শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫


রোজার আধুনিক ১০ মাসআলা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| মুফতি মুহাম্মাদ জাকারিয়া ||

১-রোজা রেখে রক্ত দেয়া

রোযা রাখা অবস্থায় রক্ত দেবার দ্বারা রোযার কোন ক্ষতি হয় না। তাই আপনি নিশ্চিন্ত মনে আপনার আত্মীয়কে রক্ত দিতে পারেন। তবে এ পরিমাণ রক্ত বের করা মাকরূহ, যার দ্বারা রোযাদার খুব দুর্বল হয়ে যায়।

عن ثابت البنانى قال: سئل أنس بن مالك أكنتم تكرهون الحجامة للصائم؟ قال: لا، إلا من أجل الضعف (صحيح البخارى، كتاب الصوم، باب الحجامة والقيئ للصائم. رقم- 1940)

সাবেত আলবুনানী রাহ. বলেন, আনাস রা. কে জিজ্ঞাসা করা হল রোযার হালতে শিঙ্গা লাগানোকে আপনারা কি মাকরূহ মনে করতেন? তিনি বলেন, ‘না। তবে এ কারণে দুর্বল হয়ে পড়লে তা মাকরূহ হবে।’-সহীহ বুখারী, হাদীস ১৯৪০; সুনানে কোবরা হাদিস ৮৩৪৬; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৫৬; রদ্দুল মুহতার ২/৩৯৫ 

২-রোজার রেখে ডায়ালাইসিস করা

প্রচলিত  ডায়ালাইসিস এর দুই পদ্ধতির মধ্য থেকে কোনটির মাধ্যমে রোযা ভঙ্গ হবার কারণ পাওয়া যায় না। তাই রোয়া ভঙ্গ বা ক্ষতি হবে না।
বাদায়েউস সনায়ে-১/২৪৩.
রদ্দুল মুহতার৩/৩৬৯
ফাতাওয়ায়ে কসেমীয়া১১/৪৯০. 

৩-ইনজেকশন ও ইনস্যুলিন গ্রহণ

ইনজেকশন,ভ্যাকসিন,ইনস্যুলিন ও স্যালাইন নিলে রোজা ভাঙবে না, অবশ্য গ্লুকোজজাতীয় ইনজেকশন অর্থাৎ যেসব স্যালাইন ও ইনজেকশন খাদ্যের কাজ দেয়, রোজা অবস্থায় মারাত্মক অসুস্থতা ছাড়া নেওয়া নাজায়েজ। আলাতে জাদিদা কি শরয়ী আহকাম পৃষ্ঠা ১৫৩ ইবনে আবিদিন -৩/ ৩৬৭; ইসলাম ও আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান, পৃষ্ঠা ৩২৭ 

ফাতাওয়ার  কিতাবে এসেছে,

وأما ما وصل إلى الجوف أو الى الدماغ عن غير المخارق الأصلية بأن داوى الجائفة ولآمة، فإن داواها بداء يابس لا يفسد (بدائع الصنائع، كتاب الصوم، فصل فى فساد الصوم-2\243) 

৪-ইনহেলার ব্যবহার

সালবিউটামল ও ইনহেলার ব্যবহার করলে রোজা ভেঙে যাবে। শ্বাসকষ্ট দূর করার জন্য ওষুধটি মুখের ভেতরভাগে স্প্রে করা হয়। এতে যে জায়গায় শ্বাসরুদ্ধ হয় সেই জায়গাটি প্রশস্ত হয়ে যায়। ফলে শ্বাস চলাচলে আর কষ্ট থাকে না। উল্লেখ্য, ওষুধটি যদিও স্প্রে করার সময় গ্যাসের মতো দেখা যায়, কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে তা দেহবিশিষ্ট তরল ওষুধ। অতএব মুখের অভ্যন্তরে স্প্রে করার দ্বারা রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। তবে হ্যাঁ, মুখে স্প্রে করার পর না গিলে যদি থুতু দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়, তাহলে রোজা ভঙ্গ হবে না। এভাবে কাজ চললে বিষয়টি অতি সহজ হয়ে যাবে। এতে শ্বাসকষ্ট থেকে রেহাই পাওয়ার পাশাপাশি রোজা ভঙ্গ হবে না। ইবনে আবিদিন২/৩৯৫; 
ফাতাওয়ায়ে ফক্বীহুল মিল্লাত ৫/৪৫৯ হেদায়া ১/১২০

কোনো কোনো চিকিৎসক বলেন, সাহিরতে এক ডোজ ইনহেলার নেওয়ার পর সাধারণত ইফতার পর্যন্ত আর ইনহেলার ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে না। তাই এভাবে ইনহেলার ব্যবহার করে রোজা রাখা চাই। হ্যাঁ, কারো যদি বক্ষব্যাধি এমন মারাত্মক আকার ধারণ করে যে ইনহেলার নেওয়া ছাড়া ইফতার পর্যন্ত অপেক্ষা করা দায় হয়ে পড়ে, তাহলে তাদের ক্ষেত্রে এই সুযোগ রয়েছে যে তারা প্রয়োজনভেদে ইনহেলার ব্যবহার করবে ও পরবর্তী সময় রোজা কাজা করে নেবে। আর কাজা করা সম্ভব না হলে ফিদিয়া আদায় করবে। আর যদি ইনহেলারের বিকল্প কোনো ইনজেকশন থাকে, তাহলে তখন ইনজেকশনের মাধ্যমে চিকিৎসা করবে। কেননা রোজা অবস্থায় ইনজেকশন নিলে রোজা ভাঙবে না। ইসলাম ও আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান, পৃষ্ঠা ৩২৪; সুরা বাকারা : ১৮৪, রদ্দুল মুখতার : ২/৩৯. 

৫-হার্টের রোগীদের জন্য

নাইট্রোগি্লসারিন অ্যারোসল জাতীয় এ ওষুধটি হার্টের রোগীরা ব্যবহার করেন। ডাক্তারের মতে, ওষুধটি জিহ্বার নিচে ২-৩ ফোঁটা দেওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে শিরার মাধ্যমে রক্তের সঙ্গে মিশে যায়। এ হিসেবে এ ওষুধ ব্যবহার করার পর গলায় ওষুধ না গেলে বা এর স্বাদ না পৌঁছলে রোজা ভাঙবে না। ফিকহুল নাওয়াজিল ২/২৯৯; ইসলাম ও আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান।পৃ-৩২৫

৬-অক্সিজেন নেয়া

রোজা অবস্থায় ওষুধ ব্যবহৃত অক্সিজেন ব্যবহার করলে রোজা ভেঙে যাবে। তবে শুধু বাতাসের অক্সিজেন নিলে রোজা ভাঙবে না। কারণ রোজা ভঙ্গের কারণ হচ্ছে, স্বাভাবিক প্রবেশ পথ দিয়ে পেটে বা মস্তিষ্কে খাদ্যদ্রব্য বা ওষুধ প্রবেশ করা। বায়হাকি শরিফ, হাদিস নং-৮৫১২, ফাতহুল বারি-৪/২০৭, জাদিদ ফেকহি; মাসায়েল-১/১৮৮; ইবনে আবিদিন-২/ ২০০ খুলাসাতুল ফাতাওয়া-১/২৫৩. 

৭-পেস্ট/টুথ পাউডার ব্যবহার করা

রোজা অবস্থায় টুথপেস্ট বা মাজন ব্যবহার করা মাকরুহ। আর যদি তা গলায় বা পেটের ভেতর চলে যায়, তাহলে তো রোজা নষ্টই হয়ে যাবে। তাই সাহিরর সময় শেষ হয়ে গেলে পেস্ট বা মাজনজাতীয় কোনো কিছু ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রশ্নে বর্ণিত অবস্থায় সাহির খাওয়ার পর ব্রাশ করাকালে আজান হয়ে গেলে রোজার ক্ষতি হবে। রদ্দুল মুহতার ২/৪১৫-৪১৬; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২০৪; হিদায়া ১/২২০) 

৮-এন্ডোসকপি

চিকন একটি পাইপ যার মাথায় বাল্ব জাতীয় একটি বস্তু থাকে। পাইপটি পাকস্থলিতে ঢুকানো হয় এবং বাইরে থাকা মনিটরের মাধ্যমে রোগীর পেটের অবস্থা নির্ণয় করা হয়। এ নলে যদি কোনো ওষুধ ব্যবহার করা হয় বা পাইপের ভেতর দিয়ে পানি/ওষুধ ছিটানো হয়ে থাকে তাহলে রোজা ভেঙে যাবে, আর যদি কোনো ওষুধ লাগানো না থাকে তাহলে রোজা ভাঙবে না। আল বাহরুর রায়েক ২/৪৮৭, আলমুহিতুল বোরহানি ৩/৩৪৮, জাদিদ ফিকহী মাসায়েল ১/১২৬ 

৯-এনজিওগ্রাম

হার্ট ব্লক হয়ে গেলে উরুর গোড়া কেটে বিশেষ রগের ভেতর দিয়ে হার্ট পর্যন্ত যে ক্যাথেটার ঢুকিয়ে পরীক্ষা করা হয় তার নাম এনজিওগ্রাম। এ যন্ত্রটিতে যদি কোনো ধরণের ঔষধ লাগানো থাকে তারপরও রোজা ভাঙবে না। আল-মালাকাতুল ফিকহিয়া-১/১২৪. 

১০-রোজা অবস্থায় চোখে ওষুধ বা ড্রপ ব্যবহার

চোখে ড্রপ, ওষুধ, সুরমা, মলম ইত্যাদি ব্যবহার করলে রোজা নষ্ট হবে না। যদিও এগুলোর স্বাদ গলায় উপলব্ধি হয়। কারণ চোখে ওষুধ ইত্যাদি দিলে রোজা না ভাঙার বিষয়টি হাদিস ও ফিকাহশাস্ত্রের মূলনীতি দ্বারা প্রমাণিত।  জাদিদ ফিকহি মাসায়িল -১/১৮৩; আল-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া-২/৩৬৬ 

লেখক: উস্তাজুল হাদিস, জামিয়া ইসলামিয়া হুসাইনিয়া মাদ্রাসা বরিশাল,বাংলাদেশ

কেএল/


সম্পর্কিত খবর