায় তাকে তৃতীয় স্থান অধিকারী দেখানো হয়েছিল। এছাড়াও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হেভিওয়েট এ প্রার্থী গত সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন ঢাকা-৭ আসন থেকে।

জনসম্পৃক্ততার কথা বিবেচনা করে ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতারা এবারও আস্থা রাখছেন আলহাজ্ব আব্দুর রহমানের প্রতি। ফেয়ার ইলেকশন হলে তিনিই হবেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পরবর্তী মেয়র -এমনটাই দাবি তার।

তিনি বলছেন, “গতবার যদি ফেয়ার ইলেকশন হতো আমার শতভাগ আত্মবিশ্বাস আমি বিজয়ী হতাম। কিন্তু আমাকে তৃতীয় স্থান অধিকারী দেখানো হয়েছিল। আমাদের প্রতি মানুষের আস্থা আছে। সুতরাং যদি ফেয়ার ইলেকশন হয় তাহলে জনগণ এবারও আমাকে বেছে নিবে।”

“মেয়র হওয়ার পর আমার প্রধান লক্ষ্য থাকবে নগরীর জনদুর্ভোগ কমানো। বর্তমান মেয়রের অদক্ষতা ইতিমধ্যে নগর ও দেশবাসীর সামনে উন্মোচিত হয়েছে। আমি মেয়র নির্বাচিত হলে যানজট মুক্ত, পরিবেশবান্ধব ঢাকা উপহার দিব দক্ষিণের নগরবাসীকে।” বলছিলেন আলহাজ্ব আব্দুর রহমান।

অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলনের তরুণ নেতা অধ্যক্ষ শেখ ফজলে বারী মাসউদ পুরোদমে নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু নির্বাচন কতটা স্বচ্ছ হবে এ নিয়ে শঙ্কায় আছেন তিনি।

“গত ৩০ শে ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকার ব্যালটের মাধ্যমেও ভোট ডাকাতি করতে সক্ষম হয়েছে। এবার যেহেতু ইভিএমে নির্বাচন হবার কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন তাই আমাদের শঙ্কা আরো বেড়ে গেল।” বললেন শেখ ফজলে বারী মাসউদ।

তিনি বলেন, তবে নির্বাচন নিরপেক্ষ হলে আগামী নগর ভবনের দায়িত্ব পাচ্ছে ইসলামী আন্দোলন। নগর ভবনের দায়িত্ব ইসলামী আন্দোলনের কাঁধে আসলে প্রথমেই আমরা দুর্নীতিমুক্ত নগর ভবন গড়বো। এছাড়াও যানজট মুক্ত শহর, পরিচ্ছন্ন নগরী এবং নারীবান্ধব ঢাকা গড়ার লক্ষ্যে কাজ করবো।”

নির্বাচন কেমন হবে, ইভিএম প্রয়োগ হবে নাকি ব্যালটে আস্থা রাখবে নির্বাচন কমিশন, নির্বাচন কমিশন তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারবেন তো!, আগামী দিনে নগরপিতা হচ্ছেন কারা -এসকল প্রশ্নের উত্তর জানা যাবে আগামী ৩০ ডিসেম্বর। জনগণের নির্বাচিত প্রার্থীই নেতৃত্ব দিবে আগামীদিনের ঢাকাকে -এই প্রত্যাশা নগরবাসীর।

আরএম/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ