বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪ ।। ২১ কার্তিক ১৪৩১ ।। ৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


বায়তুল মোকাররম ইসলামি বইমেলা, লেখক-প্রকাশক-সংগঠকদের চাওয়া-পাওয়া

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
বায়তুল মোকাররম ইসলামি বইমেলা, লেখক-প্রকাশক-সংগঠকদের চাওয়া-পাওয়া

|| হাসান আল মাহমুদ ||

প্রতি বছর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে মহানবী হজরত মোহাম্মদ সা. এর জন্ম-মৃত্যু মাস ‘রবিউল আওয়াল’ উপলক্ষে ‘ইসলামি বইমেলা’র আয়োজন করে থাকে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। ইসলামি বইমেলা নিয়ে চাওয়া-পাওয়া নিয়ে বরাবরই হতাশা ব্যক্ত করেন পাঠক-লেখক ও প্রকাশকরা। বিভিন্ন সময়ে তাদের দাবি-দাওয়াকে উপেক্ষা করে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি ‘নতুন বাংলাদেশ’ উপলক্ষে লেখক-প্রকাশক ও লেখক সংগঠনগুলো সরব হয়েছে তাদের প্রিয় বইমেলার চাওয়া-পাওয়া নিয়ে।  

বিশিষ্ট আলেম লেখক গবেষক শরীফ মুহাম্মদ বলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ-এর পক্ষ থেকে বছরে মোটামুটিভাবে তিনটি বইমেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার নিয়ম দেখেছি। রমজান, রবিউল আউয়াল, ফেব্রুয়ারি। ৯০ দশকে মেলাগুলো যথেষ্ট জাঁকজমকের সঙ্গেই আয়োজিত হতো। কখনো দক্ষিণ গেইটে, কখনো উত্তর গেইটের সাথে। ভালো প্রকাশনীগুলোর পাশাপাশি সৌদি আরব, ইরান-সহ কিছু এম্বাসিরও স্টল থাকতো।

‘মেলার মধ্যেই খোলা চত্বরে প্রবীণ লেখক সাহিত্যিকদের উপস্থিতিতে ছোট আকারে অনুষ্ঠানও হতো। আল মাহমুদ, আব্দুল মান্নান সৈয়দ এবং এ পর্যায়ের আরো কবি লেখকদের উপস্থিত হতে দেখেছি। ৯৩/৯৪ সালের দিকে একটি প্রকাশনা সংস্থার পক্ষ হয়ে চার জন মিলে রমজান মাস ব্যাপী স্টল চালিয়েছি। সে এক মধুর মজার অভিজ্ঞতার স্মৃতি।’- যুক্ত করেন তিনি

শরীফ মুহাম্মদ প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘এখন কি তিনটি মেলাই হয়? গত কয়েক বছর গিয়ে কিছু প্রাণচাঞ্চল্য তো অবশ্যই দেখেছি, তবে আগের সঙ্গে তুলনা করলে মনে হতো পরিসরে সৌন্দর্যে যেন অনাদর পাওয়া বইয়ের দোকানের ছোট্ট সারি।’

এসময় তিনি দাবি রেখে বলেন, ‘এই অবস্থাটার পরিবর্তন দরকার। প্রকাশক লেখক পাঠকদের অনেকেই দাবি তুলেছেন সুন্দর করে মেলাটাকে সাজাবার। এই রবিউল আউয়াল থেকেই শুরু হতে পারে সেই সুন্দর পদক্ষেপের। সাধারণ মানুষ হিসেবে, পাঠক হিসেবে আমরাও অপেক্ষা করছি।’

রাহনুমা প্রকাশনীর প্রকাশক দেওয়ান মোঃ মাহমুদুল ইসলাম সকল প্রকাশকদের পক্ষ হতে দাবি জানিয়ে বলেন, যে বিষয়গুলো আমাদের প্রধান চাওয়া, সেসব আপাতত পয়েন্টাকারে দিচ্ছি :

১। এটা শুধুমাত্র প্রকাশকদের মেলা। এখানে প্রকৃত ইসলামি প্রকাশক ছাড়া অন্য কেউ অংশগ্রহণ করতে পারবে না।

২। সুতরাং এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে এবং আমাদের কথাগুলো সরকারি বইমেলা কমিটিতে বলার জন্য মেলা কমিটিতে প্রকাশকদের থেকে পাঁচজন প্রতিনিধি রাখা।

৩। মেলা পূর্বগেটে বৃহত্তর পরিসরে হওয়া।

৪। নিজ প্রকাশনীর প্রকাশিত কিংবা পরিবেশিত বই ছাড়া কোনো বই স্টলে রাখতে না পারার নিয়ম জারি করা।

৫। মেলায় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ফিক্সড করতে প্রকাশকদের রায় নেওয়া।

৬। কে কত নাম্বার স্টল পাবে লটারি শুধুমাত্র সে বিষয়ে করা। যারা একবার স্টল বরাদ্দ পাবেন (এ বছর বিশেষ করে) তারা আর কখনোই স্টল পাওয়ার জন্য লড়াই বা লটারি প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাবেন না। পরবর্তী অংশগ্রহণ বিষয়টি একটি নিয়মের ভেতর দিয়ে করা হবে।

সিয়ান পাবলিকেশনের প্রকাশক আহমেদ রফিক বলেন, ‘বইমেলা প্রতিটি শিক্ষিত জাতির একটি সংস্কৃতিক উপলক্ষ। বাংলাদেশে  বাংলা একাডেমির সাধারণ বইমেলা যেমন তেমনই ইসলামি ফাউন্ডেশনের ইসলামি বইমেলা। কিন্তু অত্যন্ত দু:খজনক বিষয় হলো বছরের পর বছর ধরে ইসলামি বইমেলা মারাত্মকভাবে অবহেলিত হয়ে আছে। নেই কোনো নীতিমালা, নেই কর্তৃপক্ষের স্বদিচ্ছা এবং নেই সত্যিকার মানসম্মত সৃজনশীল প্রকাশকদের অংশগ্রহণের সুযোগ।’

তিনি জানান, বিগত কয়েক বছর ধরে আমরা সৃজনশীল প্রকাশকদের পক্ষ থেকে ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষের সাথে অনেকবার বসেছি, অনুরোধ করেছি, সর্বাত্মক সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছি, কিন্তু কিছুতেই কর্তৃপক্ষের কোনো সহযোগিতা আমরা পাইনি; উলটো এসব দাবিদাওয়া নিয়ে সোচ্চার হওয়ার কারণে আমরা নানারকম অবিচার ও নিগ্রহের শিকার হয়েছি।

তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘দেশের সামগ্রিক অবস্থার পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে আমরা আশা করছি যে, ধর্ম মন্ত্রণালয় ও ইসলামি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশি মুসলমানদের সাংস্কৃতিক মিলনমেলা "বায়তুল মুকাররম ইসলামি বইমেলা" কে একটি জাতীয় বইমেলার মতো সুন্দর সুশৃঙ্খল করে আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা সংস্কার ও প্রণয়নের আন্তরিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

এসময় তিনি বইমেলাকে সমৃদ্ধ ও সুন্দর করতে কয়েকটি বিষয় সংযোজনের অনুরোধ জানান,

১। বইমেলার পরিসরে লেখক কর্ণার, মোড়ক উম্মোচন ইত্যাদির জন্য নির্দিষ্ট স্থান বরাদ্দের ব্যবস্থা করা।

২। ইসলামি বইমেলা প্রচার-প্রসারে ব্যাপক প্রস্তুতি ও বাজেট প্রণয়ন করা এবং সে অনুপাতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দেশের প্রধান সংবাদ মাধ্যমগুলোতে প্রচার-প্রচারণার ব্যবস্থা করা।

৩। বইমেলার চত্বরে বিভিন্ন ধরনের হকার প্রতিষ্ঠান অসাধু উপায়ে শরবত, জামা-কাপড়, মেসওয়াক ইত্যাদি বিক্রি করে মেলার পরিবেশ নষ্ট করে। এসব না হতে পারে তার জন্য ব্যবস্থা রাখা।

৪। তথ্য বুথ/কমপ্লেইন বুথ থাকা। প্রকাশক/লেখকদের পক্ষ থেকে যে কোনো সমস্যার সমাধানে নিয়োজিত ব্যক্তি রাখা।

৫। ইসলামি বইমেলায় ইসলামি বই প্রকাশক ছাড়া অন্য কোনো জেনারেল বই প্রকাশকদের অংশগ্রহণ যেন না থাকে তার জন্য আইন প্রণয়ন করা।

এদিকে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত ইসলামি বইমেলাকে আরো সমৃদ্ধ করার দাবি তুলেছে লেখকদের জাতীয় সংগঠন ‘বাংলাদেশ ইসলামি লেখক ফোরাম।’ ফোরামের সভাপতি কবি মুনীরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আমিন ইকবাল এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনায় বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গনে প্রতি বছর দুটি ইসলামি বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়।  দীর্ঘদিন এই মেলা নিয়ে আয়োজকদের প্রতি সৃজনশীল ও প্রতিশ্রুতিশীল প্রকাশকদের ক্ষোভ রয়েছে। স্টল বরাদ্দে অনিয়ম, কর্তৃপক্ষের নানান দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা ছিল প্রকাশ্য বিষয়। বাংলাবাজারের প্রকৃত প্রকাশকদের উপেক্ষা করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ফুটপাতের হকার ও সাধারণ বইবিক্রেতাদের স্টল দেওয়া হতো। ফলে ইসলামি বইমেলা প্রাণ হারিয়ে হকারদের মেলায় পরিণত হয়েছিল, যা নিয়ে প্রকাশক, লেখক ও পাঠকদের মনে ছিল চরম অসন্তোষ।

তারা বলেন, পরিবর্তিত নতুন বাংলাদেশে ইসলামি বইমেলা নিয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন প্রকৃত প্রকাশকগণ। মেলার প্রাণ ফিরিয়ে আনতে এবং প্রকাশক, লেখক ও পাঠকবান্ধব ইসলামি বইমেলা আয়োজনের লক্ষ্যে তারা বিভিন্ন দাবি-দাওয়া পেশ করেছেন।

প্রকাশকদের দাবি-দাওয়ার সাথে আছে জানিয়ে তারা বলেন, লেখকদের জাতীয় সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামি লেখক ফোরাম প্রকাশকদের ন্যায্য আন্দোলন ও প্রতিটি দাবি-দাওয়ার সাথে একমত পোষণ করছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা প্রকাশকদের সাথে রয়েছি ইনশাআল্লাহ।

হাআমা/


সম্পর্কিত খবর