বিশেষ প্রতিনিধি
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নতুন এক বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মূল স্পিরিটই ছিল বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়া। ইতোমধ্যে ফ্যাসিস্টমুক্ত বাংলাদেশে ৯ মাস অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু আজও ইসলামপন্থীরা পদে পদে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠছে। বছরের পর বছর ধরে যাদের দমিয়ে রাখা হয়েছে, নিজেদের প্রাপ্যটুকু বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি, তারা আজও বঞ্চিত হচ্ছেন।
সবশেষ রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক কাঠামো সংস্কারে নাগরিক উদ্যোগ ‘নাগরিক কোয়ালিশন’ নিয়ে বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে জোরালোভাবে। গতকাল রোববার (১১ মে) সংবিধান সংশোধন প্রস্তাবনা নিয়ে এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে প্রায় সব দল, বিভিন্ন ক্যাটাগরি থেকে বাছাই করা অতিথিরা ছিলেন। কিন্তু এতে কোনো ইসলামি সংগঠন বা আলেম প্রতিনিধিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। বিষয়টি চোখে পড়ার মতো এবং এটা নিয়ে দিনভর অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
ইসলামপন্থীদের বঞ্চনার ইতিহাস অনেক দীর্ঘ। বাংলাদেশের সূচনাকাল থেকেই নিজেদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন আলেম-উলামা, মাদরাসাপড়ুয়া তথা ইসলামপন্থীরা। সমাজের তথাকথিত এলিট শ্রেণি কখনোই তাদের প্রাপ্যটুকু বুঝে পাওয়ার সুযোগ দেয়নি। সবখানেই তাদের দমিয়ে রাখা হয়েছে। যুগের পর যুগ ধরে তাদের সবকিছু থেকে সরিয়ে রাখার ফলে একটা সময় জনমনে ধারণা সৃষ্টি হয়েছে- তারা বোধহয় এটার যোগ্য নয়।
৫ আগস্টের পরিবর্তনের মূল আকাঙ্ক্ষা ছিল বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ। এর মূল স্পিরিটই হলো, কাউকে অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হবে না। কিন্তু গত ৯ মাসে ইসলামপন্থীরা কি তাদের অধিকার বুঝে পেয়েছে? তাদের যেভাবে দীর্ঘকাল ধরে বঞ্চিত করা হয়েছে সেই তুলনায় কি তাদের কোথাও সেই পরিমাণ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে? জোর গলায় কেউ বলতে পারবে না, ইসলামপন্থীরা তাদের যথাযথ অধিকার ফিরে পেয়েছে।
বাংলাদেশের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে আগের প্রায় দেড় দুই যুগের তুলনায় আলেম-উলামা ও মাদরাসাপড়ুয়ারা কিছুটা গুরুত্ব পাচ্ছে সেটা সত্য। কিন্তু এটা কি যথেষ্ট। তাদের প্রতি যে অবিচার করা হয়েছে সেই তুলনায় এই সামান্য প্রাপ্তি তো কিছুই না। রাষ্ট্র ও সমাজের আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তাদের অংশীদারিত্ব থাকার কথা ছিল। কিন্তু সেই এলিট শ্রেণি আজও রাষ্ট্রযন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করছে। সমাজের গতিবিধি সেই তাদের হাতেই। ফলে আলেম-উলামার প্রবেশাধিকার অনেক জায়গায় নিশ্চিত হয়নি।
উপেক্ষা, বঞ্চনা ও অবহেলার যে খেদ ও ক্ষোভ ইসলামপন্থীদের মধ্যে জন্ম নিয়েছে সেটা অযৌক্তিক নয়। ‘নাগরিক কোয়ালিশন’-এ আলেমরা ডাক পাননি, সেজন্য ক্ষোভ এটা প্রতীকী প্রতিবাদ মাত্র। মূলত নতুন এই বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে সবশেষ ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবির আন্দোলন পর্যন্ত সবখানেই আলেমদের সরব উপস্থিতি ছিল। স্বাভাবিকভাবেই তারা আশা করছেন, তাদের সঙ্গে অতীতের মতো বিমাতাসুলভ আচরণ করা হবে না। কিন্তু আজও যখন তাদের প্রতি সেই বৈষম্য, সেই বিমাতাসুলভ আচরণ হয় তখন তো কষ্টটা একটু বেশিই হওয়ার কথা।
নিজেদের অধিকার ও প্রাপ্যটুকু বুঝে পাওয়ার জন্য ইসলামপন্থীদের আরও বেশি সোচ্চার হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। অধিকার কেউ কাউকে দেয় না, আদায় করে নিতে হয়। ইসলামপন্থীদেরও উচিত, নতুন বাংলাদেশে প্রতি ইঞ্চি জায়গার অধিকার নিশ্চিত করা। ভাড়াটিয়া নয়, নিজেরাও মালিক সেই অনুভূতি নিজেদের মধ্যে জাগ্রত করা।
আরএইচ/