শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ।। ১ ফাল্গুন ১৪৩১ ।। ১৫ শাবান ১৪৪৬

শিরোনাম :
‘আয়নাঘরের কুশীলবদের গ্রেফতার ও দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে’ শনিবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ইসলামী আন্দোলনের বৈঠক শবে বরাতে সালাতুত তাসবিহ পড়বেন যেভাবে জাতিসংঘের প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আ.লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে: হেফাজত  মেলায় ধর্মীয় বইয়ের ব্যাপক চাহিদা শবে বরাত উপলক্ষে বায়তুল মোকাররমে যত আয়োজন সন্ধায় বায়তুল মোকাররমে আলোচনা করবেন ধর্ম উপদেষ্টা জুলাই বিপ্লবে শিশুহত্যা নিয়ে উদ্বেগ, সুরক্ষা ও জবাবদিহি চায় ইউনিসেফ ‘ইসলামই সকল শ্রেণিপেশা ধর্ম-বর্ণের মানুষের প্রকৃত স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে’ আ.লীগের নিষিদ্ধ ঘোষণায় স্পষ্ট বার্তা দিলেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী

বটগাছের নিকট সন্তান কামনা: কী বলছেন বিজ্ঞ আলেমগণ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ছবি : আওয়ার ইসলাম

|| নুর আলম ||

বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের মানুষ অত্যন্ত ধর্মপরায়ণ ও সহজ-সরল। তাদের উলামায়ে কেরাম ও পীর-মাশায়েখের প্রতি শ্রদ্ধাও কম নয়। তবে দেশের বড় একটি জনগোষ্ঠীর পর্যাপ্ত ধর্মীয় জ্ঞান না থাকায় জড়িয়ে পড়ছেন ইসলাম বহির্ভূত নানা কর্মকাণ্ড ও কুসংস্কারে।

কখনো কোনো কিছুর আশা আর বিশ্বাস নিয়ে ছুটে যায়— বাবার মাজারে, বটগাছ ও ভন্ড পীরের দরবারে।

ঠিক তেমনি একটি ঘটনা ঘটেছে, নাটারের লালপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর গ্রামে। নির্দিষ্ট সময়ে রামকৃষ্ণপুর গ্রামের গোঁসাইজীর আশ্রমের বটগাছের নিচে মহিলারা সন্তান লাভের আশায় ভক্তি ভরে কাপড়ের আঁচল বিছিয়ে বসে থাকেন। তাদের বিশ্বাস বটগাছের ফুল আঁচলে পড়লে ছেলে আর পাতা পড়লে মেয়ে সন্তান হবে। মান্নত করে আসা এসব  নিঃসন্তান নারীদের খাওয়ানো হয় কলাপাতায় করে প্রসাদস্বরূপ খিচুড়ি।

এসব বিষয়ে আওয়ার ইসলামের সঙ্গে কথা বলেছেন দেশের বিজ্ঞ আলেমসমাজ।

রাজধানীর মিরপুর-১১ নম্বর সেকশনে অবস্থিত জামিয়া মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়ার সিনিয়র মুহাদ্দিস মুফতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, সব কিছু চাইতে হবে শুধুমাত্র আল্লাহর কাছে। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নিকট কোন কিছু চাওয়া যাবে না। হাদিসে চাওয়া/ দোয়া করাকে ইবাদত বলা হয়েছে। আর ইবাদত একমাত্র আল্লাহর জন্যই। কেননা কুরআনুল কারিমে সূরা ইউসুফের ৪০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন— `আল্লাহ তায়ালা আদেশ করেছেন, তোমরা একমাত্র তারই ইবাদত করবে'।

আল্লাহ তায়ালা সূরা ইউনুসের ১০৬ নম্বর আয়াতে আরো বলেন, “আর নির্দেশ হয়েছে আল্লাহ ব্যতীত এমন কাউকে ডাকা যাবে না, যে তোমার ভালো কারতে পারবে না আবার মন্দও করতে পারবে না। বস্তুত তুমিও যদি এমন কাজ কর, তাহলে তখন তুমিও জালেমদের (অত্যাচারীদের) অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে”।

সুতরাং বটগাছের নিকট সন্তান চাওয়া যাওয়া সম্পূর্ণ নাজায়েজ, ইসলাম পরিপন্থী কাজ। এটি একটি কুসংস্কার। সন্তান চাইতে হবে একমাত্র আল্লাহর কাছে।

মিরপুর-১৩ নম্বর সেকশনে অবস্থিত দারুল উলুম ঢাকার উলুমুল হাদিস বিভাগের প্রধান মুফতি আব্দুর রহমান নাঈম কাসেমি বলেন, মানুষের মনের আশা পূরণ, সন্তান লাভ, কল্যাণপ্রাপ্তি ইত্যাদি সবকিছু একমাত্র আল্লাহ তায়ালার হুকুমে হয়ে থাকে। তিনি ব্যতীত অন্য কারো এসব ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা নেই। এর উপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখা প্ৰতিটি মুসলিমের অবশ্য কর্তব্য।

তিনি বলেন, গায়েবি বিষয়ে তথা উপায় উপকরণের ঊর্ধ্বে কোন বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা ছাড়া অন্য কারো কাছে কিছু চাওয়া মারা‍ত্নক অপরাধ, যা ব্যক্তিকে শিরক পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। 
আল্লাহ বলেন, ‘সে আল্লাহকে ছাড়া এমন কিছুকে ডাকে, যা না পারে অপকার করতে, আর না উপকার ; এটাই চরম বিভ্রান্তি’।(সূরা হজ,আয়াত: ১৩) 

আল্লাহ তায়ালা অন্যত্র বলেন—‘তাকে ছেড়ে দিয়ে তোমরা যাদের প্রতি ঝুকো তাদের ডাকো, কিন্তু তারা তোমাদের থেকে বিপদ-আপদ দূর করার কোনো ক্ষমতা রাখে না, আর তা বদলাবারও না’।

সূরা জিনে বলা হয়েছে—‘বলে দাও, আমি (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তোমাদের কোনো ক্ষতি করার এখতিয়ার রাখি না এবং কোনো উপকার করারও না। (সুরা জিন,আয়াত:২১)

হাদিস শরিফে রয়েছে— হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে সম্বোধন করে বলেছেন, হে বৎস! তুমি যদি ( কোনো কিছু) চাও তবে আল্লাহর নিকট চাও। আর যদি সাহায্য প্রার্থনা করো‍, তবে আল্লাহর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করো‍। জেনে রেখো, যদি সকল মানুষ সংঘবদ্ধভাবে তোমার উপকার করতে চায় তবে তারা ততটুকু উপকারই করতে পারবে যতটুকু আল্লাহ তোমার জন্য লিখে রেখেছেন। আর যদি তারা তোমার ক্ষতি সাধন করতে চায় তবে ততটুকুই ক্ষতি করতে পারবে যতটুকু আল্লাহ নির্ধারণ করে রেখেছেন। (জামে তিরমিযী, হাদীস : ২৫১৬; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২৬৬৯)

মুফতি আব্দুর রহমান নাঈম কাসেমি আরো বলেন, পবিত্র কুরআনুল কারিমের সূরা‍ নূহ এ বর্ণিত আছে যে, হযরত নূহ আলাইহিস সালাম এর যুগে কিছু লোক ওয়াদ্, সূয়া, ইয়াগুস, ইয়ায়ুক, নসর নামক প্রতিমার কাছে আরাধনা করতো, নিজেদের প্রয়োজন তাদের কাছে চাইতো, অনুরূপ জাহিলিয়াতের যুগেও লোকেরা‍ লাত, মানাত, উজ্জা সহ নিজেদের হাতে প্রস্তুতকৃত  অসংখ্য প্রতিমার কাছে বিভিন্ন জিনিস চাইতো, আল্লাহ তায়ালা কুরআনুল কারিমের বহু আয়াতে এর অসাড়তার বর্ণনা দেন।পাশাপাশি তিনি ছাড়া অন্য কারো কাছে কিছু চাওয়াকে স্থায়ীভাবে নিষেধ করে বলেন— "সুতরাং আল্লাহর সাথে তোমরা অন্য কাউকেও ডেকো না।" (সুরা‍ জিন, আয়াত: ১৮)

তাই গায়েবি বিষয়ে বিশেষ করে‌‍ সন্তান লাভের জন্য আল্লাহ তায়ালা ছাড়া অন্য যেকারো‍ কাছে কিছু চাওয়া অজ্ঞতা, বোকামি ও বৃথা। চাই সে মানুষ হোক অথবা জীবজন্তু, গাছপালা বা বটবৃক্ষ । 

আমাদের উচিত একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ তায়ালার কাছে চাওয়া, তিনি বান্দার দুয়া কবুল করেন, বান্দার জন্য কল্যাণের ফয়সালা করেন।

এদিকে সাংস্কৃতির রাজধানী কুষ্টিয়ায় অবস্থিত মারকাযুল ফিকরিল ইসলামির নায়েবে মুহতামিম মুফতি মারগুব ইরফান এধরনের কাজকে শিরক আখ্যা দিয়ে বলেন—  বটগাছ, বাবার দরবার ও মাজারে কামনা করা রবের সাথে এক ধরনের শিরক। এগুলো জাহেলিযুগের চিন্তা-চেতনা। তৎকালীন আরব মুশরিকরা মূর্তির কাছে সন্তান চাইতো। আর বর্তমানে তারাও কেমন যেন বটগাছের কাছে সন্তান চাচ্ছে। অথচ কুরআনুল কারিমে সূরা শুরার ৪৯-৫০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন— “আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর রাজত্ব আল্লাহরই। তিনি যা চান সৃষ্টি করেন। যাকে চান কন্যা দেন এবং যাকে চান পুত্র দেন অথবা পুত্র ও কন্যা উভয় মিলিয়ে দেন। আবার যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করে দেন। নিশ্চয়ই তিনি সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান"। 

অতএব, সন্তান চাইতে হবে একমাত্র আল্লাহর কাছে। তিনি ছাড়া অন্য কারো নিকট সন্তান চাওয়া যাবে না। আর চাইলে সেটা হবে শিরক। যা তওবা ছাড়া আল্লাহ ক্ষমা করবেন না।

এনএ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ