বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১১ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

শিরোনাম :
‘মানতিক; যুগের চাহিদার সাথে মিলে না’ এ ধরেণের কথা অযৌক্তিক: মুফতি হিফজুর রহমান দাওরায়ে হাদিসের ফলাফল নজরে সানীর আবেদনের সময় বাকি ৩ দিন  বৃষ্টি প্রার্থনায় জামিয়াতুল আবরার রাহমানিয়ায় ‘সালাতুল ইস্তিসকা’  আদায় হাসপাতালে সৌদি বাদশাহ সালমান সোস্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত পাঠ্য তালিকার সাথে বেফাকের পাঠ্য তালিকার সম্পর্ক নেই: বেফাক সৈয়দপুরে তাপদাহে অতিষ্ঠ মানুষ, ‘হিটস্ট্রোকে’ ১ জনের মৃত্যু স্বর্ণের দাম আরও কমলো, ভরি ১ লাখ ১৪ হাজার ১৫১ টাকা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান ইরান-পাকিস্তানের ঢাবিতে বৃষ্টির জন্য ‘সালাতুল ইসতিস্কা’র অনুমতি দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ‘বৃষ্টির জন্যে সালাত আদায় করলেই অবশ্যম্ভাবী বৃষ্টি চলে আসবে—বিষয়টা তা নয়’

কুরআনের ভেতরে চুল; গুজব প্রতিরোধের পরামর্শ আলেমদের

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

রকিব মুহাম্মদ ।।

সম্প্রতি পবিত্র কুরআন শরিফে নবীজির চুল-দাড়ি পাওয়া নিয়ে দেশব্যাপী গুজব ছড়িয়েছে। করোনা ভাইরাসসহ বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পেতে সেই চুল-দাড়ি ধুয়ে পানি পান করতে হবে বলে একটি ধারণা প্রচার হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে নানা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

গুজব প্রচারের কারণ হিসেবে জানা যায়, কাবা শরিফের কোন এক ইমামকে নাকি স্বপ্নে দেখানো হয়েছে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বলেছেন, ‘পৃথিবীর সমস্ত কুরআনে নাকি তার চুল-দাড়ি পাওয়া যাবে এবং সেই চুল-দাড়ি চুবিয়ে পানি পান করলে করোনা ভাইরাসসহ বিভিন্ন দূরারোগ্য ব্যধি থেকে মুক্তি লাভ করা যাবে।’

অনেকেই কাবার ইমামের সেই স্বপ্নের কথা জানতে পবিত্র কুরআন শরিফের পাতায় নবীজির চুল দাড়ি খুঁজতে থাকেন। এমনকি একাধিক লোক কুরআনে চুল দাড়ি পেয়েছেন বলেও খবর পাওয়া গেছে। এ প্রতিবেদকেও কুরআনে পাওয়া চুল দাড়ি দেখানোর চেষ্টা করেছেন কয়েকজন।

এ বিষয়ে ইসলামি গবেষকরা বলছেন, পবিত্র কুরআন শরিফে নবীজির চুল দাড়ি পাওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ গুজব। অনেকে কুরআন শরীফ পড়ার সময়ও মাথার চুল-দাড়ি পড়ে থাকে, সেটাই তারা খুঁজে পাচ্ছেন। এটি এক শ্রেণির লোক মানুষের ঈমান আমল ধংস করার পাঁয়তারা করছে।

[caption id="attachment_186031" align="aligncenter" width="418"] কারাবন্দী মুসলিম সিরিজ[/caption]

এ বিষয়ে ইসলামি গবেষক ও নন্দিত আলোচক শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, কাবা শরিফের ইমামদের ব্যক্তিগত আপডেট বা মুসলিম মিল্লাতকে উদ্দেশ্য করে যদি তাদের কিছু বলার থাকে, সেগুলো সবার আগে হারামাইনের ওয়েবসাইট, সোশ্যাল একাউন্ট, ইমামদের ব্যক্তিগত একাউন্টে প্রকাশ করা হয়। আমি এ সমস্ত একাউন্ট নিয়মিত ফলো করে থাকি, চুল-দাড়ি ধুয়ে পানি পানের সংবাদ বা এ ধরণের কোনও তথ্য আমার চোখে পড়েনি।

এ সংবাদ নিছক গুজব দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আমি নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি, কাবার কোনো ইমামকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর ’চুল-দাড়ি ধোয়া পানি পান করতে বলেছেন’ এই দাবি নিছক গুজব। এটা মিথ্যা প্রোপাগান্ডা, এর কোন সত্যতা প্রমাণিত হয় না। এ সমস্ত সংবাদে আমরা কান দেব না, এটা আমাদের আমল ও ঈমান বিধ্বংসী একটি বিশ্বাস।

স্বপ্নের ওপর ভিত্তি করে ইসলামি শরিয়তে কোন ধরণের করণীয় নির্ধারণ জায়েজ নেই উল্লেখ করে ‍তিনি বলেন, ‘বুখারি শরিফে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, শরিয়তের সমস্তকিছু বন্ধ হয়ে গেছে, একটি বিষয় বাকি আছে তা হলো সুসংবাদবাহী স্বপ্ন।

অর্থাৎ, নবীরা যেমন সুসংবাদবাহী স্বপ্ন দেখতেন, মুমিনগণও কেউ কেউ এ ধরণের স্বপ্ন দেখতে পারেন। মুমিন স্বপ্নের মাধ্যমে ভালো কিছুর সুসংবাদ পেতে পারেন, এটা গ্রহণীয়। তবে স্বপ্নের মাধ্যমে কোন করণীয় বা বর্জণীয় নির্ধারণ করা ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে অনুমোদিত নয়। এ বিষয়ে সারা পৃথিবীর সমস্ত ওলামায়ে কেরাম একমত পোষণ করেন।

অতএব, কেউ যদি বলেন যে আমি স্বপ্নে দেখেছি অমুক  বিষয়টাকে ওষুধ হিসেবে গ্রহণ করার জন্য, অমুক আমল করার জন্য, অমুক বার্তাটি এতজন মানুষের কাছে পৌঁছে দিলে এই সুসংবাদ আসবে-এইসব বিশ্বাস সম্পূর্ণ ভ্রান্ত।

এ ধরণের গুজব প্রতিরোধে মসজিদে মসজিদে ইমাম-খতিবদের আলোচনা করার পরামর্শ দিলেন ধানমন্ডির মসজিদে আত-তাকওয়ার খতিব ও নন্দিত আলোচক হাফেজ মুফতি সাইফুল ইসলাম।

তিনি বলেন, আমাদের মসজিদগুলোতে স্পষ্টভাবে বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে এ ধরণের গুজব প্রতিরোধ করা সম্ভব। গুজব প্রতিরোধে আমাদের বিশাল একটা ভূমিকা রয়েছে, আমরা সেগুলো পালন করতে পারি এবং সমাজের মানুষকে সচেতন করতে পারি। মসজিদ-মাদরাসা থেকে ওলামায়ে কেরাম এ ধরণের সচেতনতামূল পদক্ষেপ গ্রহণ করলে সাধারণ মানুষ খুব ভালোভাবে সেটা গ্রহণ করবেন।

প্রত্যেককে পবিত্র কুরআন ভালোভাবে পড়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, যারা আমরা মুসলিম আছি, তারা যেন কুরআনটা ভালোভাবে পড়ি। সুরাতুল হুজরাতে সুষ্পষ্টভাবে আল্লাহ তায়ালা বলে দিয়েছেন,

‘হে ঈমানদারগণ, যদি কোনো ফাসিক তোমাদের কাছে কোনো খবর নিয়ে আসে, তা হলে তোমরা যাচাই করে নাও। এ আশঙ্কায় যে তোমরা অজ্ঞতাবশত কোনো কওমকে আক্রমণ করে বসবে, ফলে তোমরা তোমাদের কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হবে’ (সূরা হুজরাত-৬)।

অর্থাৎ মুমিন ব্যক্তির কাছে যখন কোনো খবর বা তথ্য আসবে, সে তা পরিবেশন করার আগে তথ্যের সত্যতা যাচাই-বাছাই করে নেবে।  এই আয়াত থেকে মুমিনের শিক্ষা নিতে হবে। কোন কিছু শেয়ার করার আগে অবশ্যই সেটা যাচাই-বাছাই করে নিতে হবে।

আরএম/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ