শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


মসজিদের জামাতে মুসল্লির উর্ধ্বগতি ও কিছু কথা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবু নাঈম ফয়জুল্লাহ।।

করোনা পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ সব ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করলেও তারা মসজিদে জমায়েত হওয়াকে তেমন কোনো সমস্যা মনে করছে না। যার কারণে দেখা যাচ্ছে, সামাজিক সব ধরণের জনসমাগম এড়িয়ে চললেও মানুষ নামাজের সময় ঠিকই দল বেঁধে মসজিদে চলে আসছে। বিশেষ করে মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলে এমনটা বেশি হচ্ছে। এর কারণ কী? মানুষ কি বুঝে না যে, এখন একাকী থাকাই নিরাপদ? যে কোনো ধরণের সমাগম থেকেই এ মহামারিতে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা আছে?

জানে, মানুষ এটা ভাল করেই জানে। কিন্তু তারা এটা জানার পরও মসজিদে যাচ্ছে। কারণ, এদেশের সাধারণ মানুষ যতটা মজবুতভাবে জানে যে, জনসমাগম ক্ষতিকর তার চেয়ে বেশি দৃঢ়তার সাথে বিশ্বাস করে, এই ভাইরাস থেকে বাঁচতে হলে আল্লাহমুখী হতে হবে। আল্লাহ ছাড়া এই মহামারি থেকে বাঁচানোর ক্ষমতা পৃথিবীর কোনো শক্তির নেই। আর মহামারি গাণিতিক হিসাব মেনে ছড়ায় না। যদি তাই হতো তাহলে তুলনামুলক জনসমাগম বেশি, এমন দেশগুলোই আগে বিপদে পড়তো। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, যেসব দেশের মানুষ একটু ইচ্ছা করলেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলতে পারে সেসব উন্নত দেশই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। কাজেই সাধারণ মানুষের সহজ সমিকরণ, বাঁচতে হলে রবের দিকে ফিরতে হবে।

দ্বিতীয় কথা হলো, সাধারণ মুসলমানদের বিশ্বাস, পাপ থেকে ফিরে আসতে হলে প্রথমেই মসজিদে যেতে হবে। মসজিদেই যদি যেতে না পারলাম তাহলে আল্লাহমুখী হওয়ার কী অর্থ থাকলো? আল্লাহর ঘরেই যেতে পারলাম না, তাহলে আল্লাহমুখী কিভাবে হবো? নিজের ঘরে বসেও যে আল্লাহর সাথে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলা যায় তা এদেশের মানুষ জানে না। তাই শুধু মসজিদ কেন্দ্রিক ইবাদতের সংস্কৃতি এদেশের গ্রামে গ্রামে প্রচলিত। জামাতের আগের সুন্নতগুলো ঘরে পড়া উত্তম হওয়া সত্ত্বেও, কাছে বাড়ি হলেও, সবাই মসজিদে এসেই সুন্নত পড়ে। নফল নামাজ পড়ার জন্যও সবাই মসজিদের দিকে দৌড়ায়। যার কারণে শবে মেরাজ, শবে বরাত ও শবে কদরে আমাদের মসজিদগুলো এমন সাজসজ্জায় ভরে উঠে। ঘরে ও বাড়িতে একনিষ্ঠ ইবাদতের পরিবেশ এদেশে নেই।

তাই যে সমাজের মানুষ মসজিদ কেন্দ্রীক সম্মিলিত ইবাদতে অভ্যস্ত এবং নফল ইবাদতেও যারা সম্মিলিত পদ্ধতিকেই একমাত্র পদ্ধতি হিসেবে বিশ্ববাস করে সেই সমাজে যখন ধর্মীয় জমায়েতকে সীমিত করার কথা উঠে তখন এটাই স্বাভাবিক যে, মানুষ এটাকে ধর্মের সাথে বিরোধিতা হিসেবেই দেখবে। এবং যারা এ ধরণের আদেশ জারি করবে তাদেরকে ইসলামের শত্রু মনে করবে এবং মনে করবে, সরকার কোনো না কোনোভাবে বিধর্মীদের ‘করোনা-মোকাবেলা পদ্ধতি’র দ্বারা প্রভাবিত হয়েই এসব আদেশ জারি করছে।

এসব সতর্কতা পদ্ধতি যে ইসলামেও বৈধ তা মানুষ বিশ্বাস করতে পারবে না। আর সরকারের সুরে সুর মিলানোর কারণে উলামায়ে কেরামের কথার উপরও তারা আস্থা রাখতে পারবে না। বরং মনে করবে, সরকার অন্য অনেক ইস্যুর মতই কৌশলে নিজের পক্ষে উলামায়ে কেরামের মত নিয়ে তা প্রচার করছে; যেহেতু যেকোনো ইস্যুতে সরকারের সিদ্ধান্তকে নেতিবাচকভাবে গ্রহণ করার একটা প্রবণতা সাধারণ মানুষের মধ্যে আছে।

তাই মানুষকে প্রকৃত পক্ষে সচেতন করতে হলে তাদের ব্যক্তিগত সমিকরণ নিয়ে কথা বলতে হবে। তাদেরকে বুঝাতে হবে, শুধু মাহফিল সমাবেশ আর সম্মিলিত ইবাদতই ইসলামের একমাত্র অবলম্বন নয়। বরং বিশেষ বিশেষ মুহূর্তে একাকী ইবাদতটাই বেশি মর্যাদা রাখে। শরিয়তে মানুষের সামষ্টিক সুবিধা-অসুবিধার বিবেচনায় ইবাদতের পদ্ধতিগত পরিবর্তনের সুযোগ আছে। এবং এ ব্যাপারে উলামায়ে কেরাম সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষমতা রাখেন।

-এএ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ