শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


ফিতরা ও সদকা, ফিদইয়া ও কাফফারা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ফরহাদ খান নাঈম।।

ফিতরা

রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ফিতরা আদায় করার আগ পর্যন্ত রোজা আসমান ও জমিনের মাঝে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে। তারগিব।

ছোট-বড়, নারী-পুরুষ, স্বাধীন-পরাধীন নির্বিশেষে সকল মুসলমানের উপর ফিতরা আদায় করা ফরজ। সাধারণত এটি রমজানের শেষ দিনগুলোতে কিংবা ঈদের দিন রাতে আদায় করা হয়। কেউ কেউ ঈদের দিন ঈদের সালাতের পূর্বেও ফিতরা আদায় করে থাকেন।

দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনা পালন এবং সুন্দরভাবে পবিত্র রমজান মাস শেষ করতে পারার শোকরিয়াস্বরূপ ফিতরা আদায় করতে হয়।

ফিতরা গরিব-অসহায়দের হক। সুতরাং প্রকৃত দরিদ্রদের খুঁজে তাদের হাতে ফিতরা তুলে দিতে হবে। নিজ এলাকার দরিদ্রদের মধ্যে ফিতরা বিতরণ করা উত্তম যাতে করে এলাকার প্রকৃত দরিদ্ররা সেখানকার ধনীদের দ্বারা উপকৃত হতে পারে।

সদকা

কুরআনের ভাষ্যমতে সদকা দানকারীকে পরিশোধিত করে। সদকা কেবলমাত্র সম্পদ দ্বারাই আদায় করতে হয় তা নয়; বরং অন্যের উপকারার্থে কোনো ভালো কাজ সম্পাদন করা অথবা অন্যের সাথে সদাচরণ করাও সদকার অন্তর্ভুক্ত।

রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, প্রতিটি ভালো কাজই সদকা। কাউকে অপমান করে দান করার মাধ্যমে সদকার চেয়ে বরং কারো সাথে সুন্দর ও অমায়িক আচরণের সদকাই উত্তম।

ইসলামে লোকদেখানো দানের চেয়ে গোপণে দান করাকে উৎসাহিত করা হয়েছে। বস্তুত লোকদেখানো দানের মাধ্যমে সদকার প্রকৃত উদ্দেশ্য সফল হয় না। কারণ এ ধরনের দানের আসল উদ্দেশ্য হলো নিজেকে দানবীর হিসেবে সমাজে পরিচিত করা।

সমাজে এক শ্রেণির লোক আছে যারা দারিদ্র্যকে পুঁজি করে মানুষের কাছে হাত পাতাকে নিজেদের অভ্যাস বানিয়ে নিয়েছে। আরেক শ্রেণির লোক আছে যারা অভাবে থাকা সত্ত্বেও চক্ষুলজ্জার কারণে সচরাচর অন্যের কাছে হাত পাতে না। পবিত্র কুরআনে দান-সদকা করার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় শ্রেণির লোকদেরকে প্রাধান্য দিতে বলা হয়েছে।

ফিদইয়া

অসুস্থতা কিংবা বার্ধক্যজনিত কারণে যারা রমজানের রোজা রাখতে পারেন না, তাদেরকে প্রতিটি রোজার বদলে একজন করে দরিদ্র ব্যক্তিকে আহার করাতে হবে। ইসলামের পরিভাষায় এটিকেই ফিদইয়া বলা হয়। তবে ফিদইয়া আদায়কারী যদি গরিব হয় এবং ফিদইয়া আদায় করার সামর্থ্য না থাকে, তাহলে ইসলাম তার জন্য ফিদইয়াকে মাফ করে দিয়েছে।

আর কোনো সুস্থ ব্যক্তি যদি ভ্রমণ, গর্ভধারণ, বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানো কিংবা অন্য কোনো শরীয়তসম্মত কারণে রোজা রাখতে না পারে, তাহলে অন্য সময়ে তা আদায় করে দিতে পারবে। এসব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির উপর ফিদইয়ার প্রয়োজন নেই।

ফিদইয়া আদায় তথা কোনো দরিদ্রকে খাওয়ানোর বিভিন্ন পন্থা রয়েছে। সবচেয়ে উত্তম হলো, যার উপর ফিদইয়া আবশ্যক হয়েছে, সে নিজে উপস্থিত থেকে গরিব-মিসকিনকে খাওয়াবে। তা সম্ভব না হলে, সে অন্য কোনো বিশ্বস্ত ব্যক্তিকে এ দায়িত্ব দিতে পারে।

কাফফারা

শরীয়তসম্মত কোনো কারণ ছাড়া ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ যদি রমজানের রোজা ভেঙে ফেলে কিংবা না রাখে, তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে প্রতিটি রোজার জন্য লাগাতার ৬০ দিন রোজা রাখতে হবে। ইসলামের পরিভাষায় এটিকে কাফফারা বলা হয়।

বছর ঘুরে মাত্র একবারই পবিত্র মাহে রমজান আমাদের মাঝে আসে। তাই কোনোরূপ অজুহাত না খুঁজে বরং ইখলাস ও আন্তরিকতার সাথে রমজানের প্রতিটি রোজা পালন করা জরুরি।

পুনশ্চ: ফিতরা ও ফিদইয়ার পরিমাণ অঞ্চলভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। তাই এগুলোর পরিমাণ সম্পর্কে স্থানীয় অভিজ্ঞ আলেমের কাছে জিজ্ঞেস করে জেনে নিতে হবে।

-এটি


সম্পর্কিত খবর