বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫


ঈদুল ফিতরের তাৎপর্য ও আমল

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফ্তি হেলাল উদ্দীন হাবিবী।।

ঈদ অর্থ: আনন্দ, উৎসব, পুনরাগমন, পুনরাবৃত্তি, বার বার ফিরে আসা ইত্যাদি। আর ফিতর অর্থ: ভঙ্গ করা, বিদীর্ণ করা ইত্যাদি। পবিত্র মাহে রমজানে সিয়াম সাধনার অভিসারে পূর্ণ এক মাস দিনের বেলায় পানাহার থেকে বিরত থাকার পর শাওয়াল মাসের প্রথম তারিখে রোজা ভঙ্গ করে আহার গ্রহণ করার আনন্দময় দিবসকে ‘ঈদুল ফিতর’ বলে।

প্রতিটি জাতিগোষ্ঠি ও সম্প্রদায়ের আনন্দ-উৎসব উদযাপনের নির্দিষ্ট দিবস রয়েছে; মহান আল্লাহ তা’আলা মুসলমানদের আনন্দ উদযাপনের জন্য দু’টি দিবস দান করেছেন। এ দিবসে বিশ্ব মুসলিম সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে শামিল হয় আনন্দের বিশেষ মোহনায়। ঈদের আগমনে আনন্দিত হয় না, এমন মুসলমান খুজে পাওয়া দুষ্কর। তাই এ কথা সর্বোজনবিধিত যে, ঈদ বিশ্ব মুসলমানের সার্বজনিন উৎসব।

হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মহানবী (সা.) প্রিয় মাতৃভুমি মক্কা মুর্কারামা হতে হিজরত করে মদীনা মুনাওয়ারায় এসে দেখলেন, মদীনাবাসীরা মিহিরজান ও নওরোজ নামে দুটি দিবসে ক্রিয়া ও উৎসব পালন করে। তবে এ উৎসবকে কেন্দ্র করে যে ধরনের ক্রিয়া ও অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হত তা মোটেই শরীয়তসম্মত ছিল না। রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, এ দিন তোমাদের আনন্দ উদযাপনের কারণ কী? তারা বললো, জাহেলী যুগ থেকেই আমরা প্রতিবছর দুটি দিবসে উৎসব পালন করে আসছি। অতঃপর প্রিয়নবী (সা.) ইরশাদ করেন, মহান আল্লাহ তা’আলা তোমাদের জন্য এর পরিবর্তে অন্য দুটি বিশেষ উৎসব নির্ধারণ করেছেন; একটি হল ঈদুল ফিতর, অন্যটি ঈদুল আযহা। (সুনানে আবু দাউদ)

প্রিয় পাঠক! পূর্ণ এক মাস সিয়াম সাধনার পর পবিত্র ঈদুল ফিতর মুসলিম উম্মাহর জন্য মহান রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে এক বিশেষ উপহার। যে সকল মুমিন বান্দা মহান ¯্রষ্টার সন্তুষ্টির নিমিত্তে মাহে রমজানের সিয়াম সাধনা শেষে পবিত্র ঈদুল ফিতরের জামাতে গিয়ে হাজির হয়, মহান আল্লাহ তা’আলা তাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন।

হযরত সা’আদ ইবনে আউস আনসারী (রা.) তার পিতা হতে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ঈদুল ফিতরের দিন ফেরেশ্তারা রাস্তার মোড়ে দাড়িয়ে ঘোষণা করতে থাকেন, হে মুসলমানগণ! এসো দয়াময় প্রভুর দরবারে; যিনি নিজ অনুগ্রহে বান্দাদেরকে নেক আমল করার সুযোগ দেন এবং এর বিনিময়ে উত্তম প্রতিদানও দিয়ে থাকেন। তোমাদেরকে রাতে ইবাদত করার হুকুম করা হয়েছিল, তোমরা তা পূরণ করেছ এবং দিনের বেলায় রোজার নির্দেশ করা হয়েছিল, তোমরা তাও পালন করেছ।

তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের পূর্ণ আনুগত্য প্রদর্শন করেছ। তাই এখন তোমরা পুরস্কার গ্রহণ কর। অতঃপর যখন তারা (মুসলমানগণ) ঈদের নামায শেষ করে বাড়ির দিকে রওয়ানা করে, তখন একদল ফেরেশ্তা ঘোষণা করতে থাকেন, নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। সুতরাং তোমরা পূণ্যময় দেহ ও মন নিয়ে আনন্দ চিত্তে ঘরে ফিরে যাও। এ দিনটির আরেকটি নাম হল ‘উপহার দিবস’। (আল মু’জামুল কাবীর)

পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিনে প্রিয়নবী (সা.) ও তার সান্নিধ্যপ্রাপ্ত সাহাবায়ে কেরাম বিশেষ কিছু আমল করতেন; যা মুসলিম উম্মাহর নিকট সুন্নাত হিসাবে পরিচিত। ঈদুল ফিতরে পালনীয় সেসব সুন্নত আমলসমূহ নি¤েœ প্রদত্ত হল- *প্রত্যুষে শয্যা ত্যাগ করা। *মিসওয়াক করা। *গোছল করা। *যথাসাধ্য উত্তম পোশাক পরিধান করা।

শরীয়ত সম্মতভাবে সাজ-সজ্জা করা। *সুগন্ধি ব্যবহার করা। *ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে খুরমা বা অন্য কোনো মিষ্টান্নদ্রব্য আহার করা। *সকাল সকাল ঈদগাহে যাওয়া। *ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে সাদ্কায়ে ফিতর আদায় করা। *যথাসম্ভব পদব্রজে ঈদগাহে যাওয়া। *সম্ভব হলে এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া এবং অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরে আসা। * ঈদগাহে যাওয়ার সময় নিচু স্বরে এই তাকবির বলা- আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ।

লেখক: মুফ্তি হেলাল উদ্দিন হাবিবী, মুফাস্সিরে কুরআন ও ইসলামী গবেষক, খতিব, মাসজিদুল কুরআন জামে মসজিদ। কাজলা (ভাঙ্গাপ্রেস), যাত্রাবাড়ী, ঢাকা। প্রিন্সিপাল, মারকাযুল ঊলূম আজিজিয়া মাদ্রাসা কাজলা (ভাঙ্গাপ্রেস), যাত্রাবাড়ী, ঢাকা।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ