বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫


ধুয়ে মুছে পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে আমাদের আশাবাদের জায়গা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাসউদুল কাদির ।।

আক্ষেপ থেকেই যেতে পারে আজীবন। আরও কটা রাকাত সালাত আদায় যদি সম্ভব হতো তার তেলাওয়াতে কারিমা শোনে শোনে- তাহলে কতই না ভালো লাগতো। খুব কমই সুযোগ হয়েছে।

২০০৬ সালে জামিআ ইসলামিয়া পটিয়ায় এক মিটিংয়ে যোগদানের জন্য মাওলানা আহ্ আযহার আলী আনোয়ার শাহ রহ. ছুটে গিয়েছিলেন। সারা পটিয়ায় ঠাওর হয়েছিল পরের দিন ফজরে তিনি নামাজ পড়াবেন। বিষয়টা আমাকেও ছুঁয়ে গিয়েছিল।

কারণ, আমি আদতে হবিগঞ্জের মানুষ হলেও ঢাকায় বড় হয়েছি। কিশোরগঞ্জ কিন্তু এখনো ঢাকার অধীনে। হজরত আতহার আলী রহ.-এর সব মামলা মোকাদ্দমা নিষ্পত্তির জন্য আজীবন ময়মনসিংহে যাতায়াত চালিয়ে যেতে হলেও, ময়মনসিংহ বিভাগ হলেও সে যোগাযোগ আর নেই।

কিশোরগঞ্জ এখন ঢাকার অধীনে। মাওলানা আযহার আলী আনোয়ার শাহ রহ. এক রাজসিক অভ্যর্থনায় ভূষিত হয়েছিলেন শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে। আমি দেখলাম, ফজরের নামাজে তুলনামূলক মুসল্লি সংখ্যাও একটু বেশি।

তিনি নামাজ পড়ালেন, কুরআনের তেলাওয়াতে যেনো ভিন্ন মধুরতা ছিল তার। যে রসের স্বাদ নিতে মক্কায় কাফেররাও, মুশরিকরাও গোপনে ভিড় করতো নবীজীর ঘরের পাশে। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দ্বীন প্রচার সহ্য করতে না পারলেও কোরআনের এই মোহনীয় তেলাওয়াতের ভক্ত ছিলো সবাই।

হযরত ওমর রা. তো এই কোরআন তিলাওয়াতের জাদুতে আবিষ্ট হয়ে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আ্শ্রয় গ্রহণ করেন। তায়েফে নবীজীর ওপর নির্মম নির্যাতন হলেও তায়েফের বাজারে ওয়াসসমা ওয়াততারিক মানুষ ভিড় করে শুনছিল নবীজীর মুখে।

এ এক অদ্ভূত রকমের গল্প। চতুর্দিকে পাষণ্ড মানুষেরা রীতিমতো নবীজীর পথরোধ করে দিয়েছিল। কোনোভাবেই সহযোগিতা করেনি। নির্মমভাবে নির্যাতনও করেছে। অথচ কোরআন শুনতে ভিড় করেছে। তায়েফের খালিদ নামের একজন ভদ্রলোক নবীজীর কাছ থেকে বার বার শোনে সেই সূরা মুখস্থ করে নেন।

কেরআনের এই মোজেযার ইলম বিতরণে আজীবন লড়ে গেছেন মাওলানা আযহার আলী আনোয়ার শাহ রহ.। জীবনের শেষ সময়েও ইলম বিতরণে ছিলেন তৎপর। কওমী মাদরাসার সরকারি স্বীকৃতি, সিলেবাস তৈরী, বিভেদ নিরসনসহ নানাকর্মে তিনি ছিলেন বুদ্ধিজীবী আলেমদের মধ্যে অন্যতম। প্রতিটি ক্ষেত্রেই তার অবদান অস্বীকারের সুযোগ নেই। বিশেষত কিশোরগঞ্জের মাদরাসাগুলোকে তিনি একমঞ্চে রাখতেও সক্ষম হয়েছিলেন।

কিশোরগঞ্জের শহীদী মসজিদ সুবিখ্যাত। মাওলানা আযহার আলী আনোয়ার শাহ রহ. সেখানে জুমা পড়াতেন। আমার সুযোগ হয়েছে সেখানে জুমা পড়ার। অসাধারণ আরবি বাচনভঙ্গি তার। হয়তো প্রথমবার জুমা পড়েছি দুই যুগ আগে প্রায়। আমি অভিভূত হয়েছিলাম। আমাদের আকাবিরদের মধ্যে যোগ্যতার এই পরাকাষ্টা ছিল দেশ, সমাজ ও বিশেষত কওমি অঙ্গনের জন্য বড় রহমত।

একে একে সবই চলে যাচ্ছে। ধুয়ে মুছে পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে আমাদের আশাবাদের জায়গা। দাওয়াত, তালিম, তাজকিয়া ও জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর সব আমলে পরিপূর্ণ আলেম আজ শূন্য হয়ে যাচ্ছে। মাওলানা আযহার আলী আনোয়ার শাহ রহ.-এর ইন্তেকালে বাংলাদেশ কী হারিয়েছে তা এখনই বলা যাবে না। প্রতিটি সময়ে সময়ে, প্রতিটি ক্ষণে ক্ষণে তা টের পাওয়া যাবে।

বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ আহূত কিশোরগঞ্জের বেলঙ্কায় ইসলাহী ইজতেমায় একবার তিনি গিয়েছিলেন। তখনো দারুণ আলোচনা পেশ করেছিলেন তিনি।

একবার ঘটনাক্রমে আমাদের গ্রামে গেলেন মাওলানা আযহার আলী আনোয়ার শাহ রহ.। বয়ান শোনে আমি থ বনে গেলাম। ইসলাম, কেুরআন ও বিজ্ঞান বিষয়ে তিনি যে আলোচনা করেছিলেন তা আমি আর কখনো শুনিনি। আমার তখন মনে হয়েছিলো এই আলেমকে বেশি বেশি রাজধানীতে, দেশের শহরগুলোতে প্রোগ্রাম করানো দরকার।

আমাদের অসারতার জায়গাটা হলো, এমন কোনো পরিকল্পনা কওমি অঙ্গনের কারও নেই। কোনো একটা কিছুর যাত্রা শুরু হলে তা-ও জনবিমুখ কাজে ব্যবহৃত হতে শুরু করে। নিজেরা জানেই না, দাওয়াতের পদ্ধতি অন্তরায় অন্যের কুৎসা রটানো।

শেষবার আম্বরশাহ জামে মসজিদে দেশের শীর্ষ আলেমদের বৈঠকে বেফাকের প্রতিনিধি হয়ে তিনি এসেছিলেন। কাছে থেকে দেখলাম, কথা হলো। সেদিন তিনি যদি না আসতেন হয়তো কওমি সরকারি স্বীকৃতিটাই আরও একধাপ পিছিয়ে যেতো।

সাহসী ও নিরন্তর উদ্যমি একজন স্বপ্রাণ হারালো দেশ। মাওলানা আযহার আলী আনোয়ার শাহ রহ.-এর ইন্তেকালে অপূরণীয় যে ক্ষতি হয়ে গেল তা সহজে পূ্রণ হওয়া সম্ভব নয়। তবে কওমি তরুণদের তাদের জীবনকে সামনে রেখে চলা উচিত।

লেখক : প্রেসিডেন্ট, শীলন বাংলাদেশ ও সহকরী সম্পাদক, দৈনিক আমার বার্তা

আরএম/

 


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ