বুধবার, ০৮ মে ২০২৪ ।। ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫


আল্লাহর ভয় ও ভালোবাসা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ফাইল ছবি

|| নাজমুল হুদা মজনু ||

প্রিয় রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তিনটি জিনিস যার মধ্যে রয়েছে ঈমানের প্রকৃত স্বাদ সেই পাবে। এক, তার অন্তরে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ভালোবাসা সবচেয়ে বেশি হবে।

দুই, যে কোনো ব্যক্তির সাথে কেবল আল্লাহর জন্যই ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে।

তিন, ঈমানের পর কুফরির দিকে ফিরে যাওয়া তার কাছে এরূপ অপছন্দনীয় যেরূপ আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়া অপছন্দনীয়। (বুখারি)

আল্লাহ তায়ালাকে ভালোবাসার পাশাপাশি তাঁকে ভয় পাওয়া মুমিনের বৈশিষ্ট্য। কী এক‌ আজিব ব্যাপার; যাকে ভালোবাসি তাঁকে আবার ভয় করি! কেন এই ভয়? এ ভয় হারানোর ভয়। যদি পেয়ে হারিয়ে ফেলি। এ তো বান্দার হৃদয়ের আকুতি।

কিন্তু যার জন্য জীবন-মরণ এ বিষয়ে তিনি কী বলেন?
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআন মাজিদে বলেন-
আকাশমণ্ডলী ও জমিনের (যেখানে) যা কিছু আছে তা সবই তাঁর জন্য, জীবনবিধানকে তাঁর অনুগত করে দেয়াই কর্তব্য; (এরপরও কি) তােমরা আল্লাহ তায়ালা ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করবে। (আন-নাহল-৫২)

মানুষের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য হলো ভুলে যাওয়া ও ভুল করা। আল্লাহ তায়ালার হাজারো নিয়ামতের মাঝে অবগাহন করেও অনেক ক্ষেত্রেই আমরা অকৃতজ্ঞ। বেশুমার গুনাহ সত্ত্বেও আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সহসা বান্দাদের ধ্বংস করে দেন না। ভুল সংশোধনের সুযোগ অবারিত রাখেন।

কুরআন মাজিদে আল্লাহ জাল্লা শানহু বলেন-
নেয়ামতের যা কিছু তােমাদের কাছে আছে তা তাে আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকেই এসেছে। অতঃপর তােমাদের যদি কোনাে দুঃখ দৈন্য স্পর্শ করে তখন তা (দূর করার জন্য) তাঁকেই তােমরা বিনীতভাবে ডাকতে শুরু করাে, অত‍ঃপর আল্লাহ তায়ালা যখন তা দূরীভূত করে দেন, তখন তােমাদেরই এক দল লােক তাদের মালিকের সাথে অন্যদের শরিক বানিয়ে নেয়। (আন-নাহল-৫৩-৫৪)

আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত বান্দার ইবাদত পাওয়ার যোগ্য আর কেউ নেই; এটা ঈমানের মৌলিক দাবি। এ ব্যাপারে শৈথিল্যের কোনো অবকাশ নেই। তবুও নাফরমান বান্দা আল্লাহ তায়ালার হুকুমের খেলাপ করে হাজারো অন্যায় অবিচারে লিপ্ত হয়। কিন্তু রাহমানুর রাহিম আল্লাহ রাব্বুল আলামিন দয়ার সাগর; তিনি পাপাচারের শাস্তি সাথে সাথেই দেন না। সতত তাওবাহ-ইস্তেগফার করে ফিরে আসার  সুযোগ দান করেন।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআনের কারিমে উল্লেখ করেছেন-
আল্লাহ তায়ালা মানুষকে তাদের নাফরমানির জন্য যদি (সাথে সাথেই) পাকড়াও করতেন, তাহলে এ (জমিনের) বুকে কোনো (একটি বিচরণশীল) জীবকেই তিনি ছেড়ে দিতেন না; কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তাদের এক বিশেষ সময়সীমা পর্যন্ত অবকাশ দেন, অতঃপর যখন (অবকাশের) সে শেষ সময় তাদের সামনে এসে হাজির হয়, তখন তারা (যেমন) মুহূর্তকালও বিলম্ব করতে পারে না, (তেমনি) তাকে তারা একটুখানি এগিয়েও আনতে পারে না। (আন-নাহল-৬১)

মানুষের আত্ম-জুলুমের জন্য জমিনে দুর্যোগ-দুর্বিপাক নেমে আসে। আবার মানুষ যখন আল্লাহর ভয় ও ভালোবাসায় তাওবাহ-ইস্তেগফার করে ফিরে এসে আল্লাহর শরণাপন্ন হয় তখন রহমতের বারিধারা শুরু হয়।

কুরআন মাজিদে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আল্লাহ তায়ালা আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন, অতঃপর (একবার) মৃত হয়ে যাওয়ার পর সে পানি দিয়ে তিনি জমিনকে জীবিত করে তােলেন; অবশ্যই এতে (আল্লাহর কুদরতের) বহু নিদর্শন রয়েছে সে জাতির জন্য, যারা (আল্লাহর কথা কান দিয়ে) শােনে।(আন-নাহল-৬৫)

কুরআন মাজিদ ও হাদিসে দুর্যোগ-দুর্বিপাক নিয়ে বহু বর্ণনা রয়েছে; এসব কাহিনী থেকে আমাদের অনেক শিক্ষণীয় আছে।
আনাস ইবনু মালিক রা: বর্ণিত : তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যুগে একবার লোকেরা অনাবৃষ্টিতে পতিত হলো। সে সময় আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার মিম্বারে দাঁড়িয়ে জুমুয়ার খুতবা দিচ্ছিলেন। তখন এক বেদুঈন দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! (অনাবৃষ্টিতে) ধন-সম্পদ বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পরিবার-পরিজন ক্ষুধার্ত। আপনি আল্লাহর কাছে দু’আ করুন, তিনি যেন আমাদের বৃষ্টি দান করেন।

তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর দু’হাত তুললেন। সে সময় আকাশে একখণ্ড মেঘওছিল না। বর্ণনাকারী বলেন, হঠাৎ পাহাড়ের মতো বহু মেঘ একত্রিত হলো। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিম্বার থেকে  নামার আগেই বৃষ্টি শুরু হলো।

এমনকি আমি দেখলাম, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দাড়ি বেয়ে বৃষ্টির পানি ঝরছে। বর্ণনাকারী আরো বলেন, সেদিন, তাঁর পরের দিন, তার পরের দিন এবং পরবর্তী জুমুয়া পর্যন্ত বৃষ্টি হলো। অতঃপর সে বেদুঈন বা অন্য কেউ দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে গেল, সম্পদ ডুবে গেল, আপনি আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য দু’আ করুন।

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন তাঁর দু’হাত তুলে বললেন : হে আল্লাহ! আমাদের আশপাশে, আমাদের উপর নয়। অতঃপর তিনি হাত দিয়ে আকাশের যে দিকে ইশারা করলেন, সে দিকের মেঘ কেটে গেল। এতে সমগ্র মদীনার আকাশ মেঘ মুক্ত হয়ে গেল এবং কানাত উপত্যকায় এক মাস ধরে বৃষ্টি প্রবাহিত হতে থাকে। বর্ণনাকারী বলেন, তখন যে এলাকা হতে লোক আসত, কেবল এ প্রবল বর্ষণের কথাই বলাবলি করত। (বুখারি-১০৩৩)

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এ দৃষ্টান্ত থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়ার তৌফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : আলোচক ও সাংবাদিক  

এনএ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ