শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫


‘কম সময়ে তারাবি শেষ করার প্রতিযোগিতা বন্ধ হওয়া দরকার’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| বিন ইয়ামিন || 

রমজান মাসের বিশেষ ইবাদত হলো তারাবিহর নামাজ। প্রিয় নবীজি সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের উদ্দেশ্যে রমজানে তারাবি নামাজ পড়বে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’

আজ পবিত্র রমজানের চতুর্থ তারাবি শেষ হলো। তারাবি মুমিন হৃদয়ে তৃপ্তি  আনে। শুদ্ধ ও শুভ্রতার চাদরে জড়িয়ে নেয় মন। রহমতের এই মাসে প্রেম ও ভক্তির তারাবি রোজাদারের অন্তরকে নতুন আলোয় আলোকিত করে তোলে; বাড়ায় রুহানি শক্তি। মুমিনরা হৃদয়ে অনুভব করেন অপার এক প্রশান্তি, কান্তিময় আভা।

পবিত্র রমজানের বিশেষ নামাজ তারাবি সাধারণত আমাদের দেশের মসজিদগুলোতে হাফেজ সাহেবদের মাধ্যমে পড়ানো হয়। তাই রমজান এলেই হাফেজ সাহেবদের ব্যস্ততা বাড়ে। ‘সুরা তারাবি’র প্রচলন থাকলেও তার সংখ্যা অনেকটা কম। রমজানের ব্যস্তময় অধ্যায় তারাবি বিষয়ে জানতে চেয়েছিলাম বেশ কয়েকজন তারাবির ইমাম হাফেজের কাছে।

রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জামিয়া ইসলামিয়া ফজলুল উলুম ঢাকার সিনিয়র শিক্ষক হাফেজ মাওলানা মুফতী ইসবাত হোসাইন শান্ত। মাদরাসা সংলগ্ন ‘বাইতুল আমান জামে মসজিদে’ দীর্ঘ ১৫ বছর  ধরে সুনামের সাথে তারাবির নামাজ পড়িয়ে আসছেন তিনি। তার তারাবির অভিজ্ঞতা প্রায় দেড় যুগের। দিনে রোজা, রাতে তারাবি আর ভোর রাতের তিলাওয়াতের স্মৃতিগুলো তার হৃদয়ে নাড়া দেয় বারবার।

তিনি বলেন, হাফেজদের জন্য তারাবি অন্যরকম এক ভালোলাগার বিষয়। অনেকেই নানা কারণে তারাবি পড়ান না। আসলে নতুন-পুরনো সব হাফেজেরই তারাবি পড়ানো উচিত। এর মাধ্যমে ‘ইয়াদ’ তাজা থাকে। কুরআনের সঙ্গে হৃদ্যতা বাড়ে। ইসলামের প্রথম সময়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জামাতের সাথে অল্প কিছুদিন তারাবি পড়লেও পরবর্তীতে হেরাগুহায় জিবরাইল আলাইহিস সালামের সাথে তারাবিতে কুরআন দাওর করতেন। মাঝে যদিও কিছুদিন এ জামাত বন্ধ ছিলো কিন্ত পরবর্তীতে সাহাবায়ে কেরাম পুনরায় শুরু করেন। সাহাবাদেরও উদ্দশ্য ছিলো কুরআন দাওর করা।

‘বর্তমানে দেশে হাফেজের সংখ্যা আশা জাগানিয়া। জামে মসজিদগুলোতে সবাই তারাবি পড়ানোর সুযোগ পান না। এটি অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে মসজিদে নামাজ পড়াবার সুযোগ না পেলেও চাইলে তিন-চার জনের একটা জামাত করে কুরআন দাওর করা যায়। ভাগে যে কয় পৃষ্ঠা পড়ুক না কেন, সামগ্রিকভাবে সবার তেলায়াত হয়ে যাবে। তাছাড়া মাদরাসাগুলোতেই হাফেজদের ‘ইয়াদ’ তাজা রাখার জন্য একাধিক তারাবির জামাতের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।’ যুক্ত করেন তিনি

দেশের সীমান্তের জেলা চুয়াডাঙ্গা সদরে এতিমখানা পাড়ার জামে মসজিদের ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করছেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত হাফেজ মাওলানা রইসুল ইসলাম নোমানী। রমজানে এই মসজিদেই তিনি তারাবি পড়িয়ে থাকেন। এর আগে অবশ্য তিনি ঢাকার বিভিন্ন মসজিদে তারাবি নামাজ পড়িয়েছেন। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি তারাবিতে মুসল্লিদের তিলাওয়াত শুনিয়ে থাকেন। রমজানে তারাবির স্মৃতিকথা বলতে গিয়ে অনেকটা আবেগ-আপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি।

তবে তিনি তার কথায় একটি বিষয় তুলে ধরেন। তার মতে, নানা কারণে এখন দুঃখজনকভাবে নতুনদের ‘ইয়াদ’ কম। পরের রাকাতের আয়াত মনে রাখতে পারেন না তারা। পরের রাকাতের আয়াত মনে করার জন্য সেজদায় গিয়ে তাসবিহ না পড়ে আয়াত আওড়াতে থাকেন। ফলে আগ্রহ নিয়ে নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিদের নামাজের শুদ্ধতার ব্যপারে সন্দেহ তৈরি হয়। হাফেজ সাহেবদের উচিত নিজেদের দায়বদ্ধতার ব্যপারে আরো সচেতন হওয়া।

মফস্বলে তারাবি পড়ানোর অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, গ্রাম ও জেলা শহরের মসজিদগুলোতে ইদানিং একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে, ‘কোন মসজিদের আগে কোন মসজিদ নামাজ শেষ করতে পারে। অনেকের তো ধারণা যে মসজিদের নামাজ আগে শেষ হয় সেই মসজিদর হাফেজ সাহেব ততো বেশি অভিজ্ঞ।’ এসব প্রতিযোগিতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

তবে দিন শেষে আনন্দের বিষয় হলো, এসবের মাঝেও ইবাদতে আগ্রহী মানুষের সংখ্যা কম নয়। সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে তারাবিতে এসে প্রভূর পায়ে লুটে পড়ার জন্য অনেকেই উদগ্রীব হয়ে থাকে। তারা মসজিদে এসে আল্লাহ প্রেমে মত্ত হয়। তাছাড়া যুবকদের মাঝে সামনের কাতারে নামাজ আদায় করার আগ্রহ দেখে অভিভূত হই।

রাজধানী ঢাকার ব্যস্ততম এলাকা মতিঝিলের ইডেন জামে মসজিদে তারাবি পড়ান তরুণ আলেম হাফেজ মাওলানা ওমায়ের খান। এই মসজিদে তিনি তারাবি নামাজ পড়ান ৭ বছর ধরে। এই মসজিদে তারাবির স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি জানান, ইন্টারভিউ’র দিনে ইমাম সাহেব আমার তিলাওয়াত শুনেই বলেছিলেন, অন্য কোথাও চেষ্টা করার দরকার নেই। আমাদের এখানেই সারাজীবন তারাবির নামাজ পড়াবেন।’

আসলে কুরআনের তিলাওয়াতে ভিন্ন ধরনের এক আবেগ কাজ করে মুমিন হৃদয়ে। আল্লাহর অশেষ নেয়ামত, আমার তিলাওয়াত মুসল্লিদের হৃদয়ে খুব আবেগ তোলে। তেলাওয়াতের কারণেই আমাকে ইমাম-মুসল্লিসহ মসজিদ কমিটির সবাই মুহাব্বত করেন। অনেকে তো নামাজ শেষে কাছে এসে তাদের আবেগের কথা জানিয়েও থাকেন। আসলে সারাদিনের তিলাওয়াত শেষে তারাবি পড়ানোর পর যখন জানতে পারি আমার তিলাওয়াত মানুষের ইমান তাজা করছে, তখন যে কী অনুভূতি মনে কাজ করে তা বলে বুঝাতে পারবো না।

কেএল/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ