রবিবার, ১৯ মে ২০২৪ ।। ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ ।। ১১ জিলকদ ১৪৪৫


সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সিলেবাসে আধুনিক আরবি ভাষার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু ?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ফাইল ছবি

|| নুর আলম সিদ্দিকী ||

ভাষা হিসেবে আরবি ভাষার গুরুত্ব অপরিসীম। পৃথিবীর প্রাচীনতম ভাষা এটি। বিশ্বের প্রায় ২৮টি দেশের মাতৃভাষা ছাড়াও ২২টি দেশের দ্বিতীয় প্রধান ভাষা।

ধর্মীয় দিক থেকে কুরআন-হাদিস ও অন্যান্য ইসলাম সহায়ক গ্রন্থের মূল ভাষা আরবি। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমিই আরবি ভাষায় কুরআন অবতীর্ণ করেছি। যেন তোমরা উপলব্ধি করতে পারো। (সুরা ইউসুফ: আয়াত ২)।

হযরত ওমর রা. বলেন- ‘তোমরা আরবি ভাষা শেখো। তা তোমাদের দ্বীনের অংশ।’( নাসাবি: ১/৯)।

এ থেকে স্পষ্ট হয় মুসলিম জীবনে আরবি ভাষা কতটুকু গুরুত্ব বহন করে। আরবি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করা অতি প্রয়োজন এবং কর্তব্যও বটে।

এদিকে জাগতিক দিক দিয়ে আরবি ভাষার প্রয়োজনীতাও কম নয়। বিশেষ করে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজারে টিকে থাকার জন্য আরবি ভাষা সিলেবাসের অন্তর্ভূক্ত করা সময়ের দাবি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক  (আরবি বিভাগ)  ড. মো. আব্দুল কাদির বলেন,  ‘বাংলাদেশের রেমিটেন্সের মুল উৎস মধ্যপ্রাচ্য কেন্দ্রিক। অন্যান্য অমুসলিম দেশের নাগরিকেরা মধ্যপ্রাচ্যের মৌখিক ভাষা শুধুমাত্র আরবি শিখে তাদের সাথে মিলে মিশে কথা বলার কারণে তারা শ্রমবাজারের অধিকাংশ জায়গাটা দখল করে আছে। আর মুসলিমপ্রধান বাংলাদেশের নাগরিকদের তাদের অধীনে কাজ করতে হচ্ছে। এর মূল কারণ হচ্ছে বাঙালিরা আরবি ভাষা সম্পর্কে জানে না।

দিতীয়ত: সেখানকার পণ্যের মোড়কগুলোতে আরবি ভাষা লেখা থাকে। আমদের দেশের শ্রমিকদের সে সম্পর্কে ধারণা নেই ‘।

‘তাছাড়া আররিতে দক্ষ ব্যক্তিদের আরবদের ইলেকট্রিক, যান্ত্রিক মিডিয়াগুলোতে নিয়োগ দেওয়া হয়। সেখানে বাঙালিসহ যারা আরবি সম্পর্কে সচেতন নয়, তারা সুবিধা করতে পারে না ‘ –যুক্ত করেন তিনি।

ঢাবি অধ্যাপক আরও বলেন, ‘পার্শ্ববর্তী দেশ শুধু ভারতেই আরবি ভাষা শেখার জন্য মাদরাসায় পড়ালেখা করে প্রায় ১৫ লাখ অমুসলিম শিক্ষার্থী। অথচ আমাদের দেশের মুসলমানের ছেলে মেয়েরাও আরবি শেখে না। আমাদের ছেলেরা মাদরাসায় পড়ে কিন্তু আরবি বলতে পারে না। আসলে আমাদের দেশে ভাষার চর্চা নাই’।

তিনি বলেন, ‘আরবি ভাষাকে আমরা শুধুমাত্র নামাজ রোজার ভাষা হিসেবে ব্যবহার করি কিন্তু শ্রমবাজারে দক্ষ হওয়ার জন্য চেষ্টা আমরা করি না। অথচ অন্যরা এটাকে অর্থনৈতিক ভাষা হিসেবে ব্যবহার করে। অর্থনৈতিকভাবে আমাদের সাফল্য অর্জন করতে হলে আমাদের অবশ্যই আরবি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করতে হব ‘।

এদিকে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ’র প্রচার সম্পাদক মুফতি কেফায়েতুল্লাহ আজহারী বলেন, ‘ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক বিবেচনায় শিক্ষা সিলেবাসে আরবি ভাষা পাঠদান বাধ্যতামুলকের দাবি জানানো হয়েছে শুধুমাত্র ভাষা হিসেবে। আমদের দেশে ইউরোপ-আমেরিকার চেয়ে মধ্যপ্রাচ্য থেকে সব থেকে বেমি রেমিটেন্স আসে এবং সেসব দেশের সাথে উন্নয়নসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে ভালো সম্পর্ক রয়েছে।

এক্ষেত্রে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত অনেক এগিয়ে। কারণ তারা জাগতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ভাষা হিসেবে আরবিটাকে গুরুত্ব দিচ্ছে। যাতে মধ্যপ্রাচ্যে তাদের ভালো একটি অবস্থান তৈরি হয় এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চাকরি করতে পারে। একটি অমুসলিম রাষ্ট্র যদি এরকম চিন্তা করতে পারে তাহলে আমরা (বাংলাদেশ) একটি মুসলিম রাষ্ট্র হয়ে কেন পারবো না!- প্রশ্ন রাখেন তিনি।

মুফতি আজহারী বলেন, ‘আমরা মনে করি, আরবদেশের শ্রম বাজার আমরা (বাংলাদেশ) যতটা ধরতে পারব ততটা সেখান থেকে অনেক বেশি রেমিটেন্স আসবে। এতে দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল হবে।’

তিনি উল্লেখ করেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে ভারতীয় যেসব শ্রমিক কাজ করে তারা আরবি ভাষা এমনভাবে বলতে পারে যেভাবে তারা তাদের মাতৃভাষা হিন্দি-উর্দু বলতে পারে। কারণ তারা আরবি ভাষার ব্যাসিক বিষয়গুলো তাদের দেশে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতষ্ঠিান থেকে অর্জন করেছে।

একারণে তারা অনেক বেশি এ্যাডভান্স। দেশের অর্থনৈতিক চাকা যেন আরো বেশি সচল হয় সেজন্য হেফাজতের পক্ষ থেকে এই দাবিটি করা হয়েছে’।

রাজধানীতে আরবি ভাষা নিয়ে কাজ করছেন শায়েখ মহিউদ্দীন ফারুকী। দেশের শিক্ষার্থীদের আরবি ভাষা শেখাতে প্রতিষ্ঠা করছেন মারকাযুল লুগাতিল আরাবিয়া বাংলদেশ।

আরবি ভাষা শেখার গুরুত্ব সম্পর্কে তিনি বলেন,  ধর্মীয় দিক থেকে আরবি ভাষা শেখার আবশ্যকীয়তা এবং প্রয়োজনীতাবোধ সবাই স্বীকার করেন। কিন্তু ভাষাকে জীবন্ত ভাষা হিসেবে বিবেচনা করা এবং জীবন্ত ভাষা হিসেবে তার সামগ্রীক দক্ষতা বিবেচনায় ভাষা শেখানো বা পাঠদান করানো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ‘।

তিনি বলেন, ‘সেক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাই যে, ভাষা বিজ্ঞানের যে দৃষ্টিভঙ্গি আছে সে অনুযায়ী বাংলাদেশের মাদরাসাগুলোতে পাঠদান করা হয় না। যার দরুন সামগ্রীক যোগ্যতা-দক্ষতা আমাদের শিক্ষার্থীদের মাঝে পাওয়া যায় না। আর সেই অভাবের কারণে সাধারণত আমাদের ছাত্ররা আরবিতে অদক্ষ থেকে যায় এবং পরবর্তীতে তাদের ক্যারিয়ারে যত দিক আছে যেমন চাকরি, সাংবাদিকতা, লেখালেখি ইত্যাদিতে তাদের তেমন উপস্থিতি পাওয়া যায় না।

এর অন্যতম বড় কারণ হচ্ছে আরবি ভাষাকে ভালোভাবে না শেখা। এজন্য “আধুনিক আরবি ভাষা ও যোগাযোগের আরবি ভাষা’’  সিলেবাসে অন্তর্ভূক্ত করা সময়ের দাবি। এর মাধ্যমে ছাত্ররা দেশে-বিদেশে বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করার সুযোগ পাবে ‘

হাআমা/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ