রবিবার, ১৮ মে ২০২৫ ।। ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ ।। ২০ জিলকদ ১৪৪৬


২০ বছর পার, আর কতদিন মহাসচিব থাকবেন আহমদ আব্দুল কাদের?


নিউজ ডেস্ক

নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

বিশেষ প্রতিনিধি

২০০৫ সাল থেকে ২০২৫- টানা ২০ বছর ধরে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব পদে রয়েছেন ড. আহমদ আব্দুল কাদের। তিনি মহাসচিব পদে থাকাকালে ইতোমধ্যে আমির পদে পরিবর্তন এসেছে তিনবার। বর্তমান যিনি আমির তিনি যখন উপজেলা বা জেলা পর্যায়ের নেতা তখন ড. আহমদ আব্দুল কাদের কেন্দ্রীয় মহাসচিব। ইসলামি রাজনীতিতে দীর্ঘকালের অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও একই পদে কেন আহমদ আব্দুল কাদের আটকে আছেন সেই প্রশ্ন উঠছে দলে এবং দলের বাইরে। দলের নেতাকর্মীদের একটা বড় অংশ মনে করেন, তাঁকে আমির অথবা সম্মানজনক কোনো পদে দেওয়া উচিত। কেউ কেউ মনে করেন, তাঁর নিজেরই এখন এই পদ থেকে সরে যাওয়া উচিত। তাঁর ব্যক্তিত্ব, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার সঙ্গে মহাসচিব পদটি আর যায় না। 

ড. আহমদ আব্দুল কাদের দেশের পোড় খাওয়া ইসলামি রাজনীতিবিদদের একজন। প্রায় পাঁচ দশক ধরে ইসলামি রাজনীতির সঙ্গে ওৎপ্রোতভাবে জড়িত। যেসব ব্যক্তিত্ব রাজনীতিতে ইসলাম ও সাধারণ ধারার সমন্বয়ের প্রাণান্ত চেষ্টা করেছেন তাদের একজন আহমদ আব্দুল কাদের। তাঁর রাজনীতির শুরুটা বিগত শতাব্দীর সত্তরের দশকে। ইসলামী ছাত্রশিবিরের মাধ্যমে তিনি রাজনীতি শুরু করেন। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতিও হয়েছিলেন। তবে আদর্শগত বিরোধে জড়িয়ে বেরিয়ে এসে প্রতিষ্ঠা করেন যুবশিবির। 

পরবর্তী সময়ে হাফেজ্জী হুজুরের তওবার রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়ে রাখেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। আশির দশকের গোড়ার দিকে যখন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস প্রতিষ্ঠা লাভ করে তখন এর অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন আহমদ আব্দুল কাদের। মূলত হাফেজ্জী হুজুরের খেলাফত আন্দোলন এবং আহমদ আব্দুল কাদেরের যুবশিবিরের সমন্বয়েই গড়ে ওঠে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। 

মাদরাসায় নিয়মতান্ত্রিক পড়াশোনা করে আলেম না হওয়ায় ড. আহমদ আব্দুল কাদের ঐক্যবদ্ধ খেলাফত মজলিসে সব যোগ্যতা থাকার পরও মহাসচিব হতে পারেননি। খেলাফত মজসিল ভেঙে দুই টুকরো হওয়ার পেছনে এটাও একটি বড় কারণ ছিল। ২০০৫ সালে সংগঠনটি ভেঙে দুই টুকরো হয়ে যাওয়ার পর পৃথক নামে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হয়। শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকের নেতৃত্বাধীন অংশটি বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস এবং অপর অংশটি খেলাফত মজলিস নামে পরিচিতি পায়। খেলাফত মজলিসের প্রথম মহাসচিব নির্বাচিত হন ড. আহমদ আব্দুল কাদের। আর আমির নির্বাচিত হন সাবেক মন্ত্রী এবং প্রবীণ ইসলামি রাজনীতিবিদ অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক।  

২০০৫ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইসহাক এবং ড. আহমদ আব্দুল কাদের বারবার আমির ও মহাসচিব নির্বাচিত হন। অত্যন্ত বয়োবৃদ্ধ হয়ে যাওয়ায় ২০২৩ সালে অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক নিজে থেকেই সরে পড়েন। নতুন আমির নির্বাচিত হন অধ্যাপক মাওলানা যুবায়ের আহমদ চৌধুরী। তবে কয়েক মাস দায়িত্ব পালনের পরই ইন্তেকাল করেন মাওলানা যুবায়ের আহমদ চৌধুরী। নতুন আমির নির্বাচিত হন মাওলানা আব্দুল বাসিত আজাদ। অথচ মাওলানা আজাদ যখন হবিগঞ্জের বানিয়াচং থানা সভাপতি এবং পরবর্তী সময়ে হবিগঞ্জ জেলা সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তখনও আহমদ আব্দুল কাদের কেন্দ্রীয় মহাসচিব এবং দলের অন্যতম প্রধান কান্ডারি।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খেলাফত মজলিস যাত্রার শুরু থেকেই ‘মোল্লা-মিস্টারের’ একটা সূক্ষ্ম দূরত্ব রয়েছে। সেই দূরত্বই বাড়তে বাড়তে একটা সময় সংগঠন বিভাজিত হয়। দল ভাঙার পর শায়খুল হাদিসের নেতৃত্বাধীন অংশে আলেমদের প্রাধান্য থাকলেও অপর অংশে আলেমদের সংখ্যা তুলনামূলক কম। যেহেতু এই অংশে আলেমদের সংখ্যা কম এজন্য খেলাফত মজলিসে একটি অঘোষিত নীতি দাঁড়িয়ে গেছে, যিনি আমির বা সভাপতি হবেন তাকে নিয়মতান্ত্রিক মাওলানা হতে হবে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এটা কোনো লিখিত নীতি না এবং এর ব্যতিক্রম হলেও কোনো বাধা নেই। 

তাহলে প্রশ্ন উঠছে, আহমদ আব্দুল কাদের আমির হতে বাধা কোথায়? তাঁর মতো দীর্ঘ সময় ধরে ইসলামি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত আর কে আছেন? যোগ্যতার বিচারেও তিনি অনেক এগিয়ে। অর্থনীতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স-মাস্টার্স করেছেন। পরবর্তী সময়ে এলএলবি কোর্স সম্পন্ন করেছেন। নিয়েছেন ডক্টরেট ডিগ্রিও। অধ্যাপনা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। নিয়মতান্ত্রিক মাদরাসায় পড়াশোনা না করলেও ইসলামি জ্ঞান অর্জনে তাঁর মধ্যে কোনো কমতি নেই। হাফেজ্জী হুজুর থেকে শুরু করে অনেক বড় বড় আলেমের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য পেয়েছেন। তিনি একজন প্রাজ্ঞ লেখকও। খেলাফত মজলিস ও ছাত্র মজলিসের পাঠের তালিকার প্রায় সব বইই তাঁর লেখা। জ্ঞান, প্রজ্ঞা, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা কোনো বিচারেই পিছিয়ে না থাকা সত্ত্বেও তিনি কেন দলের আমির হতে পারছেন না সেই প্রশ্ন উঠছে ঘরে-বাইরে। 

ছাত্র মজলিসের সাবেক কেন্দ্রীয় একজন নেতা নাম প্রকাশ না করে অনেকটা আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘কাদের ভাইকে আমরা যথাযথ মূল্যায়ন করতে পারলাম না। এটা আমাদের ব্যর্থতা। অথচ তিনি জামায়াতে থাকলে বর্তমানে হয়ত আমির থাকতেন। কারণ আজ যারা জামায়াতের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের বেশির ভাগই কাদের ভাইয়ের জুনিয়র।’

এ ব্যাপারে খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব এবং ছাত্র মজলিসের সাবেক সভাপতি মুনতাসীর আলী আওয়ার ইসলামকে বলেন, আমাদের দল একটি গঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় চলে। প্রতি দুই বছর পরপর কাউন্সিল হয়। সেখানে সম্মিলিতভাবেই সিদ্ধান্ত হয়। এখানে ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার তেমন কিছু থাকে না। একজন ব্যক্তি অনেক বার থাকতে কোনো বাধা নেই। তবে তিনিই যে আজীবন থাকবেন এমনটাও বলা নেই।  

এ সময় তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, খেলাফত মজলিসে আলেম নন এমন কেউ আমির হতে পারবেন না বলে কি কোনো নিয়ম চালু আছে? জবাবে তিনি বলেন, গঠনতান্ত্রিকভাবে লিখিত এমন কোনো নিয়ম নেই। তবে প্র্যাকটিসটা এরকমই চলে আসছে।

এসএকে/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ