রবিবার, ০৫ মে ২০২৪ ।। ২২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫


ঢাকার জামিয়াতুল উস্তাযে দেশের সর্ববৃহৎ ‘আরবি সাহিত্য বিভাগ’


নিউজ ডেস্ক

নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ফাইল ছবি

।।তানবিরুল হক আবিদ।।

বিশেষ প্রতিবেদক

নতুন শিক্ষাবর্ষে রেকর্ড পরিমাণ ছাত্র নিয়ে আরবি সাহিত্য (আদব) বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে জামিয়াতুল উস্তায শহীদুল্লাহ ফজলুল বারি রহ. ঢাকা। কওমি, আলিয়া, কলেজ মিলিয়ে দেশের প্রায় চল্লিশ জেলা থেকে পাঁচ শতাধিক ছাত্র ভর্তি কার্যক্রম ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন বর্তমান বাংলাদেশে এটিই সর্ববৃহৎ আদব বিভাগ।

রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুরে অবস্থিত শায়েখ শফিকুল ইসলাম ইমদাদী রাহাত কর্তৃক পরিচালিত জামিয়াতুল উস্তায শহীদুল্লাহ ফজলুল বারী রহ. এখন সব বয়সী আরবি ভাষা সাহিত্য পিপাসুদের প্রাণকেন্দ্র। ২০১৭ সালে যাত্রা শুরু করা  প্রতিষ্ঠানটি খুব অল্প সময়ে শিক্ষার্থীদের আস্থা অর্জন করে নিয়েছে।

জানা যায়, গত ১৭ ও ১৮ এপ্রিল আদব বিভাগে ভর্তি কার্যক্রম চলার কথা থাকলেও প্রথম দিন সন্ধ্যায় প্রতিষ্ঠানটি ভর্তি কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দেয়। কারণ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির ভাইস প্রিন্সিপাল মাওলানা আরিফুল ইসলাম জানান, বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর ছাত্রের চাপ অনেক বেশি ছিল। ১৭ তারিখ সন্ধ্যার আগেই প্রায় পাঁচ শতাধিক ছাত্র ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করে। যা ছিল একেবারেই অকল্পনীয়। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত ছাত্রাবাস না থাকায় ১৭ তারিখ সন্ধ্যায় ভর্তি কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর থেকে এখন অব্দি অসংখ্য ছাত্র ও অভিভাবকদের ফোনকল ও মেসেজ আসছে। এ বছর আদব বিভাগের ছাত্র সংখ্যা পাঁচশতাধিক এবং দরসে নেজামিতে প্রায় তিন শতাধিক।

প্রতিষ্ঠানটিতে নতুন ভর্তি হতে আসা জুবায়ের জানান,  গত রমজানে আমি এখানে আদবের কোর্স করেছিলাম। এখানকার পাঠপদ্ধতি, শিক্ষা কারিকুলাম ও  ছাত্রদের পেছনে শিক্ষকমন্ডলীর নিরলস মেহনত আমাকে বিমোহিত করেছে। তখন থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমি এই প্রতিষ্ঠানে আরবি ভাষা সাহিত্য বিভাগে এক বছর পড়াশোনা করব‌। আজ সকালে আমি চট্টগ্রাম থেকে এখানে ভর্তি হতে এসেছি। এখন শুনি ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। আমার অনেক খারাপ লাগছে।

অত্র প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন শিক্ষার্থী শাব্বির আহমাদ আওয়ার ইসলামকে তার অর্জনের কথা জানিয়ে বলেন, আমি এই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার আগে তেমন আরবি বলতে ও লিখতে পারতাম না। আলহামদুলিল্লাহ এখানকার আদব বিভাগে এক বছর মেহনত করার পর আমিসহ আমার সহপাঠিদের নিজেদের লেখা আরবি বই ছাপার অক্ষরে আত্মপ্রকাশ করেছে। এক বছরে আমাদের প্রায় ৪০ টি কিতাব পড়ানো হয়েছে। আধুনিক আরবির সাথে সখ্যতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত প্রজেক্টরের মাধ্যমে আল জাজিরা, স্কাই নিউজের লাইভ খবর ক্লাসে পড়িয়ে দেয়াসহ গুরুত্বপূর্ণ সব ক্লাসের সিট দিয়ে দেয়া হয়েছে। শায়েখ শফিকুল ইসলাম ইমদাদী (মুদির সাহেব হুজুর) শব্দের একাধিক ব্যবহার ও আরবি তাবিরাতের ওপর বিশেষভাবে পাঠদান করিয়েছেন। ছাত্রদের চিন্তার পরিধি প্রসারের জন্য বিভিন্ন সময় দ্বীনিয়াত, দাওয়া প্রশিক্ষণসহ বড় বড় ওলামায়ে কেরামের সোহবতে সুযোগ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে করে দেওয়া হয়েছে। বছরের অধিকাংশ সময় নিয়ম করে নির্দিষ্ট সময়ে আরবি লেখালেখির ওপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করাসহ সৃজনশীল পাঠপদ্ধতি ও উস্তাদের সার্বক্ষণিক নেগরানি করা হয়েছে। এ ধরনের গাইডলাইন ও নেগরানি থাকলে যেকোনো দুর্বল ছাত্র লেখালেখিতে যোগ্য হয়ে উঠতে বাধ্য। 

উল্লেখ্য, জামিয়াতুল উস্তাদ শহীদুল্লাহ ফজলুল বারী রহ. ঢাকার প্রতিষ্ঠাতা শায়েখ শফিকুল ইসলাম ইমদাদী রাহাত এর রচিত ও সংকলিত কিতাব সমূহের মধ্যে সিলসিলাতু মাহারতিল ক্বিরআ ১-১০, তাবির সিরিজ১-৫, মিডিয়া আরবির হাতেখড়ি খুব জনপ্রিয়, প্রসিদ্ধ। 


এই প্রতিষ্ঠানে এক বছর মেয়াদী আদব বিভাগে দুর্বল ও সবল ছাত্রদের জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা তিনটি স্তর।
যথা: 
•মুতাকাদ্দিম: মুমতাজ মানের ফারেগিন ছাত্রদের জন্য, যাদের নাহু সরফের কোন দুর্বলতা নেই। 
•মুতাওয়াসসিত আলিফ: মুমতাজ ও জায়্যেদ জিদ্দান পর্যায়ের ফারেগিন ছাত্রদের জন্য। 
•মুতাওয়াসসিত বা: মধ্যম পর্যায়ের ছাত্র বা গাইরে ফারেগিনদের জন্য। মূলত এই স্তরের উদ্দেশ্য কিতাবি ইস্তিদাদ আর্জন করা।

এছাড়াও সমাজের সর্বস্তরে এই খেদমত আঞ্জাম দিতে শায়েখ শফিকুল ইসলাম ইমদাদী রাহাত হাতে নিয়েছেন বহুমুখী উদ্যোগ। ইমাম খতিব কর্মব্যস্ত মানুষের কথা মাথায় রেখে ব্যবস্থা করেছেন অনলাইন আদব কোর্স। আরবি ভাষার শিক্ষকদের জন্য রয়েছে শিক্ষক প্রশিক্ষণ কোর্স।

টিএইচএ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ