বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১১ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

শিরোনাম :
‘মানতিক; যুগের চাহিদার সাথে মিলে না’ এ ধরেণের কথা অযৌক্তিক: মুফতি হিফজুর রহমান দাওরায়ে হাদিসের ফলাফল নজরে সানীর আবেদনের সময় বাকি ৩ দিন  বৃষ্টি প্রার্থনায় জামিয়াতুল আবরার রাহমানিয়ায় ‘সালাতুল ইস্তিসকা’  আদায় হাসপাতালে সৌদি বাদশাহ সালমান সোস্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত পাঠ্য তালিকার সাথে বেফাকের পাঠ্য তালিকার সম্পর্ক নেই: বেফাক সৈয়দপুরে তাপদাহে অতিষ্ঠ মানুষ, ‘হিটস্ট্রোকে’ ১ জনের মৃত্যু স্বর্ণের দাম আরও কমলো, ভরি ১ লাখ ১৪ হাজার ১৫১ টাকা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান ইরান-পাকিস্তানের ঢাবিতে বৃষ্টির জন্য ‘সালাতুল ইসতিস্কা’র অনুমতি দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ‘বৃষ্টির জন্যে সালাত আদায় করলেই অবশ্যম্ভাবী বৃষ্টি চলে আসবে—বিষয়টা তা নয়’

সাকরাইন উৎসব : একটু ভেবে দেখার অনুরোধ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা ।।

সাকরাই উৎসব। একে পৌষ সংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তিও বলে। বাংলা বর্ষের পৌষ মাসের শেষ দিন এই উৎসব পালন করা হয়। বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন জায়গায় এই উৎসব চোখে পড়ে। উৎসবে থাকে পিঠা খাওয়া, ঘুড়ি ওড়ানো ইত্যাদির আয়োজন। সন্ধ্যার পটকা ফুটিয়ে ফানুস উড়িয়ে উৎসবের সমাপ্তি ঘটে।

ভারতের বীরভূমের কেন্দুলী গ্রামে এই দিনে জয়দেব মেলা হয়। বাউল গান এই মেলার অন্যতম আকর্ষণ। বাংলাদেশের পুরান ঢাকার হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় জমজমাটভাবে উদযাপিত হয় পৌষসংক্রান্তি তথা সাকরাইন। শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার, গোয়ালনগর, লক্ষ্মীবাজার, সূত্রাপুর, গেণ্ডারিয়া, লালবাগ ও এর আশেপাশের এলাকাগুলোয় এখনো এই সাকরাইন উৎসব চোখে পড়ে। বিকেল বেলা এসব এলাকার আকাশে রঙ বেরঙের ঘুড়ি ওড়ে। ভোঁ কাট্টা (ঘুড়ি কাটাকাটি) প্রতিযোগিতাও হয় কোথাও কোথাও। হালে তার সঙ্গে যোগ হয়েছে ডিজে পার্টি, আতশবাজি, ফানুস ইত্যাদি।

ঘুড়ি ওড়ানো : প্রাচীন মহাকাব্য মহাভারতেও এই দিনের তাৎপর্য সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে। সনাতন হিন্দু ধর্মের বিশ্বাস মতে, মানুষ, সূর্য দেবতার কাছে নিজেদের ইচ্ছা বা আঁকুতিকে সুন্দর সুন্দর ঘুড়ির মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারে। বাহক হিসেবে দেবতার কাছে ঘুড়ি তাদের মনোবাসনা পৌঁছে দেয়। পুরান ঢাকার হিন্দু বাসিন্দারা এখনো এটাকে পূজা হিসেবে উদযাপন করেন (https://bbc.in/30gBoHV; https://bit.ly/2td9hNU) তাই বলা যায়, উৎসবটি একটি বিশেষ ধর্মের পরিচয় বহন করে।

আর যখন কোনো উৎসব বিশেষ ধর্মের পরিচয় বহন করে এবং তার সঙ্গে ধর্মীয় বিশ্বাস জড়িয়ে থাকে তাতে মুসলমানের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকে না। কেননা তা কখনো কখনো মানুষকে শিরকে লিপ্ত করে। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর নির্দেশ হয়েছে আল্লাহ ছাড়া এমন কাউকে ডাকা যাবে না, যে তোমার ভালো কারতে পারবে না আবার মন্দও করতে পারবে না। বস্তুত তুমি যদি এমন কাজ কোরো, তাহলে তুমি অবিচারকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (সুরা ইউনুস : আয়াত ১০৬)

ফানুস ওড়ানো : রাষ্ট্রীয়ভাবে বারবার সতর্ক করা হলেও তরুণ প্রজন্মের কাছে ফানুস ওড়ানো জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তাদের প্রায় প্রতিটি উৎসব আয়োজনে থাকে ফানুস। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফানুস ওড়ানোর প্রচলন আছে আবার ফানুস থেকে সৃষ্ট দুর্ঘটনার কারণে অনেক শহর কর্তৃপক্ষ তা নিষিদ্ধও করেছেন।

ফানুস ওড়ানোর ব্যাপারে বৌদ্ধ ধর্মের একটি শাখার বিশ্বাস হলো, ‘স্বর্গের দেবতারা দেবরাজ ইন্দ্র কর্তৃক স্থাপিত চুলামনি জাদিকে এখনো পূজা করেন বিধায় আমরাও প্রবারণা পূর্ণিমার দিন ফানুস ওড়িয়ে পূজা করি। ফানুস ওড়ানোর অর্থ ঐ চুলামনি জাদির পূজা করা। প্রদীপ পূজা করা। আমরা বৌদ্ধকে প্রদীপ পূজা করতে পারি খুব সহজেই কিন্তু স্বর্গের চুলামনি জাদির উদ্দেশে ফানুস ওড়িয়ে আকাশে তুলে পূজা করতে হয়।’ (নির্ভানা পিস)

এই বিশ্বাসটিও ইসলামী ধর্মবিশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এছাড়াও অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি থাকায় ফানুস ওড়ানো নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। কেউ এ নির্দেশনা অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথাও বলা হয়েছে।

উৎসব আয়োজনের ক্ষেত্রে ইসলামের বক্তব্য হলো, তা যদি ইসলামী সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হয় এবং তাতে নৈতিক ও সামাজিক স্খলনের কোনো সম্ভাবনা না থাকে তাতে অংশগ্রহণের সুযোগ রয়েছে। সেটা যে ধর্মের ও সমাজের প্রবর্তিত হোক না কেন। আর যদি কোনো উৎসবের সঙ্গে অন্য ধর্মের বিশেষ বিশ্বাস ও চেতনা জড়িত থাকে, তবে তাতে মুসলমানের অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। কেননা রাসুল সা. মবলেছেন, ‘যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের অনুসরণ-অনুকরন করবে, সে তাদের দলভুক্ত হবে।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪০৩১)

লেখক : সহ-সম্পাদক, দৈনিক কালের কণ্ঠ

আরএম/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ