শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫


করোনা: দেশবাসীর প্রতি আলেমদের ৮ জরুরি পরামর্শ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আগারগাঁওস্থ প্রধান কার্যালয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে গতকাল রোববার সকালে দেশের শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে কেরাম করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে বিরাজমান পরিস্থিতিতে জনগণের সুরক্ষা বিষয়ে পরামর্শ প্রদানের লক্ষ্যে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) আনিস মাহমুদ। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ নূরুল ইসলাম।

সভায় করোনা ভাইরাস সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা বিষয়ে উপস্থিত বিশিষ্ট আলেমগণ স্ব স্ব মতামত উপস্থাপন করেন। এছাড়া আল্লামা আহমদ শফি, চেয়ারম্যান, হাইয়াতুল উলয়া বাংলাদেশ ও মহাপরিচালক, আল জামিয়াতুল দারুল উলূম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী, চট্টগ্রাম; আল্লামা মুফতি আব্দুল হালীম বোখারী, মহাপরিচালক, আল জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম; মুফতি নুরুল ইসলাম, নাযেমে তা‘লীমাত, গওহরডাঙ্গা মাদরাসা, গোপালগঞ্জ; মুফতি মুহাম্মদ ছালাহ উদ্দীন, মুহতামিম, জামিয়া ইসলামিয়া ওবাইদিয়া, নানুপুর, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম; মাওলানা মুহিব্বুল হক, মুহতামিম, জামেয়া কাসিমুল উলূম দরগাহে শাহজালাল (রাহ), সিলেট; মাওলানা সৈয়দ আবু তালেব মোহাম্মদ আলা উদ্দিন, খতীব, জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ, চট্টগ্রাম; আল্লামা সৈয়দ অছিউর রহমান, প্রিন্সিপাল, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া, চট্টগ্রাম ও আল্লামা মুফতি মোবারকুল্লাহ, মুহাতামিম, জামিয়া ইউনুছিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রমুখের নিকট থেকে ই-মেইলের মাধ্যমে গৃহীত মতামত বিবেচনা করা হয়। সভায় উপস্থিত ওলামায়ে কেরামের বক্তব্য এবং ই-মেইলের মাধ্যমে প্রাপ্ত মতামত পর্যালোচনা করে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে সুরক্ষার জন্য ওলামায়ে কেরাম তাদের মতো করে নিম্নরূপ আহ্বান জানিয়েছেন,

বিশ্ব আজ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। আমাদের দেশও বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। সরকার ও জনগণ চরম উদ্বিগ্ন। এ ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য সচেতনতা তৈরি এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনাসমূহ মেনে চলা আবশ্যক।

ওলামায়ে কেরামের পক্ষ থেকে প্রণীত নির্দেশনাসমূহ

(১) তওবা, ইস্তেগফার ও দুআ : পৃথিবীতে যা কিছু হয় আল্লাহ তাআলার হুকুমেই হয়। রোগবালাই, মহামারি সবই আল্লাহর হুকুমে আসে। আবার তাঁর হুকুমেই নিরাময় হয়। এ বিশ্বাস সকল মুমিনেরই থাকতে হবে। এ মহামারি থেকে বাঁচার জন্য মহান আল্লাহর সাহায্য চাইতে হবে। আমাদের অপরিহার্য কর্তব্য হলো সকল গুনাহ ও অপরাধ হতে বিরত থেকে বেশি বেশি তওবা ও ইস্তিগফার করা এবং নিম্নের দুআগুলো সর্বদা পড়তে থাকা।

بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ

বাংলা উচ্চারণ: ‘বিছমিল্লা হিল্লাযি লা ইয়াদুররু মা‘আছমিহি শাইউন ফিল আরদি ওয়ালা ফিছছামায়ি ওয়া হুয়াছ্ ছামিয়ুল আলিম।’

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ، وَالْجُنُونِ، وَالْجُذَامِ، وَمِنْ سَيِّئِ الأَسْقَامِ

বাংলা উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আ‘উজুবিকা মিনাল বারাছি ওয়াল জুনুনি ওয়াল জুযামি ওয়ামিন সায়্যিইল আসকাম।’

لَّاۤ إِلَـٰهَ إِلَّاۤ أَنتَ سُبۡحَـٰنَكَ إِنِّی كُنتُ مِنَ ٱلظَّـٰلِمِینَ

বাংলা উচ্চারণ: ‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নী কুন্তু মিনাজ্ জলিমীন।’

(২) সতর্কতা অবলম্বন : রোগ ও ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য সতর্কতা অবলম্বন ইসলামের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সতর্কতা অবলম্বন তাওয়াক্কুল পরিপন্থী নয়। বরং নবীজী (সা) এর সুন্নত।

(৩) মসজিদ সংক্রান্ত : মসজিদে নিয়মিত আযান, ইকামত, জামাত ও জুমার নামাজ অব্যাহত থাকবে। তবে জুমআ ও জামাতে মুসল্লিগণের অংশগ্রহণ সীমিত থাকবে অর্থাৎ নিম্নলিখিত ব্যক্তিবর্গ জুমআ ও জামাতে অংশগ্রহণ করবেন না:

(১) যারা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত, (২) যাদের সর্দি, জ্বর, কাশি, গলা ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট আছে, (৩) যারা আক্রান্ত দেশ ও অঞ্চল থেকে এসেছেন, (৪) যারা উক্তরূপ মানুষের সংস্পর্শে গিয়েছেন, (৫) যারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত, (৬) বয়োঃবৃদ্ধ, দুর্বল, মহিলা ও শিশু, (৭) যারা অসুস্থদের সেবায় নিয়োজিত ও (৮) যারা মসজিদে গিয়ে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করেন তাদেরও মসজিদে না আসার অবকাশ আছে।

যারা জুমআ ও জামাতে যাবেন তারা সকলেই যাবতীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা অবলম্বন করবেন। ওযু করে নিজ নিজ ঘরে সুন্নাত ও নফল আদায় করবেন। শুধু জামাতের সময় মসজিদে যাবেন এবং ফরজ নামাজ শেষে দ্রুত ঘরে চলে আসবেন। সাবান দিয়ে বারবার হাত ধোয়া, মাস্ক পড়া, জীবাণুনাশক দ্বারা মসজিদ ও ঘরের মেঝে পরিস্কার রাখাসহ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সকল নির্দেশনা মেনে চলবেন। হঠাৎ হাঁচি-কাশি এসে গেলে টিস্যু বা বাহু দিয়ে মুখ ঢেকে রাখবেন।

(৪) খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মসজিদ কমিটির করণীয় :

(১) পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পূর্বে সম্পূর্ণ মসজিদকে জীবাণুনাশক দিয়ে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করা এবং কার্পেট-কাপড় সরিয়ে ফেলা।

(২) জামাত সংক্ষিপ্ত করা। (৩) জুমার বয়ান, খুতবা ও দোয়া সংক্ষিপ্ত করা। (৪) বর্তমান সংকটকালে দরসে হাদীস, তাফসির ও তা’লীম স্থগিত রাখা। (৫) ওযুখানায় অবশ্যই সাবান ও পর্যাপ্ত টিস্যু রাখা। (৬) বর্তমান পরিস্থিতিতে জামাতের কাতারে ফাঁক ফাঁক হয়ে দাঁড়ানো। (৭) ইশরাক, তিলাওয়াত, যিকির ও অন্যান্য আমল ঘরে করা। (৮) ঢাকাসহ দেশের কোন মসজিদে যদি কোন বিদেশী মেহমান অবস্থানরত থাকেন তাদের বিষয়ে বিস্তারিত বিশ্লেষণ করে সত্ত্বর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

(৫) করোনায় মৃত ব্যক্তির দাফন-কাফন ও জানাযা : হাদিসের বর্ণানুযায়ী মহামারিতে মৃত মুমিন ব্যক্তি শহীদের মর্যাদা লাভ করেন। করোনায় মৃত ব্যক্তির কাফন, জানাযা ও দাফন যথাযথ মর্যাদার সাথে করা জরুরি। করোনায় মৃত ব্যক্তির দাফনে সহযোগিতা করুন। তাদের প্রতি বিরূপ মনোভাব প্রকাশ বা কোনরূপ অসহযোগিতা করা শরীয়তবিরোধী ও অমানবিক।

(৬) দান-সাদকা : হাদিস শরীফে আছে দান-সাদকা দ্বারা বালা মছিবত দূর হয়। এই সংকটকালীন সময়ে আল্লাহর রহমত লাভের উদ্দেশ্যে দুস্থ ও অসহায়দের বেশি বেশি দান-সাদকা করুন। নিম্ন আয়ের মানুষের নিকট খাদ্যপণ্য পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করুন।

(৭) গুজব সৃষ্টি না করা : এ সমস্ত বিষয়ে গুজব মানুষের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই গুজব সৃষ্টি করা বা গুজবে বিশ্বাস করা সর্বোতোভাবে বর্জন নিশ্চিত করতে হবে।

(৮) প্রচার-প্রচারণা : ওলামায়ে কেরামের এ আহ্বান আন্তরিকতার সাথে ব্যাপক প্রচার ও বাস্তবায়নের জন্য দেশের সকল মসজিদের খতিব, ইমাম, মসজিদ কমিটি, গণমাধ্যম, জনপ্রতিনিধি, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা/কর্মচারী/শিক্ষকসহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষকে উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়।

করোনা ভাইরাসের এই সংকটকালে শরীয়তের দিক নির্দেশনা চেয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে কেরামের পরামর্শ গ্রহণ করায় ওলামায়ে কেরাম মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। একই সাথে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এ সময়োচিত উদ্যোগকে স্বাগত জানান।

সভায় দেশের শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে কেরামের মধ্যে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম আল্লামা ফরীদ উদ্দিন মাসউদ, জামেয়া ইসলামিয়া দারুল উলুমের মুহতামিম মুফতি দিলাওয়ার হোসাইন, শায়খ যাকারিয়া (র.) ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের মহাপরিচালক মুফতি মীযানুর রহমান সাঈদ, জাতীয় মুফতি বোর্ডের সদস্য সচিব মুফতি মোঃ নূরুল আমীন, ঢাকা নেছারিয়া কামিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ড. আল্লামা কাফীলুদ্দীন সরকার সালেহী, জামেয়া রহমানিয়ার মুহতামিম মাওলানা মাহফুজুল হক, চরমোনাই কামিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোঃ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী।

মদীনাতুল উলুম কামিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক আল আযহারী, ইদারাতুল উলূম আফতাবনগর মাদ্রাসার মুহতামিম মুফতি মোহাম্মদ আলী, দারুল উলূম রামপুরার মুহতামিম মুফতি ইয়াহ্ইয়া মাহমুদ, জামিয়াতুল ‍উলুমের মুহতামিম মুফতি মাহমুদুল হাসান, বায়তুল উলূম ঢালকানগর মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা জাফর আহমাদ, ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রশীদ, মহাখালী হোসাইনিয়া কামিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ড. মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম আল মারুফ, নারায়ণগঞ্জের ভূমিপল্লী আবাসন জামে মসজিদের খতিব শায়খ আহমাদুল্লাহ, তেজগাঁও জামেয়া ইসলামিয়ার শায়খুল হাদিস ড. মাওলানা মুশতাক আহমদ।

বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মাওলানা মিজানুর রহমান, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতি মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, মুহাদ্দিস মুফতি ওয়ালিয়ুর রহমান খান ও মুফাসসির ড. মাওলানা আবু ছালেহ পাটোয়ারী, বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি মুহিব্বুল্লাহিল বাকী নদভী, পেশ ইমাম মাওলানা মুহিউদ্দীন কাসেম, চকবাজার শাহী মসজিদের খতিব মাওলানা মুহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিন, বড় কাটরা মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মুফতি সাইফুল ইসলাম মাদানী, শামসুল উলূম মাদ্রাসার মুহতামিম মুফতি শারাফাত হোসাইন, মাদানীনগর মাদ্রাসার মুহতামিম মুফতি ফয়জুল্লাহ এবং উস্তাদ মুফতি মাহবুবুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।


সম্পর্কিত খবর