সোমবার, ২০ মে ২০২৪ ।। ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ ।। ১২ জিলকদ ১৪৪৫


রক্তের প্লাটিলেট কমে যাওয়ার অভিযোগে টিকা তুলে নিচ্ছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

বিশ্ববাজার থেকে নিজেদের কোভিড টিকা সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ব্রিটিশ-সুইডিশ কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকা। তাদের টিকায় রক্ত জমাট বাধা ও রক্তের প্লাটিলেট কমে যাওয়ার মতো গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার অভিযোগ উঠেছে। হয়েছে বেশকিছু মামলাও। মতো গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার অভিযোগ উঠেছে। হয়েছে বেশকিছু মামলাও। এমন পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাস মহামারির চার বছর পর মঙ্গলবার থেকে টিকা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় তারা।

অ্যাস্ট্রাজেনেকা বলছে, চাহিদা কমে যাওয়া ও বাজারে হালনাগাদ টিকা থাকায় এমন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। যদিও সম্প্রতি তারা তাদের টিকার গুরুতর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা আদালতে স্বীকার করে নিয়েছিল। ইউরোপে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি টিকার নাম তারা দিয়েছিল ‘ভ্যাক্সজেভরিয়া’। আর ‘কোভিশিল্ড’ নামে তাদের টিকা উৎপাদন হয়েছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে। দুই ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্স ও টেলিগ্রাফের খবর থেকে জানা গেছে, নিজেদের সব টিকাই বাজার থেকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। ইকোনমিক টাইমস বলছে, এতে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।

অ্যাস্ট্রাজেনেকা জানিয়েছে, তারা ইউরোপের বাজারে ‘ভ্যাক্সজেভরিয়া’ টিকা বিক্রির অনুমোদন প্রত্যাহারে কাজ শুরু করছে। টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোম্পানি স্বেচ্ছায় তাদের ‘বিপণন অনুমোদন’  প্রত্যাহার করবে। প্রতিবেদন অনুসারে ভ্যাকসিন প্রত্যাহার করার জন্য গত ৫ মার্চ আবেদন করা হয়েছিল এবং ৭ মে তা কার্যকর হয়েছিল। 

এতে আরও বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য দেশেও একই রকম আবেদন করা হবে, যারা ভ্যাক্সজেভরিয়া নামে পরিচিত ভ্যাকসিন অনুমোদন করেছে। এক বিবৃতিতে অ্যাস্ট্রাজেনেকা জানিয়েছে, ‘করোনার ভ্যাকসিন আর তৈরি করা হচ্ছে না। যেহেতু বিভিন্ন ধরনের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছে, হালনাগাদ ভ্যাকসিনগুলো বাজারে উদ্বৃত্তও আছে। ফলে ভ্যাক্সজেভরিয়া ভ্যাকসিনের চাহিদা কমে গেছে। এগুলো আর তৈরি কিংবা সরবরাহও করা হচ্ছে না।’

এদিকে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, তারা কোভিশিল্ডের যাবতীয় বিরল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও প্রকাশ্যে এনেছে। তবে তাদের ভ্যাকসিন কোটি কোটি মানুষের জীবন রক্ষায় ভূমিকা রেখেছে। সেরাম জানিয়েছে, ২০২১ সালের ডিসেম্বরেই তারা কোভিশিল্ডের উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। এনডিটিভির খবর অনুযায়ী, কারণ হিসেবে চাহিদা কমে যাওয়ার কথা উল্লেখ করেছে তারাও। 

বাজার থেকে টিকা প্রত্যাহারের নেপথ্যে অ্যাস্ট্রাজেনেকা চাহিদা কমে যাওয়া ও বাজারে হালনাগাদ টিকা থাকার কথা বলছে। তবে অ্যাস্ট্রাজেনেকার এই টিকায় শরীরে রক্ত জমাট বাঁধা এবং রক্তে প্লাটিলেটের মাত্রা কমে যাওয়ার মতো বেশ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খবরে আলোচনা শুরু হয় বেশ কিছুদিন আগে থেকেই। এনডিটিভি বলছে, রক্ত জমাট বাঁধা এবং প্লাটিলেট মাত্রা কমে যেতে পারে থ্রম্বোসিস উইথ থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া সিনড্রোমের (টিটিএস) কারণে। যুক্তরাজ্যে ৮১ জনের মৃত্যুর ঘটনায় এর যোগসূত্র রয়েছে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যে আছে, সে বিষয়টি পরে স্বীকারও করে কর্তৃপক্ষ। আর এখন চাহিদা কমার কথা জানিয়ে এসব টিকা বাজার থেকে তুলে নেওয়ার কথা বলছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা।

রয়টার্স জানিয়েছে, কোভিড-১৯-এর জন্য তৈরি টিকা বিক্রি কমে যাওয়ার পর গত বছর বেশ কয়েকটি চুক্তির মাধ্যমে শ্বাসতন্ত্রের ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের টিকা এবং স্থূলতা ঠেকানোর ওষুধ উৎপাদনে নামে লন্ডনের তালিকাভুক্ত এই ওষুধ কোম্পানি। টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় মৃত্যু ও শারীরিক জটিলতার অভিযোগে যুক্তরাজ্যে ১০০ মিলিয়ন পাউন্ড ক্ষতিপূরণের দাবিতে তাদের বিরুদ্ধে ৫১টি মামলা চলছে। ফেব্রুয়ারিতে সেখানকার একটি আদালতে অ্যাস্ট্রাজেনেকা কর্তৃপক্ষ স্বীকার করে নেয়, ‘খুবই বিরল ক্ষেত্রে’ তাদের টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে, যার ফলে ‘টিটিএস’ বা ‘থ্রম্বোসিস উইথ থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া সিনড্রোম’ হতে পারে।
অবশ্য টিকা প্রত্যাহারের ঘোষণার সঙ্গে আদালতে চলমান মামলার সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা কর্তৃপক্ষ।

এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, ‘স্বাধীন জরিপ অনুযায়ী, টিকা ব্যবহার শুরুর প্রথম বছরে ৬৫ লাখ মানুষের জীবন বেঁচেছে। বিশ্বব্যাপী ৩০০ কোটি ডোজ টিকা সরবরাহ করা হয়েছে। আমাদের এই প্রচেষ্টা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত এবং বিশ্বব্যাপী মহামারি শেষ করার একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এখন একাধিক বিকল্প কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন তৈরি হওয়ায় বাজারেও হালনাগাদ ভ্যাকসিনগুলো পর্যাপ্ত বা উদ্বৃত্ত রয়েছে। আমরা এখন অংশীদার ও নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এই অধ্যায় শেষ করার জন্য কাজ করব।’

ভারতের করুনিয়া নামের এক তরুণী কোভিশিল্ড টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় মারা গেছেন; এমন অভিযোগ করেছেন তার বাবা বেণুগোপাল গোবিন্দ। ইকোনমিক টাইমসকে তিনি বলেন, সেরাম ইনস্টিটিউট, ভারত সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা সবাই তার মেয়েসহ আরও অনেক মৃত্যুর জন্য দায়ী। তিনি মেয়ের মৃত্যুর বিচার চান; প্রয়োজন হলে উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথাও বলেছেন। এ রকম আটটি পরিবার একত্র হয়েছে বলে জানিয়েছেন বেণুগোপাল। তারা সবাই প্রিয়জনের মৃত্যুর বিচার চায়। যারা এসব কাজের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিচারের আওতায় আনতে এই পরিবারগুলো বদ্ধপরিকর।

ইকোনমিক টাইমস বলছে, থ্রম্বসাইটোপেনিয়া সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়ে ব্রিটেনে ৮১ জনের মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসায় এবং কোভিশিল্ড বন্ধ করে দেওয়ার খবরে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।

হাআমা/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ