ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্মমহাসচিব ও দলের মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান আজ ৩ মে’২০২৫ তারিখে সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এক বিবৃতিতে বলেছেন, স্বাধীনতার পরে যে রাজনৈতিক বন্দোবস্ত চলেছে তা বারংবার জাতিকে স্বৈরতন্ত্রের কবলে ফেলেছে। সর্বশেষ শেখ হাসিনার স্বৈরতন্ত্রে অতিষ্ঠ ছাত্র-জনতা রক্তের বিনিময়ে স্বৈরাচার উৎখাত করেছে। এবং সমগ্র দেশ এই বিষয়ে একমত যে, মৌলিক সংস্কারের মাধ্যমে রাষ্ট্রকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যাতে করে আগামী আর কোন স্বৈরতন্ত্র জন্ম নিতে না পারে।
কিন্তু জনাব সালাহউদ্দিন আহমেদের বক্তব্যে তার ও বিএনপির যে চিন্তা প্রকাশ পেয়েছে তা হতাশাজনক। এটা জাতিকে শঙ্কিত করেছে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুখপাত্র বলেন, এতবড় ও নৃশংস গণহত্যার পরে আওয়ামী লীগের কোন পর্যায়ের কোন নেতা সামান্যতম অনুশোচনা করে নাই। দুঃখ প্রকাশ করে নাই। কেউ এখন পর্যন্ত ক্ষমাও চায় নাই। গণহত্যা করেও তাদের দিক থেকে কোন অনুতাপ নাই অথচ তাদেরকে রাজনীতিতে জায়গা করে দেয়ার জন্য “ন্যাশনাল রিকনসিলিয়েশন কমিশন” এর ধারণাকে সামনে নিয়ে আসার স্পষ্ট অপচেষ্টা দেখা যাচ্ছে।
মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোতে গণতান্ত্রিক চর্চা না থাকার কারণে দলীয় প্রধানরা দলে সর্বময় কর্তা হয়ে ওঠেন। দল সরকার গঠন করলে তিনিই প্রধানমন্ত্রী হন। এবং সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীকেও সর্বময় ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রধান রাস্তাই হলো এটা। বিদ্যমান এই বন্দোবস্ত ব্যবহার করেই বাংলাদেশে নির্বাচিত স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ গোটা জাতি এই বন্দোবস্ত পরিবর্তনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সেজন্যই একক ব্যক্তি দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হওয়া, দলীয় প্রধান ও রাষ্ট্রপ্রধান একক ব্যক্তি না হওয়াসহ রাষ্ট্র ক্ষমতায় ভারসাম্য আনার জন্য রাষ্ট্রপতিতে ক্ষমাতায়িত করার প্রস্তাব সকল মহল থেকে করা হয়েছে। অথচ বিএনপি নিজ দলের ভেতরে গণতন্ত্র চর্চা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে একই সাথে রাষ্ট্রসংস্কারের এই মৌলিক জায়গাতেও দ্বিমত পোষণ করে আসছে। এটা “পটেনশিয়াল ফ্যাসিজম” এর আশংকা তৈরি করে জাতির মধ্যে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশে যুগ্মমহাসচিব বলেন, বাংলাদেশে ৪০ থেকে ৪৮ শতাংশ ভোট নিয়ে সংসদে দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সংবিধান সংশোধনসহ রাষ্ট্রের মৌলিক পরিবর্তন করেছে। এরমানে হলে, ৬০ থেকে ৫২ শতাংশ মানুষের মতামত আদতে উপেক্ষিত হয়েছে। এটা না গণতন্ত্র হয় না ইনসাফ হয়। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এই অন্যায্য প্রতিরোধ করতে পিআর পদ্ধতির নির্বাচন ব্যবস্থার প্রস্তাব করে আসছে। বিএনপি বারংবার এর বিরোধিতা করছে। জনাব সালাহউদ্দিন সাহেবও এর বিরোধিতা করছেন। রক্তক্ষয়ী একটা বিপ্লবের পরেও দেশের অধিকাংশ মানুষের মতামত রাষ্ট্র পরিচালনায় উপেক্ষিত হবে এটা মেনে নেয়া যায় না।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুখপাত্র বলেন, সংস্কার প্রশ্নে বিএনপির অবস্থান ২৪ এর অভ্যুত্থানের চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক বলে আমাদের কাছে মনে হচ্ছে। জনতা কেবল হাসিনাকে উৎখাত করতেই রক্ত দেয় নাই বরং স্বৈরতন্ত্র উৎখাতে জীবন উৎসর্গ করেছে। আর দেশ থেকে স্থায়ীভাবে স্বৈরতন্ত্র উৎখাত করতে হলে রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার নিশ্চিত করতেই হবে। আর সেজন্য বিএনপির সমর্থন জাতি আশা করে। কিন্তু বিএনপি নেতৃবৃন্দের বক্তব্য বিশেষ করে আজ প্রকাশিত জনাব সালাহউদ্দিন আহমেদের বক্তব্য জাতিকে হতাশ করেছে। আমরা বিএনপির নেতৃবৃন্দের প্রতি আহবান করবো, জনতার আবেগ-অনুভূতি ও প্রতিজ্ঞার প্রতি সন্মান প্রদর্শন করে স্বৈরতন্ত্রের বীজ অংকুরেই ধ্বংশ করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার বিএনপি সমর্থন করবে এটাই জাতি প্রত্যাশা করে।
এসএকে/