সোমবার, ০৫ মে ২০২৫ ।। ২২ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ৭ জিলকদ ১৪৪৬

শিরোনাম :
ধর্ম উপদেষ্টার সঙ্গে হাইআতুল উলয়ার প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎ লাল কেল্লার মালিকানা চেয়ে মোগল সম্রাটের ‘বংশধরের’ দাবি খারিজ ‘জুলাই অভ্যুত্থানের সেনানীদের ভীত-সন্ত্রস্ত করার হীন অপচেষ্টা রুখে দিতে হবে’ শাপলায় শহীদদের স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট প্রকাশের দাবি ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের রুদ্ধদ্বার বৈঠক আজ ৫ই মে ঐতিহাসিক গণহত্যা দিবস: আমাদের চোখ খুলবে কবে? স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ ‘২৫ মার্চের কালরাতকেও হার মানিয়েছে শাপলা চত্বরের গণহত্যা’ কসবা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি যুবক নিহত প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দিতে হবে : স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশন

অডিও বার্তায় দেওবন্দকে হুমকি; পুরনো আগুনে নতুন ঘি ঢাললেন আবদুল্লাহ মনসুর

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপে কাকরাইল তাবলিগ মারকাজের মুকিম মাওলানা আবদুল্লাহ মনসুরের একটি অডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়েছে।

যেখানে কাকরাইলের এই মুকিম ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামিম অল্লামা আবুল কাসেম নোমানী এবং মুহাদ্দিস ও জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের চেয়ারম্যান আল্লামা আরশাদ মাদানির কড়া সমালোচনা করেন।

অডিও ক্লিপে আবদুল্লাহ মনসুর মাওলানা সাদ ইস্যুতে চলমান সঙ্কটকে দারুল উলুম দেওবন্দের কারসাজি বলেও ধৃষ্টতা দেখান। আর মাওলানা সাদকে রক্ষা করা না গেলে তাবলিগের কাজ ধ্বংস হয়ে যাবে বলেও দাবি করেন।

আবদুল্লাহ মনসুর এর আগেও নানা বিতর্কে জড়িয়েছেন। মাওলানা সাদ ইস্যুকে কেন্দ্র করে বই লিখে ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে তওবা করেন। নিজের ভুল ও গোড়ামির জন্য কাকরাইলর মারকাজে কয়েকবার পিটুনিরও শিকার হয়েছেন।

এমন সব কর্ম করেও তিনি বিভিন্ন আলেমের দরবারে গিয়ে ক্ষমা চাইলে সৎ পথে ফিরে আসবেন মনে করে আলেমরা তার ব্যাপারে কিছুটা নমনীয় হন। কিন্তু তিনি সেই নমনীয়তাকেই যেন আরেকবার কাজে লাগালেন।

গত দুইদিনে অসংখ্য পাঠক আওয়ার ইসলামকে মেইল ও ফোনে অনুরোধ করেন আবদুল্লাহ মনসুরের অডিও ক্লিপটি যাচাই করার জন্য। পাঠকের অনুরোধে তদন্দ করতে নেমে আওয়ার ইসলাম তার সত্যতা পেয়েছে।

মজার ব্যাপার হলো, আবদুল্লাহ মনসুর এবারও ভুল করে পূর্বের মতোই ক্ষমা চেয়েছেন। মন্তব্যকারীদের অভিমত- তিনি এ কাজেরই একজন দক্ষ খেলোয়ার।

অডিও ক্লিপে আবদুল্লাহ মনসুর বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ থেকে বলছি এবং আমি দারুল উলুম দেওবন্দের প্রাক্তন ছাত্র। আমার আওয়াজ যারা শুনছেন, তারা অনুগ্রহ করে এই আওয়াজ মাওলানা আরশাদ মাদানি এবং দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামিমের কান পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, হজরত! আপনি যে অরাজকতা সৃষ্টি করে রেখেছেন, তা আসলাফদের সমস্ত অর্জনকে ধুলোয় মিশিয়ে পা দিয়ে মাড়ানো হচ্ছে। যার ফলে দারুল উলুম দেওবন্দের অতুলনীয় ক্ষতি হচ্ছে।

আপনারা মাওলানা সাদ সাহবেকে যেই পরিমাণ অপমান করেছেন এবং করার চেষ্টা করেছেন তারচে অধিক অপমানে দারুল উলুম দেওবন্দ নিপতিত।

খুব তাড়াতাড়ি আপনারা আপানাদের এই অবস্থান থেকে ফিরে আসুন এবং দারুল উলুম দেওবন্দকে অপমান থেকে রক্ষার জন্য ভূমিকা নিন। অন্যথায় দারুল উলুম দেওবন্দের মুহিব্বিন ও ফারেগিন আপনাদের ছাড়বে না।

তার চেয়ে বড় কথা যে আল্লাহ দারুল উলুম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠা করেছেন সে আল্লাহও আপনাদের ছাড়বেন না। আপনারা যা করেছেন তা খুব, খুব, খুবই খারাপ করেছেন। আপনারা যা করেছেন মাওলানা সাদের সে পরিমাণ অপরাধ ছিলো না।

আর আপনারা ‘রুজুনামা’ নিয়ে খেল শুরু করে দিয়েছেন। ঘোষণার পূর্বে  কেন বলেননি যে ছোট মসজিদে রুজু করলে রুজু হবে না! নিজামুদ্দিন মসজিদ ছোট? যেখানে ৮/১০ হাজার মানুষের সমাগম হয়। আর তিনি (মাওলানা সাদ) এশার নামাজের পর ঘোষণা করেছেন। আর মাওলানা আরশাদ মাদানি বলে দিলেন, তিনি ফজরের পর দুই তিন শ মানুষের সামনে এ’লান করেছেন! মিথ্যা কথাও বলে দেন!  মিথ্যা কথাও বলে দেন!! লজ্জা করেনা?

আর বাংলাদেশে প্রায় আট দশ হাজার মানুষের মজমা ছিলো। সেটাকেও ছোট মজমা বলে দেন! বড় মজমা হওয়ার আপনার কাছে কতো মানুষ চাই?

কারী তৈয়ব সাহেব রহ.কে কীভাবে অপমান করে  দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে বের করে দিয়েছিলেন তা অামাদের সামনের ঘটনা। আর কীভাবে জমিয়তকে দুই টুকরা করেছেন তাও।

এখন পাকিস্তানি মিশন এবং গুজরাতওয়ালাদের ষড়যন্ত্রকে সামনে রেখে তাবলিগকেও দুই টুকরা করতে চান? আর বাংলাদেশ তাবলিগকেও দুই টুকরা করে দিয়েছেন! আল্লাহ আপনাদের হেফাজত করুন।

আমরা এখন মুখ সামলে কথা বলছি। কিন্তু আগামীতে মুখ সামলে কথা বলবো না!  মুখ সামলে কথা বলবো না!

খুব শিগগির উদ্যোগ নিন এবং সমস্ত ফেৎনা দূর করুন। অন্যথায় আল্লাহ ছাড়বেন না।’

ওডিও বার্তাটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হলে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। পরে মাওলানা আবদুল্লাহ ভুল স্বীকার ও ক্ষমা চেয়ে আরেকটি বার্তা দেন। সেখানে তিনি বলেন-

‘আস সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। জি ভাই,  আমার অওয়াজ যারা শুনছেন, গত সময়ে এক এ’লান এবং একটি বিষয় অসতর্কতা বশত আমার থেকে প্রকাশিত হয়ে গেছে। আর তা হলো দেওবন্দের মুহতামিম ও মাওলানা আরশাদ মাদানির নামে একটি আওয়াজ (অডিও বার্তা) পাঠিয়েছিলাম। যা আমার থেকে ভুলে হয়ে গিয়েছে।

আমি আল্লাহর কাছে  এবং তাদের আমার আগের আওয়াজটি পৌঁছে থাকে তাহলে তাদের কাছেও ক্ষমা চাচ্ছি।তারা তো বড় মানুষ। তারা যা করেন তার নেগরান তো আল্লাহই। তাদের ব্যাপারে কিছু বলার অধিকার আমি রাখি না।

আমার যে ভুল হয়ে গিয়েছে আমি আমার ভুল স্বীকার করছি। আল্লাহ তায়ালা আমাকে ক্ষমা  করে দিন। যার কাছে আমার আওয়াজ সর্বপ্রথম পৌঁছে তিনি এটাকে তাদের  পর্যন্ত পৌঁছে দিন এবং আমার ক্ষমার জন্য দোয়া করুন যেন আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করে দেন।

আমি কিছুটা জোশে চলে আসায় আমি নিজ থেকেই একথা বলেছিলাম। কেউ আমাকে একথা বলতে প্ররোচিত করেনি। বরং উম্মত আজ পরস্পরে ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হচ্ছে পরিস্থিতির এই  নাজুকতায় অামি ওই কথা বলে দিয়েছি।এটা অামার ভুল।

আমি এব্যাপারে আমি লজ্জিত। আমি (দেওবন্দের) উভয় হজরতের কাছে আমি আরজ করছি যে হজরত! আমার থেকে ভুল হয়ে গেছে। অামাকে আপনারা ক্ষমা করে দিন।আগের বার্তায় অামার নাম ছিলো না। তাই এখানেও আামার নাম দিচ্ছি না। আমার থেকে আগামীতে ভুল না হয় সে জন্য দোয়া চাই।

আমার ভুলের স্বীকার করছি। এর জন্য আমিই দায়ী। তাদের (বড়দের) বিষয়াদী তাদের মাঝে এবং আল্লাহর মাঝে মীমাংসা হবে। তাদের ব্যাপারে আমার কথা বলা অনুচিত হয়েছে। আগামীতে আমি সতর্ক হওয়ার চেষ্টা করবো।

আমি আবারও দুই শায়েখ  দেওবন্দের মুহতামিম অল্লামা আবুল কাসেম নোমানী ও মুহাদ্দিস এবং জমিয়তের চেয়ারম্যান আল্লামা আরশাদ মাদানির কাছে হাতজোড় করে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। তারা যেন আমাকে ক্ষমা করে দেন।’

অডিও ক্লিপটির ব্যাপারে আওয়ার ইসলামের পক্ষ থেকে মাওলানা আবদুল্লাহ মনসুরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন।

এমন কাজ করলেন? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মাওলানা সাদ সাহেবকে কেন্দ্র করে তারা যে অবাস্তব কথা বলছেন, যে মিথ্যা বলছেন তার প্রতিবাদে আমি এসব করেছি। তারা বলছেন, বাংলাদেশে এক কতল (হত্যা) হয়েছে।  তা কি হয়েছে? হয় নি। অারও অনেক অবাস্তব ও অবান্তর বিষয় তারা বলছেন।  আমি সেটার প্রতিবাদ করেছি।

মিথ্যার প্রতিবাদে হুমকি দিলে আবার বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাইলেন কেন? এর উত্তরে তিনি বলেন, ‘তারা মুরব্বি, তারা বুজুর্গ ব্যক্তি তাই...।

বার বার কেনো আপনার ভুল হচ্ছে? এ প্রশ্নের উত্তরে আবদুল্লাহ মানসুর দেওবন্দের শায়খদের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, হতেই পারে। আমাদের আমির সাহেবকে নিয়ে কেমন খেলা হচ্ছে। কতোবার তিনি রুজু করলেন তারপরও তাকে অপমান অপদস্থ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকেই বাদ করা হচ্ছে। এসব তো উনারাই করাচ্ছেন।  তবে আমি যেহেতু তওবা করেছি তাই এ বিষয়ে আর কোনো ব্যাখ্যা দিতে চাই না।

এ সময় তিনি মাওলানা সাদের নেতৃত্বের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, দীনি কাজের ক্ষেত্রে ব্যক্তি অনেক গুরুত্বপূর্ণ।  আমি মনে করি, তার নেতৃত্ব না থাকলে তাবলিগের কাজ বিকৃত ও বিলীন হবে। আমার সামনে ৩০ থেকে ৫০ বছর ইতিহাস আছে। তা থেকেই আমি বিশ্বাস করি, তাকে রক্ষা করতে না পারলে তাবলিগের কাজ রক্ষা করা যাবে না। তা বিলীন হয়ে যাবে।

তিনি আরও বলেন, আর তিনি আমির থাকবেন কি না সে সিদ্ধান্ত কে দিবে? আমরা তো কাউকে মানতে বলছি না। আমরা নিজেরা তাকে আমির মেনে কাজ করতে চাচ্ছি।

মাওলানা আবদুল্লাহর কাছে সর্বশেষ প্রশ্ন ছিলো, মাওলানা সাদ-এর পক্ষ নিয়ে আপনি নিজেও খুব ভালো নেই বলে জানে। কিন্তু তারপরও সবকিছু উপেক্ষা করে কেনো বার বার এমন করছেন?

এর উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি এটাকে দীনের কাজ মনে করেই করছি। দীনের কাজের জন্য শুধু মার খাওয়া নয়। বরং আমি মরে গেলেও স্বার্থক।’

উল্লেখ্য, এর আগেও কাকরাইলের মুকিম আবদুল্লাহ মনসুর পাকিস্তানের রায়বন্ড ইজতেমার সময় মুরব্বিদের কাছে অনেক আপত্তিকর ম্যাসেজ পাঠান এবং আল ইমারাত হিয়াস সুন্নাহ নামের একটি কিতাব লেখেন যা নিয়ে তীব্র সমালোচনা হয় সব মহলে।

তার ব্যাপারে অভিযোগ আছে তিনি আলেম নন এবং দারুল উলুম দেওবন্দেও তিনি পড়েননি। এসব নিয়ে তার ব্যাপারে তাবলিগের সাথী ও আলেমগণ অভিযোগ আনলে তিনি উল্লেখিত বিষয়ে তওবা করেন। কিন্তু তাকে কতবার ক্ষমা করবেন আলেম ও সচেতন সমাজ সেটাই এখন দেখার বিষয়।

‘কোনো ব্যক্তির জন্য তাবলিগ করিনি, ব্যক্তির জন্য ছাড়বোও না’


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ