শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪ ।। ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ ।। ৯ জিলকদ ১৪৪৫


ধর্ম-কড়চা ও ধর্ম-চর্চার দালিলিক বয়ান

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ফাইল ছবি

।।সাইমুম রিদা।।

গভীর অনুভূতি ও নিখাদ বিশ্বাসের নাম ধর্ম। পৃথিবীতে বহু ধর্ম যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে ধর্মের বহুমাত্রিক ব্যাখ্যা। ধর্মীয় বিশ্বাস মানুষকে আত্মিক শক্তি যোগায়, দেয় পরম তৃপ্তি। কোনো বিষয় যখন যুক্তি-প্রমাণ দ্বারা প্রতিষ্ঠা লাভ করে তখন তা কেবলই বিশ্বাস নয়, হয়ে উঠে জ্ঞান। আর যুক্তি-প্রমাণের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণে আহরিত বিশেষ জ্ঞানই হলো বিজ্ঞান। তবে বিশ্বাস এক যুক্তিহীন প্রত্যয়, যা জ্ঞান-বিজ্ঞানের ধার ধারে না।

এজন্য জ্ঞান-বিজ্ঞান দ্বারা বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠা করতে চাওয়া একধরনের মূর্খতা। মৃত্যুপরবর্তী জীবনের বিষয়টি বেশির ভাগ মানুষ মানলেও তা নিয়ে খুব একটা ভাবেন না। জাগতিক লাভালাভই তাদের কাছে মুখ্য হয়ে ওঠে। আর সেই লাভালাভকে উপজীব্য করেই ধর্মবিশ্বাস ও ধর্মচর্চা যে কীভাবে মানুষের উভয় জীবনকে প্রভাবিত ও সার্থক করতে পারে- সেই বিষয়গুলো যুক্তিযুক্তভাবে তুলে ধরা হয়েছে ‘ধর্ম-কড়চা ধর্ম-চর্চা’ বইটিতে। 

সাহিত্যের নানা শাখায় অনিরুদ্ধ বুলবুল এর অনেক লেখালেখি থাকলেও ধর্মীয় বিষয়ে এটাই তার প্রথম বই। বইটি লেখার উদ্দেশ্য বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি লিখেছেন- ‘ধর্মবিষয়ক যেকোনো জ্ঞানগর্ভ আলোচনা বা রচনা আমার মতো মূর্খলোকের জন্যে স্পর্ধা বিশেষ। অথচ যে বিষয়টি নিয়ে লিখছি তা নিয়ে অনেক জ্ঞানী-গুণী বিদগ্ধজন প্রচুর ভালো কিছু লিখেছেন।

কিন্তু ধর্মকর্মের গুরুত্ব ও উপকারিতা নিয়ে সাদামাটাভাবে সাধারণের ভাবনাকে উসকে দেওয়ার মতো কিছু (থাকতে পারে) আমি পাইনি। ধর্মকর্ম বিষয়ে অতীতে আমার পর্যবেক্ষণ এবং অর্জিত জ্ঞান ও বোধ থেকে নামাজ-রোজা তথা ধর্মকর্ম করাকে দায়-ঠেকা কাজ এবং কঠিন বলেই মনে হয়েছে আমার। কেননা সেখানে ভালোবাসাবোধের সংযোগ ছিল না। আর ভালোবাসাবোধ থেকে উৎসারিত না হলে কোনো কাজেই যেমন যথার্থ আন্তরিকতা থাকে না তেমনি সে কাজে আগ্রহও কম থাকে, তাই সুন্দর আর পরিপূর্ণও হয় না।’


লেখক ১৩টি অধ্যায়ে বইটি সাজিয়েছেন। প্রথম অধ্যায়ে গ্রন্থ প্রয়াসের নেপথ্যকথা তুলে ধরেছেন হৃদয়গ্রাহী ভাষায়। অন্যান্য অধ্যায়ে স্থান পেয়েছে- মানবজীবনে ধর্মবোধ ও তার প্রভাব, মানবজীবনে ধর্মের উপযোগিতা, মানবসভ্যতায় ধর্মের ইতিবৃত্ত, প্রচলিত প্রধান ধর্মমত নিয়ে আলোচনা, ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে আলোচনা, নামাজ কী এবং কেন?, নামাজের জাগতিক ও বাস্তব উপকারিতা, শুভযাত্রা, নামাজ শুরু করা, নামাজ চর্চার গুরুত্ব, কুরআনের ভাষা ও অনুবাদ সম্পর্কিত তথ্য ইত্যাদি তুলে ধরেছেন। আর পরিশিষ্টে শেষ কৈফিয়ত এবং বাংলা ভাষায় মিশে থাকা বহুল চর্চিত আরবি শব্দের একটি তালিকা তুলে ধরেছেন। 


বইটিতে লেখক তাত্ত্বিক ও দালিলিক আলোচনা করেছেন। জটিল বিষয়কে সহজ করে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। ভাষার পাণ্ডিত্যপূর্ণ কারুকাজ বইটিকে করে তুলেছে সুখপাঠ্য। তিনি ‘ধর্মীয় বিষয়ে পণ্ডিত নন’সেই কথা অকপটে স্বীকার করেও যথেষ্ট সতর্কতার সঙ্গে দরকারি বিষয়ে কলম ধরেছেন, যা পাঠককে অনেক প্রশ্নের সহজ সমাধান দেবে।

শুরুতে তিনজন বিদগ্ধ আলেমের মতামত যুক্ত করা হয়েছে। তারা পাণ্ডুলিপি সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ, সংশোধন ও পরিমার্জনের মতো কাজটি করে দেওয়ায় বইটির গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে দিয়েছে। ধর্মানুরাগী কিংবা ধর্মকর্ম সম্পর্কে উদাসীন যে কারও জন্য বইটি হতে পারে অনন্য পাথেয়। 


অর্ক প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বইটির পরিবেশক ৩৮ বাংলাবাজারের (দোতলা) অনুভব প্রকাশনী। কেনা যাবে বাংলাবাজারের দারুল উলুম লাইব্রেরি, বায়তুল মোকাররমের হাবিবিয়া বুক ডিপো, মিরপুর ১ নম্বরের দারুর রশিদ প্রকাশনীসহ দেশের বিভিন্ন অভিজাত লাইব্রেরি ও পুস্তক বিপণি থেকে। এছাড়া অনলাইনে সংগ্রহ করা যাবে রকমারি ডটকম, ওয়াফি লাইফ ডটকম, কিতাবঘর ডটকম, বইফেরি ডটকম ও মোল্লার বই থেকে। সাদা কাগজে ছাপা, ঝকঝকে প্রচ্ছদে মোড়ানো ১৯২ পৃষ্ঠার বইটির গায়ের মূল্য ৩৫০ টাকা।

এনএ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ