শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫


আইএসের পেছনে পশ্চিমাদের ‘ইন্ধনের’ অভিযোগ রাশিয়ার

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ছবি: সংগৃহীত

মস্কোর কনসার্ট হলে ২২ মার্চের বন্দুকহামলার দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস। কিন্তু এতে পশ্চিমা বিশ্ব ও ইউক্রেনের ইন্ধনের অভিযোগ তুলেছেন খোদ রুশ গোয়েন্দা প্রধান। হামলায় জড়িত সন্দেহে আটক আরেকজনকে মঙ্গলবার (২৭ মার্চ) মস্কোর আদালতে হাজির করা হয়েছে।

এর আগে আটক সাত ব্যক্তিকে বিচারপূর্ব জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি পেয়েছেন রুশ তদন্তকারীরা। মঙ্গলবার কিরগিজ বংশোদ্ভূত আলিশার কাসিমভকেও রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে আদালত।

হামলায় সরাসরি অংশ নেওয়ার দায়ে অভিযুক্ত অন্য চার ব্যক্তির পরিবারকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য তদন্তকারীদের তাজিকিস্তানে পাঠানোর আদেশও দেওয়া হয়েছে।

এই আদেশের ফলে আটক আট ব্যক্তিকেই বিচারপূর্ববর্তী আটক ও জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি পেলেন তদন্তকারীরা।

পঞ্চম মেয়াদে নির্বাচনে জিতে রাশিয়ার ক্ষমতায় এসেছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। নির্বাচনের কয়েকদিনের মাথায় গত দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতি এই হামলার ঘটনা ঘটে।

ইসলামিক স্টেট এই হামলার দায় স্বীকার করেছে এবং হামলার ভিডিও প্রকাশ করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সও তাদের গোয়েন্দা তথ্যের বরাত দিয়ে এই হামলার পেছনে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটিকেই দায়ী করেছে। ২২ মার্চের হামলায় ১৩৯ জন নিহত এবং ১৮২ জন আহত হন।

হামলাটি ইসলামিক জঙ্গিদের কাজ বলে গত সোমবার পুতিনও অভিযোগ করেছেন। তবে এর পেছনে ইউক্রেনেরও ভূমিকা থাকতে পারে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। ইউক্রেন অবশ্য এর পেছনে নিজেদের কোনো ভূমিকা অস্বীকার করেছে।

জঙ্গিরা অবশ্য হামলাকারীদের কারো পরিচয় প্রকাশ করেনি।

রাশিয়া বলছে, আটক হওয়াদের মধ্যে চার সন্দেহভাজন বন্দুকধারী হামলায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। কিন্তু আদালতে হাজির করার সময় তাদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন দৃশ্যমান ছিল, একজনকে আনা হয়েছে হুইলচেয়ারে। এর ফলে আটক হওয়াদের ওপর হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।

সন্দেহভাজনদের আদালতে আনার ভিডিও প্রকাশের পর রাশিয়ার মানবাধিকার কমিশনার তাতায়ানা মোসকালকোভা বলেছেন, আটকাবস্থায় সন্দেহভাজনদের সঙ্গে আইন মেনে আচরণ করা উচিত। ভিডিওতে দেখা গেছে, জিজ্ঞাসাবাদের সময় একজনের কানের একটি অংশ কেটে গেছে, একজন নড়াচড়াও করতে পারছেন না।

রুশ সংবাদ সংস্থা তাস মানবাধিকার কমিশনারকে উদ্ধৃত করেছে, ‘বন্দী ও আসামিদের নির্যাতন করা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।’ রুশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা নির্যাতনের অভিযোগের তদন্ত করছে।

মধ্য এশিয়ার নজর

এই হামলার পর মধ্য এশিয়ার সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের দুই মুসলিমপ্রধান রাষ্ট্র কিরগিজস্তান ও তাজিকিস্তানের ওপর বিশ্বের নজর পড়েছে। মস্কোর সঙ্গে দেশ দুটোর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এবং রাশিয়ায় কাজ করা অভিবাসী শ্রমিকদের পাঠানো অর্থের ওপর তারা নির্ভরশীল।

বার্তাসংস্থা রয়টার্স তিন তাজিক সূত্রের বরাতে মঙ্গলবার জানিয়েছে, রুশ তদন্তকারীরা তাজিকিস্তানে চার সন্দেহভাজন বন্দুকধারীর পরিবারকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। তাদের আত্মীয়দের নিজ শহর থেকে রাজধানী দুশানবেতে আনা হয়েছে।

কিরগিজস্তানে জন্মগ্রহণকারী আলিশার কাসিমভকে মঙ্গলবার রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে। তবে তার শরীরে আঘাতের দৃশ্যমান কোনো লক্ষণ ছিল না বলেও জানিয়েছে রয়টার্স।

আলিশারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, হামলায় জড়িত সন্দেহভাজন চার তাজিক ব্যক্তিকে তিনি মস্কোতে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।

তাজিক প্রেসিডেন্ট ইমোমালি রাখমন ব্যক্তিগতভাবে মস্কো হামলার তদন্তের তাজিক অংশের তদারকি করছেন। এই হামলাকে একটি ‘ভয়াবহ এবং লজ্জাজনক ঘটনা’ বলে উল্লেখ করেছেন।

রুশ তদন্তকারীরা বলছেন, একে-৪৭ দিয়ে গুলি চালানোর পর বের হয়ে যাওয়ার আগে হামলাকারীরা পেট্রল দিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। পার্কিং থেকে বেরিয়ে আসার সময় দুটো ছোট বাচ্চাসহ একটি পরিবারকে আঘাতও করে তারা।

এই মাসের শুরুর দিকে উগ্রপন্থীদের কার্যকলাপ দেখে শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন তাজিক প্রেসিডেন্ট। তাজিক যুবকদের ‘মগজ ধোলাই’ এর পেছনে বিদেশি গোষ্ঠী ও গোয়েন্দা সংস্থার নানা কারসাজির অভিযোগও তুলেছিলেন তিনি।

হামলার উদ্দেশ্য এখনো পরিষ্কার নয়

সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটকে পরাজিত করতে যুক্তরাষ্ট্র ও সিরিয়ান বাহিনীর সঙ্গে রাশিয়াও বড় ভূমিকা রেখেছে।

সিরিয়া থেকে বিতাড়িত হয়ে আইএস যোদ্ধারা বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে এবং কয়েকটি শাখায় বিভক্ত হয়। এর মধ্যে একটি হচ্ছে এর আফগান শাখা আইএস-খোরাসান। এই শাখাটি আফগানিস্তান, পাকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান ও ইরানজুড়ে একটি খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চায়।

২৯ বছর বয়সি নেতা সানাউল্লাহ গাফারির নেতৃত্বে ইসলামিক স্টেটের আফগান শাখা আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ঘাঁটি থেকে অনেক দূরে অপারেশন চালাতে সক্ষম।

রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা এফএসবি এর পরিচালক আলেকজান্ডার বোর্টনিকভ বলেছেন যে হামলায় সহযোগীর সংখ্যা ১১ জনের বেশি হতে পারে। তিনি আরও বলেন, পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থা ও ইউক্রেনের জন্য রাশিয়ায় ‘আতঙ্কের বীজ বপন’ করাটা প্রয়োজন ছিল।

আরআইএ বার্তা সংস্থা বোর্টনিকভকে উদ্ধৃত করে বলেছে যে ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এই হামলায় অবদান রেখেছে এবং মধ্যপ্রাচ্যে ইউক্রেন জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে।

পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের সেক্রেটারি নিকোলাই পাত্রুশেভ বলেছেন, এই হামলার পিছনে ‘অবশ্যই’ ইউক্রেন ছিল।

ক্রেমলিন অবশ্য ইউক্রেনের নেতৃত্ব এবং শুক্রবারের হামলার যোগসূত্র বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ‘এ নিয়ে তদন্ত চলছে’।

সূত্র: ডয়চে ভেলে

এনএ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ