শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


থার্টি ফার্স্ট নাইটের অপসংস্কৃতি রোধে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ চান আলেমরা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সুফিয়ান ফারাবী
বিশেষ প্রতিবেদক

থার্টি ফার্স্ট নাইট বা ঈসায়ী সনের প্রথম দিন। এই দিনটিকে ঘিরে ইউরোপ-আমেরিকাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিশেষভাবে আনন্দ, বিনোদন ও প্রমোদের ব্যবস্থা করা হয়। উদ্দাম নৃত্য, হই হুল্লোড়, মদ্যপান, অবৈধ মেলামেশা, এসব সে দিনটির জন্য বিনোদনের বিশেষ উপাদান। অবশ্য ইংরেজরা ঐতিহাসিকভাবে দিবসটি পালন করে আসছে বর্ষবরণ উৎসব হিসেবে।

তবে অনেক আলেম ও ইতিহাসবিদরা বলছেন, এটা নিছক কোনো বর্ষবরণ উৎসব নয়। এর গোড়াপত্তন ধর্মীয় বিশ্বাসের উপর ভিত্তি। প্রাচীন রোমান সভ্যতার যুগে কিছু গ্রাম্য ও অশিক্ষিত খ্রিস্টানদের মাধ্যমে এ ধর্মীয় সংস্কৃতি চালু হয়। যেটা আজ শুধু ইউরোপ-আমেরিকাতেই নয়, বরং সারাবিশ্বে তার কালো থাবা ফেলতে সক্ষম হয়েছে।

ইতিহাসবিদদের তথ্যমতে, আনুমানিক দেড়শ’ বছর আগে শুধুমাত্র পশ্চিমাঞ্চলেই এই উৎসবের আয়োজন করা হতো। তবে গত দেড়শ’ বছরে সাংস্কৃতিক এই ক্যান্সারটি আফ্রিকা, মিডিলিস্ট ও ভারত উপমহাদেশসহ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। যা এখন সারাবিশ্বে বর্ষবরণ উৎসব হিসেবে পালিত হচ্ছে।

থার্টি ফার্স্ট নাইটকে কী ইসলাম সমর্থন করে, এর গোড়াপত্তন কোথায়, এটা কী ইসলামী ও দেশীয় সংস্কৃতির জন্য হুমকি- এ সকল প্রশ্ন কথা হয় বিজ্ঞ  আলেমদের সঙ্গে। কথা বলেছেন ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন, সাবেক অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ওমরগনি এম,ই,এস কলেজ চট্টগ্রাম,  মারকাযুত তারবিয়াহ বাংলাদেশের প্রিন্সিপাল মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, সাভার উপজেলা ওলামা পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ব্যাংক টাউন কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মুফতি রফিকুল ইসলাম সরদার।

থার্টি ফার্স্ট নাইট দমনে সরকারকে আরো কঠোর হতে হবে: অধ্যাপক আ ফ ম খালিদ হোসাইন

দিবস পালন বিষয়টি ইসলামে প্রমাণিত নয়। কোন নবি বা সাহাবির যুগে এর রেওয়াজ ছিল না। বর্ষবরণের ফাঁক দিয়ে আমাদের দেশে বর্তমানে পশ্চিমা বিশ্বের দুর্গন্ধযুক্ত থার্টি ফার্স্ট নাইট সাংস্কৃতি অনুপ্রবেশ করেছে। যে দিনটিকে কেন্দ্র করে মানুষের সভ্যতার অবক্ষয় ঘটছে।

হাজারো তরুণ নেশার জগতে অভিষেক করছে থার্টি ফার্স্ট নাইটে। অন্যদিকে হাজারো নারী তাদের চরিত্র নষ্ট করছে উৎসবের ফাঁদে পা দিয়ে। সুতরাং ইসলাম কোনভাবেই এর অনুমতি দিতে পারে না। থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করা হারাম। এমনকি আমি তো এ-ও বলতে চাই, এটা শুধুমাত্র বর্ষবরণ উৎসব নয়, বরং এটা খ্রিস্টানদের ধর্মীয় উৎসব।

গত কয়েক বছর যাবত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সরকারের আইন প্রয়োগকারী ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থার্টিফার্স্ট নাইট বিষয়ে সতর্ক করায় তিনি প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমি প্রশাসনকে সাধুবাদ জানাই, তারা এ বিষয়ে কিছুটা হার্ডলাইনে এগুচ্ছেন।

গত কয়েক বছর যাবত আমরা দেখতে পাচ্ছি, মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ডিএমপি কমিশনারসহ আইন প্রয়োগকারী দলের শীর্ষ কর্মকর্তাগণ এর বিরুদ্ধে সতর্ক করছেন এবং কথা বলছেন। তবে প্রশাসনকে সাংস্কৃতিক এই ক্যান্সার রোধে আরো কঠোর হতে হবে।

কোনভাবেই যেন কেউ এদিন কে কেন্দ্র করে আনন্দ বিনোদনের নামে নেশা ও নারীতে বুঁদ হয়ে না থাকতে পারে। মনে রাখতে হবে এটা আমাদের দেশীয় ও ইসলামী সংস্কৃতির প্রধান হুমকি। আমাদেরকে দেশীয় সংস্কৃতি ও ধর্মীয় মূল্যবোধ বজায় রাখতে হবে।

থার্টি ফার্স্ট নাইট দুর্গন্ধযুক্ত পশ্চিমা অপসাংস্কৃতির সামান্য নমুনা: মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী

ইসলামে নববর্ষের উদযাপন বলে কোন কিছুই নেই। চাঁদের নির্দিষ্ট তারিখের সাথে কিছু এবাদতের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বটে, কিন্তু এমনিতে ইসলামে কোন বিশেষ দিবস পালনের রীতি নেই।

যেসব উৎসব-আয়োজনে মানুষের জীবন-সম্ভ্রমের নিরাপত্তাঝুঁকি, নামাজ-ইবাদতের জন্য প্রতিবন্ধক, বিধর্মীদের অনুসরণ, সময় ও অর্থের অপচয়, জুয়া-লটারি, রং খেলা, উদ্দামনৃত্য-গীত, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, উল্কি আঁকা, অবৈধপণ্যের বিপণন ইত্যাদির বাহুল্য থাকে, তা একজন ঈমানদারের জন্য অশোভন।

কেননা শরীর ও মনের বিকাশে যেসব কাজকর্মের ফলে ফরজ লঙ্ঘন অথবা হারামের অনুষঙ্গ তৈরি হয়, সে সব ইসলামের দৃষ্টিতে কবিরা গুনাহ। একটি কবিরা গুনাহ জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়ার যৌক্তিকতা হিসেবে যথেষ্ট। কবিরা গুনাহ তাওবা ছাড়া মাফ হয় না।

থার্টি ফার্স্ট নাইট অথবা ইংরেজি নববর্ষের প্রথম রাত উদযাপনের নামে মদ ও নেশাদ্রব্যে আকণ্ঠ ডুবে যাওয়া এবং উদ্দম যৌবন জোয়ারে গা ভাসানোর যে জঘন্য কালচার ইদানিং মহামারী রূপে আমাদের সমাজকে গ্রাস করতে চাইছে, তা মূলত পচে, গলে দুর্গন্ধ ছড়ানো পশ্চিমা সংস্কৃতির ছোট্ট একটি নমুনামাত্র। পশ্চিমা অপসংস্কৃতির এই প্রচলন আমাদের দেশ, দেশের মানুষ অথবা সংস্কৃতির সাথে কোনভাবেই খাপ খায় না।

আজ বাংলাদেশে পারিবারিক বন্ধন টুটে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে, এর সবচেয়ে বড় অনুঘটক হিসেবে নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কথা বলতে হয়। এই অবক্ষয়ের কারণে সমাজে ব্যাপকভাবে মাদক ও নেশাদ্রব্যের প্রচলন ঘটেছে। থার্টি ফার্স্ট নাইট সেই মাদক কালচারে যেন ঢোলের বাড়ি দেওয়ার মতন।

আজ বাংলাদেশের পরিবার এবং সমাজের বড়দের পাশাপাশি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মহল পর্যন্ত এই বিষয়ে উদ্বিগ্ন। সে কারণে আমরা অনতিবিলম্বে এইসব সমাজবিধ্বংসী অপসংস্কৃতি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাবো।

থার্টি ফার্স্ট নাইটের মাধ্যমে পেগানিজমের চর্চা হচ্ছে: মুফতি রফিকুল ইসলাম সরদার

থার্টি ফার্স্ট নাইট ইসলাম সমর্থন করে না। এটা কোন ভাবে আমাদের বাঙালি ও মুসলিম সংস্কৃতির সাথে যায় না। ইতিহাস বলছে প্রাচীন রোমান সভ্যতার জামানায় কিছু গ্রাম্য বেদুইনরা সর্বপ্রথম থার্টি ফার্স্ট নাইট পালন করতে শুরু করে। এবং দীর্ঘকাল পর্যন্ত এটা তাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। তখনকার শিক্ষিত ও শহরবাসীরা এটাকে গ্রাম্য প্রচলন হিসেবে মনে করতেন।

কিন্তু ধীরে ধীরে ইংরেজি নববর্ষ পালনের মধ্য দিয়ে প্যাগানিজমের এই বিশেষ উপাসনাটি সারা বিশ্বের মানুষের মাঝে ঢুকে পড়ে। যা মূলত কোন ধর্মীয় উৎসব ছিল না।

অন্যান্য ধর্মের উৎসবের দিনে মুসলমানদের অংশগ্রহণ যেভাবে হারাম ঠিক থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন করাও হারাম। বিশেষত এর মাধ্যমে বাঙালির সংস্কৃতি হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমাদের নিজস্ব চেতনা, বিশ্বাস ও আদর্শ সর্বোপরি সভ্যতা ও সংস্কৃতির দিকে লক্ষ্য রাখা উচিত।

আরএম/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ