বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫ ।। ২৫ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ১০ জিলকদ ১৪৪৬

শিরোনাম :
সরকারের মধ্যস্থতায় হামিদের পালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে: নুর আ. লীগের বিচারে সরকারের নতুন উদ্যোগ, জানালেন উপদেষ্টা স্কুলে নৈতিক শিক্ষা ছোট থেকেই দেয়া উচিত : মাসউদুল কাদির সিলেটে খেলার মাঠ নিয়ে বিএসএফ-স্থানীয়দের মধ্যে উত্তেজনা যৌতুকবিহীন বিয়ে করায় ২০ নবদম্পতিকে উপহার দিল জামায়াত আবদুল হামিদের দেশত্যাগ, ৩ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা আলেমবিদ্বেষী বক্তব্যে ফটিকছড়িতে উমামা ফাতেমাকে অবাঞ্চিত ঘোষণা সমমনা ইসলামী জোটের বৈঠকে ৩০০ আসনে একক প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত ইসলামে নারীর অধিকার: শিক্ষা, কর্ম ও মর্যাদা ঢাকাস্থ লাখাই সাংবাদিক ফোরামের আত্মপ্রকাশ, আহ্বায়ক আমিন ইকবাল

ইসলামে নারীর অধিকার: শিক্ষা, কর্ম ও মর্যাদা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| মাহমুদুল হাসান নুমান ||

ক্যাথলিক চার্চ ‘ডাইনি’ ও ‘মুক্তচিন্তা’র অজুহাতে ৬২০০০ মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে মেরেছিল। চার্চের শোষণ-নির্যাতনের ফলে ইউরোপ গির্জার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। ফলে ফরাসি বিপ্লব ও আলোকায়ন আন্দোলন সংগঠিত হয়। মানুষ খ্রিস্টধর্ম বর্জন করে সেক্যুলার হয়ে যায়। তাদের জীবনের লক্ষ্য হয়ে উঠে একমাত্র পার্থিব ভোগ-বিলাস। নারী সম্পর্কে তাদের ধর্মীয়-সামাজিক রীতি-নীতি বর্জন করে সেক্যুলার দৃষ্টিভঙ্গিতে বলা হলো, নারী-পুরুষ সবাই সমান; জাতীয় উন্নতির জন্য সবাই উপার্জন করে জীবিকা নির্বাহ করবে। আবার শিল্প বিপ্লবের ফলে কৃষিনির্ভর পরিবার ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। তার উপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অধিকাংশ নারী অভিভাবকহীন হয়ে যায়। তখন এসব অসহায় নারী-শিশুরা শিল্প কারখানায় এসে ভিড় জমায়। সেখানে তাদের লাঞ্ছনা ও দুর্দশা চরমসীমায় পৌঁছে যায়। শিল্প মালিকেরা তাদের হ্যান্ড-টু-মাউথ বেঁচে থাকার মত বেতন দিয়ে আর তাদের ভোগ করা নিজেদের অধিকার বলে মনে করে। তখন থেকেই শুরু হয় নারী স্বাধীনতার আন্দোলন। যুগ যুগ ধরে আত্মঘাতী আন্দোলনে তারা এমন কিছু অর্জন করল যা নিজের কবর খননের নামান্তর হল। আর কিছু মানবিক অধিকার আদায় করল। যার চেয়ে শ্রেষ্ঠ ও উন্নত অধিকার ইসলাম ১৪ শত বছর আগেই দিয়েছে।

ইসলাম প্রদত্ত নারী অধিকার

নারী শিক্ষা

“পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন” (আলাক–১)। এই নির্দেশের মধ্যে নারী-পুরুষ উভয়ই অন্তর্ভুক্ত।

“প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য জ্ঞানার্জন করা ফরজ” (ইবনে মাজাহ–২২৪)।

“তোমরা নিজে শেখো ও তোমাদের নারীদের শেখাও” (দারিমি–৩৪৩০)।

“তোমরা নারীদের উত্তম উপদেশ (শিক্ষা) দাও” (বুখারি–৩৩৩১)।

ইলম শেখার কারণেই মা আয়েশাকে স্বয়ং জিবরাইল এসে সালাম জানিয়েছিলেন। বড় বড় সাহাবীগণ কোন বিষয়ে আটকে গেলে তাঁর কাছে গিয়ে সমাধান নিতেন (তিরমিযি–৩৮৮১, ৩৮৮৩)। দ্বীনের জ্ঞান অর্জনের প্রতি আগ্রহের কারণে হযরত আয়েশা আনসারী মহিলাদের প্রশংসা করে বলতেন—“তারা কত ভালো! দ্বীনি জ্ঞানার্জনে লজ্জা তাদের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে না” (মুসলিম–৩৩২)। রাসুল সা. আনসারী মহিলাদের শিক্ষাদানের জন্য সময় ও স্থান নির্ধারণ করে দিয়ে সেখানে গিয়ে শিক্ষা দিতেন (বুখারি–৭৩১০)।

নারীর কর্ম

ক. হযরত জাবিরের খালাম্মা একজন তালাকপ্রাপ্ত মহিলা সাহাবী ছিলেন। তিনি বাগানে গিয়ে খেজুর গাছের ডাল কেটে বিক্রি করার অনুমতি চাইলে রাসুল সা. বললেন, “যাও, গাছের ডাল কেটে বিক্রি কর। এই টাকা দ্বারা তুমি দান-খয়রাত বা অন্য কোনো ভালো কাজ করতে পারবে” (মুসলিম–৫৫/১৪৮৩)।

খ। রাসুল সা. বললেন: “আল্লাহ প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যাওয়ার জন্য তোমাদের অনুমতি দিয়েছেন” (বুখারি)।

গ। হযরত আবু বকরের রা.-এর কন্যা এবং জুবায়রের স্ত্রী আসমা (রা.) নিজেই উট ও ঘোড়াকে খাবার-পানি দিতেন, ঘরের যাবতীয় কাজ করতেন। বাড়ি থেকে দুই মাইল দূরের জমি থেকে উটের খাবার হিসেবে খেজুর বীজ তুলে আনতেন। একবার যাতায়াতের পথে রাসুল সা.-এর সাথে সাক্ষাৎ হয়ে যায়, তখন রাসুল তাকে নিজের উটে বসিয়ে নিতে চাইলেন, কিন্তু তিনি রাজি হলেন না (বুখারি–৫২২৪)। তখন রাসুল তাকে বাইরে কাজ করতে নিষেধ করেননি।

ঘ। ক্বীলাহ নামে এক মহিলা এসে রাসূলকে (সা.) বললেন, “আমি একজন ব্যবসায়ী মহিলা।” তারপর তিনি রাসূল সা.-এর নিকট ব্যবসা সংক্রান্ত কিছু মাসআলা জানতে চাইলেন। রাসূল সা. তাকে ব্যবসা করতে নিষেধ করেননি (ইবনে মাজাহ–২২০৪)।

ঙ। হযরত ওমর (রা.) এর যুগে আসমা বিনতে মুহাররমা নামের এক মহিলা আতরের ব্যবসা করতেন। ওমর (রা.) তাকে নিষেধ করেননি (তাবাকাতে ইবনে সা’দ)।

চ। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদের স্ত্রী জয়নব ধনী ছিলেন, তার স্বামীর কোনো উপার্জন ছিল না। তিনি শিল্পকর্ম করে স্বামী-সন্তান এবং ভাই-বোনদের এতিম সন্তানদের প্রতিপালন করতেন। তার এ দান সম্পর্কে রাসূলকে জিজ্ঞাসা করা হলে রাসূল সা. বললেন, “সে দুটি সওয়াব পাবে—নিকট আত্মীয়ের হক আদায় এবং দানের সওয়াব” (বুখারি–১৪৬৬)।

সামাজিক দায়িত্বে নারী

ক. মহিলা সাহাবী সামুরা বিনতে নুহাইক হাটে-বাজারে ঘুরে ভালো ও কল্যাণময় কাজের আদেশ করতেন এবং পাপকাজ থেকে লোকদের বিরত রাখার চেষ্টা করতেন। তার হাতে একটা চাবুক থাকত, কাউকে অন্যায় কাজে লিপ্ত দেখলেই আঘাত করতেন (মু‘জামুল কবীর তাবরানী–৭৮৫)।

খ. মহিলা সাহাবী শফিা অত্যন্ত বুদ্ধিমতী ও সুপরামর্শদাতা ছিলেন। ওমর (রা.) তার পরামর্শ গ্রহণ করতেন এবং সম্মান করতেন। তিনি সেই মহিলাকে বাজার তদারকি দায়িত্ব দিয়েছিলেন (আল-ইসতিআব)।

নারী সংগঠন করার অধিকার

একবার আসমা বিনতে যায়দ রা. রাসূল সা.-এর কাছে এসে বললেন, “আমি মহিলাদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি হিসেবে আপনার নিকট উপস্থিত হয়েছি।” তিনি নারী জাতির প্রতিনিধি হয়ে রাসূল সা.-এর কাছে জানতে চান, পুরুষরা নামাযের জামাত, জুমা, রোগী দেখা, জানাজায় অংশগ্রহণ, হজ্ব, জিহাদ ইত্যাদির মাধ্যমে অনেক ফজিলত লাভ করে। আর তখন মহিলারা পুরুষের প্রয়োজনে ঘরে কন্যা নিয়ে আবদ্ধ থাকে। এসব কাজে তারা অংশগ্রহণ করে ফজিলত হাসিল করতে পারবে কিনা? রাসুল সা. তাকে জানালেন, “স্বামীর সন্তুষ্টির মধ্যে নারী জাতির এসব ফজিলত নিহিত রয়েছে” (বায়হাকি, শু‘আবুল ঈমান–৮৩৬৯; মা‘রিফাতুস সাহাবা–৭৫১২)।

এই ঘটনা প্রমাণ করে যে কর্তৃপক্ষের কাছে দাবিদাওয়া পেশ করার জন্য নারী সংগঠন ও নেত্রী থাকতে পারে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এটাই যে, পাশ্চাত্য ধারার অসংখ্য নারী সংগঠন থাকলেও দেশের ৯৫ শতাংশ ধর্মীয় মহিলাদের কোনো সংগঠন নেই। ধর্মীয় নারীদের কোনো সংগঠন থাকলে পশ্চিমা প্রগতিবাদী নারীদের অন্যায় দাবিগুলো তারা প্রতিবাদ করতে পারতেন। কাজেই, উচ্চশিক্ষিত ধর্মীয় মহিলাদের কাছে আবেদন—আপনারা ইসলামী নারী সংগঠন গড়ে তুলুন এবং ইসলাম প্রদত্ত নারী অধিকার নিয়ে আওয়াজ তুলুন।

পর্যালোচনা

এখন প্রশ্ন হল, ইসলাম যদি পূর্ণাঙ্গ নারী অধিকার দিয়ে থাকে তাহলে মুসলিম সমাজে নারীর এত দুর্দশা কেন? মুসলিম নারীরা পাশ্চাত্যের নারীবাদ গ্রহণ এবং প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে কেন? পাশ্চাত্য মতবাদ ও নারীবাদ ইসলামের উপর বিজয়ী হলো কেন?

এর উত্তরটা খুবই সহজ অর্থাৎ, ইসলাম থেকে নারী অধিকার সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় বাদ পড়ে গেছে। এসব বিষয় মাদ্রাসা বা কোনো ফেরকার সিলেবাসে পাঠ্যভুক্ত নেই। ফলে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে এসব বিধান চর্চা, প্রচার-প্রসার ও প্রয়োগ করা হয় না। 

নারী অধিকার সংক্রান্ত কোরআন-হাদিসের বিধানগুলি অপাংক্তেয় অবস্থায় পড়ে আছে। এটাই পশ্চিমা নারীবাদ ও মতবাদ ইসলামের উপর বিজয়ী হওয়ার কারণ। এ থেকে মুক্তির একটাই পথ—কোরআন-হাদিসে ফিরে আসা। অর্থাৎ, নারী অধিকার সংক্রান্ত বিধানগুলি মাদ্রাসায় পাঠ্যভুক্ত করে সর্বত্র প্রচার-প্রসার এবং বাস্তবায়ন করা। তাহলে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হবে এবং নারী সমাজ সঠিক অধিকার ফিরে পাবে।

এমএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ