বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪ ।। ২১ কার্তিক ১৪৩১ ।। ৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


দেওবন্দের নেসাবে তালীম, শরহে জামী জামাত ও স্বীকৃতি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| মুফতী তাওহীদ আদনান ইয়াকুব ||

আমরা বাঙ্গালী হুজুগে জাতি। নানা পদ্ধতিতে আলোচনায় আসার অদম্য স্পৃহা আমাদের চিরাচরিত মজ্জাগত বিষয়। কেউ তো ভালো কাজ করে আলোচিত হয়ে ওঠেন নিজের অজান্তেই। আর কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে আলোচনায় আসতে যাচ্ছে তাই বলে যান। এটাই আমাদের স্বভাব।

সম্প্রতি জামিয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়ার মুহতারাম শায়েখ আবদুল গাফফার সাহেবের হৃদয় নিংড়ানো কিছু দরদমাখা কথা ব্যাপক আলোচনায় এসেছে। হুজুর কথাগুলো মোটেও আলোচনায় আসার জন্য বলেননি বলেই আমার দৃঢ় বিশ্বাস। কথাগুলোর মাঝে সীমাহীন দরদ ও আবেগ থাকায় আলোচনায় এসে যায়।

দরদমাথা কথা, হৃদয় নিংড়ানো আবেগ অবশ্যই আলোচনায় আসা উচিত। কারণ, এটা স্বার্থহীন আবেগ ও ভালোবাসা। কিন্তু বিপত্তি ঘটে এর পরেই। কারো নিঃস্বার্থ আবেগ অনুভূতি আলোচনায় চলে এলেই এবার শুরু হয় নতুন কেউ তা পুঁজি করে তার বিপরীতে গা ভাসিয়ে আলোচনায় আসার ব্যর্থ কসরত। ফলে তিনি বলে যান যাচ্ছে তাই। নিজের অযৌক্তিক কথাকেই মনে করেন যুক্তির মানদণ্ডে উত্তীর্ণ।

হুজুরের কথাগুলো আলোচনায় আসার পরপরই দেখলাম কেউ কেউ হুজুরের কথাকে খণ্ডন করতে উঠে পড়ে লেগেছেন। সেই খণ্ডনগুলো দেখে স্পষ্টভাবে মনে হলো, তা মোটেও খণ্ডন নয় বরং ঐচ্ছিকভাবে আলোচনায় আসার ব্যর্থ প্রয়াস। নতুবা খণ্ডনগুলোর মাঝে মোটেও কোনো অযৌক্তিকতা থাকতো না; থাকতো দরদ। সামান্য পরিমাণ অসত্য তথ্যও থাকতো না; থাকতো সত্যের মিশ্রণে যৌক্তিক দাবী।

হুজুরের কথার জবাবে আসা খণ্ডনগুলো দেখে মর্মাহত হলাম। ভাবলাম এই খণ্ডনের জবাব লিখবো এবং লিখতেই হবে। কারণ, খণ্ডনগুলোর মাঝে রয়েছে স্পষ্ট কিছু অসত্যের প্রলেপ; যা একজন আলেমে দ্বীনের জন্য মোটেও শোভনীয় নয়, তাও আবার তা অপর একজন আলেমে দ্বীনকে ঘায়েল করার জন্য। সুতারং তা আরো কঠিনভাবে অশোভনীয়।

তো বিবেকের দংশনে ভাবতেছিলাম হুজুরের কথার খণ্ডনগুলো খণ্ডন করতে কিছু যৌক্তিক কথা লিখবো। এর মধ্যেই নজরে এলো তাবছেরা দর তাবছেরা। মানে খণ্ডন এসে গেছে। তাই আর বিস্তারিত লিখতে প্রয়োজনবোধ করলাম না। বরং শুধু একটি পয়েন্ট তথা স্বীকৃতি ও দেওবন্দের নেসাব নিয়ে দু'চার কথা আরজ করতে চাই।

তবে আরজ করার আগে জুমলায়ে মুতারিজা হিসেবে বলে নেওয়া ভালো, বান্দা শরীয়তপুরের ঐতিহ্যবাহী ইলমী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নশাসন কাওমিয়া ইসলামিয়া মাদরাসায় মুহাদ্দিস হিসেবে খেদমত আঞ্জাম দিচ্ছি আলহামদুলিল্লাহ। অধমের তাকসীমে গুরুত্বপূর্ণ একাধিক কিতাবের সঙ্গে রয়েছে আবু দাউদ মুকাম্মাল।

আর মানতেকের কিতাব প্রসঙ্গে বলতে হয়, বান্দা আল্লাহর রহমতে কুতবী, সুল্লাম, শরহে তাহযীব ও মাইবুযী ইত্যাদি সবগুলো কিতাবই পড়েছি আলহামদুলিল্লাহ। এমনকি বাংলাদেশ থেকে জালালাইন সমাপ্ত করে গিয়ে দারুল উলুম দেওবন্দে মওকুফ আলাইহি হিসেবে মাইবুযী  (এবং অন্যান্য কিতাব) পরীক্ষা দিয়ে মেশকাতে জামাতে কৃতিত্বের সঙ্গে ভর্তিও হয়ে পর্যায়ক্রমে দাওরা সমাপ্ত করেছি আলহামদুলিল্লাহ।

এবার আসা যাক মূল প্রসঙ্গে। যিনি খণ্ডনগুলো লিখেছেন হুজুরের কথার, তিনি খণ্ডনের মাঝে শরহে জামী জামাত প্রসঙ্গে দেওবন্দের নেসাব ও স্বীকৃতির প্রসঙ্গ টেনে বলেছেন যে, স্বীকৃতি যেহেতু দেওবন্দের আদলে আর দেওবন্দে কাফিয়া ও শরহে বেকায়ার মাঝে একটি অতিরিক্ত জামাত রয়েছে তাই বাংলাদেশেও এবার খোলা হয়েছে নতুন জামাত।

কথাটি সম্পূর্ণ অসত্য। পাঠকের সুবিধার্থে দেওবন্দের নেসাব যুক্ত করে দেওয়া হলো। দেওবন্দে কাফিয়া যে জামাতে পড়ানো হয় তার নাম জামাতে سوم তথা তৃতীয় বর্ষ। আর শরহে বেকায়া যে জামাতে পড়ানো হয় তার নাম چہارم তথা চতুর্থ বর্ষ। তাহলে তৃতীয় ও চতুর্থের মাঝে অতিরিক্ত জামাতটা কোথায়?

পাঠক জেনে অবাক হবেন, দেওবন্দে শরহে জামী জামাত তো নেই-ই এমনকি শরহে জামী কিতাবটিও নেই পাঠ্য তালিকায়। এবার ভাবুন তিনি কোন যুক্তিতে হুজুরের কথার খণ্ডন করে দেওবন্দে শরহে জামী জামাতের অসত্য তথ্য পেশ করলেন?

আর তিনি যেহেতু দেওবন্দের স্বীকৃতির প্রসঙ্গ টেনেছেনই তাই তার কাছে আমার কিছু আরজ, দেওবন্দে তো কিতাব বিভাগ প্রথম জামাত থেকে দাওরায়ে হাদিস পর্যন্ত আট বৎসরের নেসাব। তিনি এ নেসাব বাস্তবায়নের জন্য কোনো ভূমিকা পালন করতে বলবেন মুরব্বীদের? তাহলে না হয় বুঝতাম যে, না বাংলাদেশের স্বীকৃতি দেওবন্দের আদলেই হয়েছে।

দ্বিতীয় আরজ, দেওবন্দের স্বীকৃতির কথা যেহেতু আসলোই, তাই বলতে চাই, তিনি কি একটু বলবেন যে, দেওবন্দের দাওরায়ে হাদীসকে ফযীলত বলা হলেও বাংলাদেশের দাওরায়ে হাদীস কিভাবে মাস্টার্স হয়ে গেলো? এ ক্ষেত্রে দেওবন্দের আদলে স্বীকৃতির বাস্তবায়নে তিনি বা তারা কী ভূমিকা পালন করবেন?

সর্বশেষ আরজ, দেওবন্দের আদলেই যেহেতু স্বীকৃতি, তাহলে তিনি কি কষ্ট করে দেওবন্দের স্বীকৃতির মান ও গুরুত্ব সম্পর্কে একটু বিস্তারিত আলোকপাত করবেন? যেনো আমাদের কাছে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায় যে, দেওবন্দের আদলেই আমাদের স্বীকৃতি!

পরিশেষে পাঠক মহলকে বলতে চাই, দেওবন্দের নেসাব সম্পর্কে আরো গভীরভাবে ফিকির করুন তারপর দেওবন্দের আদলে স্বীকৃতি হয়েছে কি না তা বিবেচনা করুন। দেওবন্দের নেসাব সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পড়ুন আওয়ার ইসলাম ঈদ সংখ্যা ২০২৩।

লেখক: ফাজেলে দারুল উলুম দেওবন্দ ও নদওয়াতুল উলামা লাখনৌ, ভারত; মুহাদ্দিস, আল-মাদরাসাতুল ইসলামিয়্যাহ আল-ক্বওমিয়্যাহ শরীয়তপুর

কেএল/


সম্পর্কিত খবর