সোমবার, ২০ মে ২০২৪ ।। ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ ।। ১২ জিলকদ ১৪৪৫


হযরত মাওলানা আশরাফ আলী রহ., তাবলিগ দেখতে এসে হয়ে গেলেন তাবলিগি!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| মিরাজ রহমান ||

চমৎকারভাবে যুক্তিপূর্ণ ভাষায় বয়ান করতেন মাওলানা আশরাফ আলী রহ.। অহেতুক কোনো যুক্তি দেখিয়ে তাঁর কাছ থেকে পার পাওয়া যেতো না। জামাতে থাকা অবস্থায় এক সরকারি অফিসারকে দাওয়াত দিতে গেলেন একবার। অফিসার তাকে দেখে বললেন, ‘আরে ভাই সবার জন্য সব কাজ নয়। আপনাদের কোনো কাজ নেই তাই আপনারা তাবলিগ করেন। আমার অনেক কাজ আছে, তাই আমি তাবলিগ করতে পারি না। সবাই কি সব কাজ করতে পারে? কাজের মধ্যে ভাগাভাগি আছে না? আপনারা তাবলিগ করেন আর আমি অফিস করি।’ তিনি তখন বললেন, ‘আচ্ছা আপনি বুঝি ঘরের কাজেও এভাবে ভাগাভাগি করেন?’ তিনি বললেন, ‘মানে?’ হুজুর তখন বললেন, ‘আপনি শুধু খানা খান আর আপনার বিবি শুধু পায়খানা করে। আপনার ছেলে শুধু পড়াশুনা করে আর আপনার মেয়ে শুধু ঘুমায়Ñ ব্যাপারটা কি এমন?’ অফিসার বললেন, ‘না এসব কাজ কি ভাগ করে করা যায়?’ মাওলানা আশরাফ আলী তখন বললেন, ‘তাবলিগও এমন একটি কাজ যা ভাগ করা যায় না। এটা সবার কাজ। সবারই এ কাজ করতে হবে।’ মাওলানা সাহেবের যুক্তিপূর্ণ কথা শুনে অবশেষে ওই অফিসার তাবলিগে গেলেন এবং মাওলানাকে তার ভুল শুধরে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানালেন।

বাংলাদেশ তাবলিগ জামাতের একজন স্বনামধন্য মুরব্বি ছিলেন মাওলানা আশরাফ আলী রহ.। মাওলানা আব্দুল আজিজ রহ. দেশের বাইরে সফরে গেলে তাঁর ওপর দায়িত্ব রেখে যেতেন।

১৯২৩ মতান্তরে ২৪ সালে ময়মনসিংহ জেলার গফরগাও থানাধীন ‘কাজা’ নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মাওলানা আশরাফ আলী। প্রাথমিক স্কুল জীবন সমাপ্ত করার পর কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া থানাধীন তারাকান্দি মাদরাসায় এসে ভর্তি হন। এরপর চলে আসেন গফরগাঁওয়ের বিখ্যাত বুজুর্গ মাওলানা পাঁচবাগী রহ. এর মাদরাসায়। দাওয়ারে হাদিস সমাপ্ত করেন ঢাকার বড় কাটারা মাদরাসায়।

১৯৬৭ কিংবা ৬৮ সালের কথা। এলাকায় মসজিদে আসা তাবলিগ জামাত সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিতে এসে মুগ্ধ হয়ে জামাতে বের হলেন মাওলানা আশরাফ আলী রহ.। কেবল বেরই হলেন না ধীরে ধীরে তাবলিগ জামাতের একনিষ্ঠ একজন কর্মী হয়ে গেলেন। খোদার কবুলিয়াত এবং লাখো মানুষের ভালোবাসা নিয়ে সর্বজন শ্রদ্ধেয় তাবলিগি মুরব্বির শান অর্জন করলেন এক সময়। ইসলামি দাওয়াতি কাফেলার অন্যতম সদস্য এই মনীষী দীনের দাওয়াত নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন গোটা বিশ্বময়। মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন নবীজীর সা. বাণী। ব্যক্তিগতভাবে খুব সাদামাটা জীবন-যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন মাওলানা আশরাফ আলী রহ.। অনাড়ম্বপূর্ণ নবীজী সা.-এর আদর্শব্যাপ্ত একটি জীবনের মালিক ছিলেন তিনি। তাঁর এক শুভাকাক্সক্ষী বাড়িতে বিল্ডিং করে দেওয়ার প্রস্তাব দিলে হুজুর তা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘এই দুনিয়া আরামের জায়গা নয়।’

তাবলিগের সফরে ঘুরে ঘুরে সৌদি আরবে থাকাকালীন জন্ডিস রোগে আক্রান্ত হন তিনি। চিকিৎসার জন্য বাদশাহ ফাহাদ ক্লিনিকে ভর্তি করা হলে কিছুটা সুস্থতা লাভ করেন এবং বাংলাদেশে ফিরে আসেন। এখানে আসার পর আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থ হওয়া বা রোগবালাই ছিল বাহানা মাত্র, বস্তুত প্রিয়তম প্রভুর দরবার থেকে তাঁর ডাক এসেছিল। মহান মালিকের সান্নিধ্য লাভের স্পৃহায় আরও বেশি উতলা হয়ে উঠেছিলেন মাওলানা আশরাফ। এবং তাই হলো ১৯৯৭ সালের মে মাসে ইহলোকের আলো আঁধার আর হাসি কান্নাকে বিদায় জানিয়ে প্রিয়তম প্রভুর সাক্ষাৎপ্রার্থীদের মিছিলে ‘লাব্বাইক’ বলে চলেন গেলেন তিনি। আল্লাহ তাঁর কবরকে জান্নাতের আবহে ভরে দিন।

লেখক: আলেম, সাংবাদিক 

কেএল/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ