বুধবার, ০৭ মে ২০২৫ ।। ২৪ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ৯ জিলকদ ১৪৪৬

শিরোনাম :
সামরিক হামলার নিন্দা জানিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান তারেক রহমানের ভারতকে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা বন্ধ করতে হবে: ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ হজযাত্রীদের সবধরনের সুবিধা দেওয়ার নির্দেশ সৌদি যুবরাজের নারী কমিশন ইসলামিক চিন্তাবিদদের সমন্বয়ে পুনর্গঠন করতে হবে ইসলামী ঐক্যজোটের সঙ্গে সংলাপে বসছে ইসলামী আন্দোলন আইসক্রিম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ভালো? অধিকাংশ সংস্কার প্রস্তাবে ইসলামী আন্দোলনের ঐকমত্য, কয়েকটিতে দ্বিমত কোনো সন্ত্রাসী যেন দেশে প্রবেশ করতে না পারে: আইজিপি পল্টনে কুরআন শিক্ষা বোর্ডের কার্যকরী সদর দফতর উদ্বোধন পরিবারের ১০ সদস্য হারিয়ে বললেন- ‘আমিও যদি সুখী কাফেলায় শরিক হতাম!’

অনলাইনে ইসলাম বিরোধী কন্টেন্ট দেখলে আমাদের করণীয়

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

।।ফারুক ফেরদৌস।।

রসূল সা. বলেছেন, মু’মিন ব্যক্তি মানুষের ভুলত্রুটি নিয়ে কটাক্ষকারী (ট্রলবাজ), অভিসম্পাতকারী, অশ্লীলভাষী ও অভদ্র হতে পারে না। (সুনানে তিরমিযি, আহমাদ) আবু দারদা রা. থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে রসূল সা. বলেছেন, আল্লাহ অশ্লীলভাষী, অভব্য-অভদ্র লোকদের পছন্দ করেন না। (সুনানে তিরমিযি)

অথচ বাংলাদেশী এক শ্রেণীর ইসলামমনা মানুষ যেন অশ্লীলতাকে নিজেদের কর্তব্য ও ইবাদত জ্ঞান করছে আজকাল। কেউ ইসলাম বিরোধী কোনো লেখা বা আপাতদৃষ্টিতে মুসলমানদের বিরোধী মনে হয় এ রকম কিছু লিখে যদি কমেন্টবক্স উন্মুক্ত রাখে, তাহলে তার কমেন্টবক্স অবধারিতভাবে অশ্লীল গালিগালাজে ভরে যায়। এদের গালি গালাজ শুধু ইসলাম বিরোধীদের উদ্দেশেই বর্ষিত হয় না, ভিন্ন মতামত পোষণকারী মুসলমান ভাইরাও তাদের অশ্লীলতার হাত থেকে রেহাই পান না।

তাদের অশ্লীল বাক্যবানে জর্জরিত হন নারী মডেল, অভিনেত্রী, মিডিয়া কর্মী বা চলচ্চিত্র কর্মীরাও। যদিও তারা চলচ্চিত্র-নাটক ইত্যাদি দেখেন না, কিন্তু চলচ্চিত্রকর্মী বা অভিনেত্রীদের ব্যক্তিগত জীবন, তালাক, বিয়ে ইত্যাদি সব বিষয়ে তাদের প্রবল আগ্রহ ও কৌতূহল লক্ষ করা যায়। চলচ্চিত্র বা নাটক যেহেতু দেখেন না, তারা তাদের পেজ ফলো করবেন না এটাই স্বাভাবিক ছিলো। একদিকে তারা খুব আগ্রহের সাথে তাদের ফলো করেন, অন্যদিকে নিয়মিত গালি গালাজ করাকে নিজেদের পবিত্র দায়িত্ব মনে করেন।

অথচ একজন মুসলমানের প্রত্যেকটা কথা সুন্দর হওয়া উচিত, চিন্তা ভাবনা করে বলা উচিত। মুখের কথা মানুষকে জাহান্নামে টেনে নিতে পারে বলে কঠোর সতর্কবাণী এসেছে হাদিসে; মু‘আয রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন আমি নিবেদন করলাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন আমলের কথা বলে দিন, যা আমাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে।’

তিনি বললেন, “তুমি তো কঠিন কাজ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে। তবে এটা তার পক্ষে সহজ হবে, যার জন্য মহান আল্লাহ সহজ করে দেবেন। তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তার সাথে কোনো কিছুকে শরিক করবে না। নামায আদায় করবে, যাকাত দেবে, মাহে রমযানের রোযা পালন করবে এবং কাবা গৃহের হজ পালন করবে।” তিনি আরও বললেন, “তোমাকে কি কল্যাণের দ্বারসমূহের কথা বলে দেব? রোযা ঢাল স্বরূপ, সদকা গুনাহ নিশ্চিহ্ন করে; যেমন পানি আগুনকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়। আর মধ্য রাত্রিতে মানুষের নামায।”

অতঃপর তিনি এই আয়াত দু’টি পড়লেন- যার অর্থ, “তারা শয্যা ত্যাগ করে, আশায় বুক বেধে এবং আশংকায় ভীতি-বিহ্বল হয়ে তাদের প্রতিপালককে আহ্বান করে এবং আমি তাদেরকে যে সব জীবিকা দান করেছি, তা থেকে তারা ব্যয় করে থাকে। তাদের সৎকর্মের পুরস্কার স্বরূপ তাদের জন্য নয়ন-প্রীতিকর যা কিছু গোপন রাখা হয়েছে, কেউ তা অবগত নয়।” (সূরা সেজদা ১৬-১৭ আয়াত) তারপর বললেন, “আমি তোমাকে সব বিষয়ের (দ্বীনের) মস্তক, তার খুঁটি, তার উচ্চতম চূড়ার কথা বলে দেব?” আমি বললাম, ‘অবশ্যই বলে দিন হে আল্লাহর রাসূল!’ তিনি বললেন, “দ্বীনের মস্তক হচ্ছে ইসলাম, তার স্তম্ভ হচ্ছে নামায এবং তার উচ্চতম চূড়া হচ্ছে জিহাদ।” পুনরায় তিনি প্রশ্ন করলেন, “আমি তোমাকে এ সবের মূল সম্বন্ধে বলে দেব?” আমি বললাম, ‘অবশ্যই বলে দিন হে আল্লাহর রাসূল!’ তখন তিনি নিজের জিহ্বা ধরে বললেন, “ এটাকে সংযত রাখ।” মু‘আয বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমরা যে কথা বলি তার হিসাবও কি আমাদের দিতে হবে?’ তিনি বললেন, “হায় মুআয! জিহ্বা-ঘটিত পাপ ছাড়া অন্য কিছু কি তাদের অধোমুখী করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে?”

এই হাদিসটি থেকে বোঝা যায়, কথা বলার ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। রসূল সা. জিহ্বাকে সব কিছুর মূল বলেছেন এবং জিহ্বা-ঘটিত পাপ মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যেতে পারে বলেও কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন। অশ্লীল-অভদ্র-অভব্য ভাষা শয়তানের ভাষা। চরম নেতিবাচক কিছু দেখলেও একজন মুমিনের মুখ থেকে শয়তানের ভাষা বের হতে পারে না। রসূল সা. বলেছেন, যারা আল্লাহ এবং পরকালের ওপর ঈমান রাখে তারা যেন উত্তম কথা বলে অথবা চুপ থাকে। (বুখারী, মুসলিম)

অনলাইনে ইসলাম বিরোধী কন্টেন্ট দেখলে আমরা কী করতে পারি?
অনলাইনে ইসলাম বিদ্বেষ বা মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াচ্ছে এ রকম ছবি ভিডিও বা লেখা দেখলে আমরা প্রথমত ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট করতে পারি। বিদ্বেষী পোস্টে কমেন্ট করে বিশেষ লাভ হয় না। তাতে ওই পোস্টের রিচ বরং বাড়ে। নিজে রিপোর্ট করার পাশাপাশি বন্ধু বান্ধবদের বড় কোনো মেসেজ গ্রুপ বা ক্লোজড গ্রুপ থাকলে সেখানে লিঙ্ক দিয়ে সবাইকে রিপোর্ট করতে বলা যায়। কোনোভাবেই বড় কোনো পাবলিক গ্রুপে বা নিজের ওয়ালে এ সব পোস্টের লিঙ্ক শেয়ার করা উচিত নয়। তাতে এইসব পোস্টের রিচ বাড়ে এবং তারা মূলত এই উদ্দেশেই এ রকম পোস্ট করে।

কেউ যদি যুক্তি দিয়ে ইসলামের কোনো বিধানের সমালোচনা করে এবং বোঝা যায় ব্যাপারটা নিয়ে প্রকৃতপক্ষেই তার মধ্যে ভুল ধারণা বা বিভ্রান্তি আছে, তাহলে তার কমেন্টে দলিল ও যুক্তি দিয়ে বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করা যায়। কারো অপযুক্তিতে মানুষ বিভ্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে সেটা নিয়ে পোস্ট দেওয়া যায়। কিন্তু অশ্লীল গালিগালাজ করে নিজের এবং মুসলমানদের সম্মান নষ্ট করে ইসলামের খেদমত করার ভুল প্রচেষ্টা থেকে সবার বিরত থাকা উচিত।

-কেএল


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ