শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


ঈদুল ফিতরের সৌহার্দ বজায় থাকুক সারাবছর

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

তারেক সাঈদ।।

ঈদ মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। হাদিসে এসেছে, রাসূল সাঃ যখন মদিনাতে আগমন করলেন, তখন মদিনায় দুটো দিবস ছিল, যে দিবসে তারা (মদিনার লোকজন) খেলাধুলা ও আনন্দ ফূর্তি করতো।

রাসুল সাঃ জিজ্ঞেস করলেন, এ দুই দিনের তাৎপর্য কী? মদিনাবাসীগণ বললেন, আমরা এ দুই দিনে (আনন্দ) খেলাধুলা করি। তখন রাসূল সাঃ বললেন, ‘আল্লাহ তায়ালা এ দুই দিনের পরিবর্তে তোমাদের এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ দুটো দিন দান করেছেন। তার একটি হলো, ঈদুল আজহা ও অপরটি ঈদুল
ফিতর।’ (আবু দাউদ)

"ঈদ" অর্থ আনন্দ, খুশি। এগুলো ঈদের ভাবার্থ। মূল শাব্দিক অর্থ হলো বারবার ফিরে আসা। ঈদ প্রতিবছর আমাদের কাছে বারবার ফিরে আসে বিধায় এ নামে নামকরণ করা হয়েছে।
"ফিতর" অর্থ হলো ভাঙা, খোলা। অর্থাৎ ঈদুল ফিতর হচ্ছে রোযা ভাঙার খুশি। আল্লাহ তায়ালা এদিনে তার বান্দাকে নিয়ামত, ইহসান ও অনুগ্রহ দ্বারা বারবার ধন্য করেন। এতে মানুষের প্রাণে আনন্দের সঞ্চার হয়। এদিন সকল মানুষের খুশির দিন। আল্লাহ প্রদত্ত খুশির দিন। রাসূল সাঃ বলেছেন যারা রমজান মাসের রোযা ফরজ হওয়া সত্যেও আদায় করনি তারা যেন ঈদগাহের কাছেও না আসে। তিরমিযি-

দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মুসলমানদের ধৈর্য-ত্যাগ ও নৈতিক-আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধিত হয়। এতে তাদের মনে এক স্বর্গীয় সুখ-আনন্দ বিরাজ করে। এ মহান সুখানুভূতি উৎসবে রূপ লাভ করে পবিত্র ঈদুল ফিতরে।
রাসূল সাঃ বলেন : রোযাদারের জন্য দুটি খুশি একটি হলো রমজান মাস রোযা রেখে ঈদের দিন রোযা ভাঙা। আরেকটি হলো আল্লাহ তায়ালার সাক্ষাত।

ঈদ বিশ্ব মুসলমানদের জন্য একটি বার্ষিক সম্মেলন। ঈদের দিনে নামাজ আদায়ের জন্যে মুসলমানগণ ঈদগাহে উপস্থিত হয়। সর্বপ্রকার ভেদাভেদ ও হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে এক সাথে ঈদের নামাজ আদায় করে। একে অন্যের সাথে সাক্ষাৎ ও কুশল বিনিময়ের একটি অপূর্ব মূহুর্তের সৃষ্টি হয়। এ দিনে ছোট-বড়, ধনী-গরীব, আমীর-ফকীর, শিক্ষিত-মূর্খ, সাদা-কালোর মাঝে কোন ভেদাভেদ থাকে না। পারস্পরিক শুভেচ্ছা বিনিময় ও সৌহার্দ প্রকাশিত হয়। এর ফলে তারা ভ্রাতৃত্ববন্ধন ও প্রেম-প্রীতির স্বর্গীয় বন্ধনে আবদ্ধ হয়। ঈদের দিন মুসলিম মিল্লাতের জন্য এক পরম আনন্দ ও উৎসবের দিন।

ঈদুল ফিতরের আবশ্যকীয়তা:
এদিন দু’টি কাজ করা ওয়াজিব। একটি ফিতরা আদায় করা। এইদিনে ধনীদের পক্ষ থেকে গরিব দুঃখীদের জন্য নির্ধারিত পরিমাণ দান করাকে আবশ্যক করা হয়েছে। একে সাদাকাতুল ফিতর বলা হয়। হাদীস শরীফে আছে, হযরত ইবনে উমর (রা.) বর্নিত ‘রাসুল (সা.) সদকাতুল ফিতর অপরিহার্য করেছেন। এর পরিমাণ হলো, এক সা জব বা এক সা খেজুর। ছোট-বড়, স্বাধীন-পরাধীন সবার ওপরই এটি ওয়াজিব। (বুখারী ১৫১২)
এক সা খেজুর বা জব= ৩ কেজি ১৮৩ গ্রাম বা এর সমমূল্য। আর অর্ধ সা গম = ১ কেজি ৫৯১.৫ গ্রাম বা এর সমমূল্য।

এদিন আরেকটি ওয়াজিব কাজ হলো ঈদের সালাত আদায় করা। ঈদের দিন ছয়টি অতিরিক্ত তাকবীর সহকারে দু’রাকাত সালাত আদায় করা ওয়াজিব। খোলা ময়দানে ঈদের নামাজ পড়া উত্তম। মসজিদেও এই নামাজ আদায় করা
যেতে পারে। রাসূল (সা.) একবার শুধুমাত্র বৃষ্টির কারণে মসজিদে সালাতুল ঈদ আদায় করেছেন।

পরিশেষে: ঈদের দিন মুসলমানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন। এ দিনটি আনন্দ ও খুশির দিন, এ খুশি কোন একক ব্যক্তির নয় বরং ছোট-বড়, নারী-পুরুষ, ধনী-গরীব সকলের এ আনন্দ বিশ্বব্যাপী। এ আনন্দ ও খুশি তখনই সার্থক ও সফল হবে যখন ধনীরা গরীবদের প্রতি সদয় হবেন, শাসক শাসিতের প্রতি করুণা করবেন। কারো প্রতি থাকবে না হিংসা বিদ্বেষ, থাকবে না সমাজে কোন অন্যায়-অবিচার, দেশটা হবে শান্তির বাগান, সমাজ হবে বন্ধুত্বপূর্ণ ও প্রীতির ডোরে আবদ্ধ। এই প্রীতি আর সৌহার্দ থাকুক সারাবছর। আমীন-

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ