শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


সাধারণ শিক্ষাঙ্গণে ধর্ম শিক্ষক পদে কওমি আলেম কেন জরুরি?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

কওমি মাদরাসা থেকে ফারেগ আলেমকে সরকারি ও বেসরকারি স্কুল-কলেজের ধর্ম শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হোক-এমন একটি দাবি দিনদিন বেশ জোরালো হচ্ছে। এর আগে জাতীয় সংসদের এক অধিবেশনেও এমন একটি দাবি জানান ময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল) আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদিন খান তুহিন। সাধারণ মানুষ ও আলেম-ওলামাদের এ দাবিকে ওলামায়ে কেরাম কীভাবে দেখছেন? সরকারি সার্টিফিকেট, যথাযথ মূল্যায়ন ও পর্যাপ্ত যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কওমি মাদরাসার আলেমদের এ ধরণের সুযোগ কেন দেওয়া হচ্ছে না? এসব নিয়ে কথা হয় চিন্তক তিন আলেমের সঙ্গে। তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন আওয়ার ইসলামের বার্তা সম্পাদক রকিব মুহাম্মদ


সরকারি স্কুল-কলেজগুলোতে ধর্ম শিক্ষার গুরুত্ব ও মর্যাদা খুবই অবহেলিত অবস্থায় রয়েছে বলে মনে করছেন দেশের প্রখ্যাত ওয়ায়েজ, আলেম শিক্ষাবিদ জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়ার শাইখুল হাদীস ও এশিয়ান ইউনিভার্সিটির খণ্ডকালীন শিক্ষক মাওলানা মামুনুল হক

তিনি বলেন, এ পরিস্থিতিতে কওমি মাদরাসার আলেমরা শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেলেও খুব বড় ধরণের ভূমিকা তারা রাখতে পারবেন বলে আমার মনে হয় না। ধর্ম শিক্ষাকে জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামে আরও বেশি গুরুত্বের জায়গায় রেখে এ বিষয়ে ভাবা উচিৎ। এর জন্য নম্বরের ব্যবস্থা অর্থাৎ ইসলাম শিক্ষার বিষয়গুলোকে পূর্ণমান একশ’ করা উচিৎ।

তবে এই পরিস্থিতিতেও কওমি মাদরাসার আলেমরা যদি স্কুল-কলেজগুলোতে নিয়োগ পায় তবে শিশু-কিশোরদের জন্য স্কুল-কলেগুলোতে ধর্মীয় শিক্ষার পরিবেশ ধীরেধীরে উন্নতির দিকে যাবে বলেও আশা ব্যক্ত করেন মাওলানা মামুনুল হক।

তিনি বলেন, সাধারণ শিক্ষাঙ্গণগুলোতে ধর্ম শিক্ষা নিয়ে একটা যাচ্ছেতাই অবস্থার চলমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরোণ পেতে কওমি আলেমদের এ সেক্টরে সম্পৃক্ত হওয়া খুবই জরুরি বলে মনে করছি। তারা এই সেক্টরে সংযুক্ত হলে জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থার এই লেজেগোবরে অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে। ওলামায়ে কেরাম শিক্ষার্থীদেরকে ধর্ম বিষয়ক উন্নত ও উপযুক্ত শিক্ষাটা দিতে পারবে।

‘শুধু ওলামায়ে কেরামের কর্মসংস্থানের জন্যই নয়, শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নেও আলেমদের এ পদে নিয়োগ দেওয়ার দাবিটি পূরণে সরকারের কার্যকর ভূমিকা থাকা উচিৎ।‘ যোগ করেন মাওলানা মামুনুল হক।

ধর্ম শিক্ষক হিসেবে কওমি আলেমদের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব এবং তুলে ধরলেন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের কলামিস্ট, জনপ্রিয় ওয়ায়েজ ও খতিব মাওলানা যুবায়ের আহমদ

তার মতে, আলেমদের সরকারি স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের দাবিটি কেবল আলেম-উলামাদের নয়, বরং এদেশের কোটি জনতার।

তিনি বলেন, ইসলাম শিক্ষা বই তো সিলেবাসে পাঠ্য আছে। কোনো না কোনো শিক্ষককে তা পড়াতে হয়। ধর্মীয় বিষয়ে দক্ষতাসম্পন্ন শিক্ষক না থাকায় সিলেবাসে 'ইসলাম শিক্ষা' বই থাকলেও তা ভালো করে পড়ানো হচ্ছে না। এমনকি বিষয়টিতে এমনই সংকট দেখা দিয়েছে যে, দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু শিক্ষকরা 'ইসলাম শিক্ষা' পড়াচ্ছেন। গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে, রাজবাড়ীর একটি স্কুলে ১২ বছর ধরে 'ইসলাম শিক্ষা' পড়াচ্ছেন হিন্দু শিক্ষক, শ্রীমঙ্গলের ১৯টি স্কুলে 'ইসলাম শিক্ষা' পড়াচ্ছেন হিন্দু শিক্ষক।

সরকারি স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে আলেম ধর্মীয় শিক্ষক কেন প্রয়োজন সেই যৌক্তিকতা তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলা, ইংরেজি, গণিত শেখা যেমন একটি শিশুর অধিকার, তেমনি শুদ্ধ কুরআন তিলাওয়াত শেখা, তাওহিদ, রেসালাত, আখিরাত, নামাজ, জানাজা, গুরুজনকে সম্মান করার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো জানাও শিশুর অধিকার। এ অধিকার আদায়ে প্রতিটি শিশুকে প্রাথমিকের মধ্যেই ধর্মীয় বিষয়ে প্রাথমিক জ্ঞানার্জনের সুযোগ করে দিতে প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া সময়ের দাবি। দেশের ৯৯ ভাগ মানুষ এ দাবির সঙ্গে একমত বলে আমি মনে করি।

’কওমি আলেমরাই এ পদের জন্য বেশি যোগ্য। এখানে প্রয়োজন এমন শিক্ষক, যারা শিক্ষার্থীদের শুদ্ধ কুরআন তিলাওয়াত শিখাবেন। আর শুদ্ধ তিলাওয়াতের ক্ষেত্রে অন্যান্য ধারার চেয়ে কওমি মাদরাসা থেকে পাস করা আলেমরাই এগিয়ে।’ যোগ করেন মাওলানা যুবায়ের।

আলেমরা এ ধরণের পদে আসলে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষার্থীরা কী ধরণের ফায়দা অর্জন করতে পারবে- এমন প্রশ্নের জবাবে এ আলেম বলেন, আসলে এখানে ফায়দাটা শুধু স্কুল কর্তৃপক্ষ বা শিক্ষার্থীদের নয়, বরং পুরো রাষ্ট্রের। এতে দেশই উপকৃত হবে। শিশুদের মাঝে ধর্মীয় মূল্যবোধ তৈরি করে দিতে পারলে তারা মাদকমুক্ত থাকবে। আর সমাজ মাদকমুক্ত হলে অন্যসব অপরাধও কমে আসবে। শিশুরা মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ হলে এরা বড় হয়ে দুর্নীতি করবে না। হত্যা, ধর্ষণ, ছিনতাইসহ সব অপরাধ কমে যাবে বলে আশা করি। এতে রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকা বাঁচবে।

এতে কি সরকারের অতিরিক্ত কোনো টাকা খরচ হবে?- এ প্রশ্নের জবাবে মাওলানা যুবায়ের বলেন, না। এতে রাষ্ট্রের অতিরিক্ত কোনো টাকা খরচ হবে না। কারণ, এখনও তো 'ইসলাম শিক্ষা' কোনো না কোনো শিক্ষক পড়াচ্ছেন। একটি স্কুলে ৫ জন শিক্ষক থাকলে তাদেরই একজন পড়াচ্ছেন। এ ৫ জনের একজনকে আলেম নিয়োগ দিলেই তো হয়। এখন ৫ জনই সাধারণ শিক্ষক। তখন ৪ জন হবেন সাধারণ (বাংলা, ইংরেজি ও গণিতের) শিক্ষক আর একজন হবেন ধর্মীয় শিক্ষক।

স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি কওমি মাদরাসা থেকে স্নাতকদের চাকরির সুযোগ করে দেওয়া হয় তবে এ দেশের সাধারণ মানুষ, দেশ, জাতি ও কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে বলে মনে করেন মানিকগঞ্জ পুলিশ লাইন মসজিদের ইমাম- খতিব ও মাদরাসা শিক্ষক মাওলানা জুবায়ের হুসাইন ফয়জী।

তিনি বলেন, মাদরাসার অনেক শিক্ষার্থী রয়েছে তাদের মাধ্যমে ধর্ম শিক্ষা দেয়া হলে স্কুলের কোমলমতি শিশুদের সামাজিক ও নৈতিক উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। যেহেতু কওমি শিক্ষার্থীরা আমল আখলাকে মজবুত। তাই তাদের মাধ্যমে পাঠদান করালে আগামী প্রজন্ম সুস্থ ও আদর্শ জাতি হিসেবে গড়ে উঠবে এবং তাদের মধ্যে সামাজিক মূল্যবোধ নৈতিকতা বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়।

তার মতে, কওমি মাদরাসার শিক্ষর্থীরা ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার প্রতি কল্যাণের মানসিকতা রাখে। তারা ইসলাম পড়াবে ঠিক কিন্তু অন্য ধর্মকে আঘাত করবে না। ইসলাম সর্বোচ্চ আদর্শ এটা শিশু মনে তুলে ধরবে।

‘ধর্মীয় শিক্ষা এটা আদর্শিক শিক্ষা, গুরুমুখি শিক্ষা। যারা ধর্ম পালন করেন না তাদের দ্বারা হয় না। এর জন্য আইকন লাগে। আমরা এমনও দেখেছি শিক্ষক না থাকার কারণে অমুসলিমরা ধর্ম শিক্ষা দিচ্ছে। এটা বাংলা, অংক না, যে কেউ এটা পড়াতে পারবে। যেটা ওজু করে পড়তে হয় সেটা অন্য ধর্মের লোক কিভাবে পড়ায়! যদি কওমি মাদরাসার ছাত্ররা শিশুদের ইসলাম সম্পর্কে শিক্ষা দেয়, তাহলে তারা অন্যভাবে ইসলাম শিখে ইসলামের নামে নৈরাজ্য করতে পারবে না।’ যোগ করেন মাওলানা জুবায়ের হুসাইন।

আরএম/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ