ইসলাম ও নারী উন্নয়ন : একটি বাস্তবভিত্তিক পর্যবেক্ষণ
প্রকাশ:
০৩ মে, ২০২৫, ১০:৩৬ দুপুর
নিউজ ডেস্ক |
![]()
||মুফতী হাফীজুদ্দীন|| বাংলাদেশে নারী উন্নয়ন নিয়ে সাম্প্রতিক আলোচনাগুলো এক নতুন মোড় নিয়েছে। শিক্ষা, অধিকার, কর্মসংস্থান ও সামাজিক অংশগ্রহণের মতো নানা ক্ষেত্রে নারীর অগ্রযাত্রা দৃশ্যমান হলেও, এই অগ্রগতির পেছনে যে চিন্তাধারাগত দ্বন্দ্ব ও বিতর্ক লুকিয়ে আছে, তা উপেক্ষা করার উপায় নেই। বিশেষ করে একটি প্রশ্ন ঘুরেফিরে সামনে আসছে - " ইসলাম কি নারী উন্নয়নের পথে অন্তরায় ?" দুঃখজনক হলেও সত্য, এই অভিযোগ আজকাল কিছু আত্মবিস্মৃত, আত্মঘৃণায় নিমজ্জিত আধুনিক নারীবাদী ও তথাকথিত প্রগতিশীল গোষ্ঠীর মুখে নিয়মিত উচ্চারিত হচ্ছে। তারা ইসলামকে নারীর অবরুদ্ধ জীবনের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরতে চায়, অথচ ইতিহাস ও বাস্তবতা বারবার প্রমাণ করেছে ঠিক উল্টোটা। এই প্রবণতা কেবল বিভ্রান্তিকর নয় বরং আমাদের সমাজের স্বকীয় মূল্যবোধ, বিশ্বাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গেও এক নির্মম অবিচার। " ইসলাম কি নারী উন্নয়নের পথে প্রতিবন্ধক ? " এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার পূর্বে আমাদের দরকার ইতিহাস, সমাজ ও ধর্মীয় দর্শনের নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ। কারণ, যেকোনো মূল্যায়নের আগে সত্যকে জানতে হলে আবেগ নয়, প্রয়োজন বাস্তবতা ও বুদ্ধিবৃত্তিক সততা।
ইসলাম এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে আবির্ভূত হয়, যখন নারীর সামাজিক অবস্থান ছিল শূন্যের কোঠায়। আরব সমাজে কন্যাশিশু জন্ম ছিল অভিশাপস্বরূপ এবং অনেক বাবা তাদের জীবন্ত কবর দিয়ে দিত। এমন বর্বর সময়েই মুহাম্মদ (সা.) ঘোষণা করেন : "যে ব্যক্তি কন্যাসন্তান লালন-পালন করে, তাদের প্রতি সদ্ব্যবহার করে, তাকে জান্নাত দেওয়া হবে।" ( আল হাদীস) এই একটি বাণীই সেই সমাজে নারী মর্যাদার ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক যুগান্তর। ইসলাম নারীকে দিয়েছে ব্যক্তিসত্তা, অধিকার ও মর্যাদা। কোরআনে নারী ও পুরুষকে সমানভাবে সৃষ্টির অংশ বলা হয়েছে - "আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি"। (সূরা হুজুরাত: ১৩) ইসলামে নারীর অধিকার: একটি পূর্ণাঙ্গ কাঠামো ১. শিক্ষার অধিকার: হাদীসে এসেছে, “জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর উপর ফরজ।” নারী শিক্ষাকে ইসলাম যে ফরজ ঘোষণা করেছে, তা মধ্যযুগীয় কোনো সমাজে কল্পনাই করা যেত না। ২. অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও মালিকানা: ৩. উত্তরাধিকারের অধিকার: ৪. রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক অংশগ্রহণ: ৫. বিয়ে ও পারিবারিক অধিকার: আধুনিক নারীবাদ একদিকে যেমন নারীর কিছু অধিকার রক্ষায় অবদান রেখেছে, অন্যদিকে একে কেন্দ্র করে অনেক বিভ্রান্তিও ছড়াচ্ছে তারা। নারীর “উন্নয়ন” বলতে কি শুধুই চাকরি, অর্থ বা বাইরে গিয়ে কাজ করাকেই বোঝায় ? নাকি উন্নয়ন বলতে বোঝায় - তার আত্মমর্যাদা, পারিবারিক শৃঙ্খলা, মাতৃত্বের স্বীকৃতি এবং একটি নিরাপদ সমাজব্যবস্থায় বসবাসের অধিকার ? আজকের ভোগবাদী সংস্কৃতি নারীর ‘স্বাধীনতা’র নামে তাকে পণ্যে পরিণত করেছে। বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে বিনোদন জগত - নারীর শরীর এখানে কেবল পুঁজিবাদের বিক্রয়যোগ্য উপকরণ। অথচ ইসলাম নারীর শালীনতা, মর্যাদা ও নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। পর্দা নারীকে আবদ্ধ করে না বরং তাকে অন্যায় দৃষ্টির হাত থেকে মুক্ত রাখে। এটি একপ্রকার সামাজিক বর্ম। বর্তমান সময়ে দুঃখজনক একটি চিত্র হলো নারী উন্নয়নের নামে অনেক সময় এমন কিছু আদর্শ চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে যা তাদের পারিবারিক জীবনকে ভেঙে দেয়, আত্মিক ভারসাম্য নষ্ট করে এবং তাদের 'মাতৃত্ব'কে অবজ্ঞার চোখে দেখে। এই প্রবণতা নারীকে একটি কর্পোরেট যন্ত্রে পরিণত করছে, যেখানে মূল্যবোধের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে কর্মদক্ষতা ও বাহ্যিক সফলতা। আর যারা বলেন, “ইসলাম নারী উন্নয়নের পথে বাঁধা,” তাদের জিজ্ঞেস করা দরকার: ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা: নারীবান্ধব ইসলামী সমাজ : নারী উন্নয়নের একটি পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা দিতে হলে পরিবার, শিক্ষা ও সমাজ এই তিনটিকে একত্রে দেখতে হবে। ইসলাম এ তিনটির মাঝেই ভারসাম্য বজায় রাখে। কাজেই নারীদের আধুনিক শিক্ষার পাশাপাশি কোরআন-সুন্নাহভিত্তিক মূল্যবোধ শেখাতে হবে। এসএকে/ |