বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫ ।। ২৪ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ১০ জিলকদ ১৪৪৬

শিরোনাম :
ইত্তেফাকুল মাদারিসিল ক্বাওমিয়্যাহ কেরানীগঞ্জের শিক্ষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত শাপলা ও পিলখানার বিচার দাবিতে জমিয়তের বিক্ষোভ মিছিল সামরিক হামলার নিন্দা জানিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান তারেক রহমানের ভারতকে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা বন্ধ করতে হবে: ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ হজযাত্রীদের সবধরনের সুবিধা দেওয়ার নির্দেশ সৌদি যুবরাজের নারী কমিশন ইসলামিক চিন্তাবিদদের সমন্বয়ে পুনর্গঠন করতে হবে ইসলামী ঐক্যজোটের সঙ্গে সংলাপে বসছে ইসলামী আন্দোলন আইসক্রিম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ভালো? অধিকাংশ সংস্কার প্রস্তাবে ইসলামী আন্দোলনের ঐকমত্য, কয়েকটিতে দ্বিমত কোনো সন্ত্রাসী যেন দেশে প্রবেশ করতে না পারে: আইজিপি

‘হজযাত্রায় একটা চিন্তাই থাকা উচিত- আল্লাহ কি আমাকে মেহমান হিসেবে কবুল করেছেন’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ছবি: আওয়ার ইসলাম

মাওলানা ইয়াহইয়া জাহাঙ্গীর

এক বুজুর্গের চল্লিশতম হজের অভিজ্ঞতা—যেখানে হৃদয় ভিজে গেছে আল্লাহর প্রেমে। অহংকার গলে গেছে কাবার ছায়ায় দাঁড়িয়ে। প্রতিটি তাওয়াফে ছিল আকুল মিনতি—‘হে রব, আমাকে আপনার মেহমান হিসেবে কবুল করুন।’ জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও হারানো অনুভূতির খোঁজ, আরশের ছায়ার আশায় প্রেমভেজা এক আত্মাবেদনের গল্প শুনিয়েছেন মাওলানা ইয়াহইয়া জাহাঙ্গীর। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন: হুমায়ুন আইয়ুব। শ্রুতিলিখন করেছেন: শাব্বির আহমাদ খান।

আওয়ার ইসলাম: আপনার প্রথম হজের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

মাওলানা ইয়াহইয়া জাহাঙ্গীর: আমার দীর্ঘদিনের তামান্না ছিল—যখন মালিবাগ মাদরাসায় শুরু থেকে নুরুল ইজাহ পড়াতাম, তখন থেকেই হজের অধ্যায়গুলো—শরহে বেকায়া, হেদায়া, কানজুদ্দাকায়েক—খুব গুরুত্ব দিয়ে পাঠ দিতাম। ১৪০৪ হিজরিতে আল্লাহ আমাকে মক্কায় ডেকে নিলেন। মনে মনে ভাবতাম, এতদিন হজের মাসয়ালা পড়িয়েছি, সব তো জানি। আমার মনে একপ্রকার অহংকার বাসা বেঁধেছিল—‘আমি তো সব পারি।’ কিন্তু হজের সফর শুরু হতেই বুঝতে পারলাম, আমি কিছুই জানি না। বাস থেকে নামার সাথে সাথেই আমার এতদিন অর্জিত সব ইলম যেন কোথায় উধাও হয়ে গেল! এমনকি ‘হজ কত প্রকার’—এই মৌলিক প্রশ্নের উত্তরও মনে করতে পারছিলাম না। তখনই উপলব্ধি করি, এটা হয়েছে আমার অহংকারের কারণে। আল্লাহ আমাকে শিক্ষা দিতে চেয়েছেন। আমার সেই বন্ধু মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ আমাকে ধাপে ধাপে বলে দিয়েছেন কোথায় কী করতে হবে। তাঁর সহযোগিতা ছাড়া হয়ত আমার হজই হতো না।

আওয়ার ইসলাম: হজের প্রস্তুতি ও মানসিকতা কেমন হওয়া উচিত বলে মনে করেন?

মাওলানা ইয়াহইয়া জাহাঙ্গীর: এখানে একটি বড় শিক্ষার বিষয় আছে—ইলম, অর্থ, অভিজ্ঞতা কিংবা সুস্থতার ওপর ভরসা করে নয়, আল্লাহর ওপর ভরসা করে হজে যেতে হয়। তখনই আল্লাহর সাহায্য আসে, সব সহজ হয়ে যায়। আমি হজযাত্রীদের সবসময় একটি কথা বলি: আপনার চিন্তা শুধু একটাই হওয়া উচিত—‘আমার আল্লাহ কি আমাকে তাঁর মেহমান হিসেবে কবুল করেছেন?’ আমি নিজেও এবার সেই নিয়ত নিয়ে যাচ্ছি। আল্লাহ যদি তাঁর মেহমান হিসেবে কবুল করেন, তবে বার্ধক্য বা শারীরিক অসুস্থতা কোনো বাধা হতে পারে না।

আওয়ার ইসলাম: আগে ও এখনকার হজের পরিবেশে কী পার্থক্য দেখেন?

মাওলানা ইয়াহইয়া জাহাঙ্গীর: স্মৃতির পাতায় ফিরে গেলে দেখি, আগের হজযাত্রীদের কী আবেগ ছিল! মসজিদুল হারাম দেখা মাত্রই চোখে পানি আসত। কান্না শুরু হয়ে যেত আরও আগে—জেদ্দা থেকে বাস যখন মক্কার দিকে যেত এবং হারামের সীমানায় প্রবেশ করত, তখনই অনেকের গলায় ‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ বলে চিৎকার আসত। তখন ফ্লোরে ঘুমাতাম, খাট ছিল না—কিন্তু প্রশান্তি ছিল। এখন খাট আছে, এসি আছে—কিন্তু সেই প্রশান্তি কোথায় যেন হারিয়ে গেছে।

আওয়ার ইসলাম: বর্তমান সময়ে হজে মোবাইল ব্যবহারের বিষয়ে আপনার মতামত কী?

মাওলানা ইয়াহইয়া জাহাঙ্গীর: বর্তমান সময়ে একটি দুঃখজনক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে—হাজিরা হজের সময় ছবি তোলে, ভিডিও করে, লাইভ করে। আমি বারবার বলি—হজের সময় যদি মোবাইল চালান, তাহলে আমও গেল, ছালাও গেল। অনেকে শয়তানকে পাথর মারা, মাথা মুণ্ডানোর পর ফোন করে বলে, ‘সব ঝামেলা শেষ।’ অথচ এই ‘ঝামেলা’ শব্দটি এক পবিত্র ইবাদতের জন্য বলা—এটা ভয়ংকর অপরাধ। মোবাইল ব্যবহার একান্ত প্রয়োজন হলে, তাওয়াফের সময় তা রেখে যান। তখন আপনি আপনার মালিকের সান্নিধ্যে থাকবেন—তাঁর সঙ্গেই কথা বলবেন।

আওয়ার ইসলাম: হজে এমন কোনো মুহূর্ত আছে কি যা আপনাকে বারবার স্পর্শ করে?

মাওলানা ইয়াহইয়া জাহাঙ্গীর: আমার জীবনে বহু হজ করার সুযোগ হয়েছে, কিন্তু একটি দৃশ্য বারবার আমাকে টানে—যখন মাতাফের পাশে দাঁড়াই, মনে হয় আমি যেন আরশে আজিমের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছি। একদিন ফজরের পর ভিড় এড়িয়ে তাওয়াফে যাই। হজরে আসওয়াদের পাশে সূর্য উঠছিল, কাবা ঘরের ছায়া পশ্চিম দিকে ছড়িয়ে পড়ছিল। সেই ছায়ার কাছে পৌঁছে আমি রবের সঙ্গে একান্তে বলি—‘আপনার এতো মায়া! এতো দয়া! আমাকে, একজন পাপী বান্দাকে আপনার ঘরের ছায়া দিচ্ছেন! কেয়ামতের দিন যখন আপনার আরশের ছায়া ছাড়া আর কিছু থাকবে না, সেদিনও আমাকে এই ছায়াটুকু দান করবেন, হে রব!’ সেই মুহূর্তটি আমাকে বারবার স্পষ্ট করে।

এনএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ