শিক্ষার্থীদের দাবি পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) আনঅফিশিয়ালি শাটডাউন ঘোষণা করেছেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইস উদ্দিন। তবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মোস্তফা হাসান জানিয়েছেন, এটি আন-অফিশিয়াল শাটডাউন।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা শেষে কাকরাইলে চলমান আন্দোলন থেকে এই ঘোষণা দেন তিনি।
অধ্যাপক রইস উদ্দিন বলেন, “আমরা এখানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকার নিয়ে এসেছি। আমাদের ওপরে পুলিশের নির্বিচারে হামলা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ অরাজকতা এবং অন্যায়। আমরা কারো বিরুদ্ধে এখানে কথা বলতে আসিনি, কোনো ষড়যন্ত্র করতে আসিনি। শুধু আমাদের অধিকার চাইতে এসেছি। দাবি আদায় না করে আমরা ঘরে ফিরব না, এই দাবির পূর্ণতা না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে শাটডাউন চলবে এবং কোন ক্লাস বা পরীক্ষা হবে না।”
তিনি আরো বলেন, “যদি আমাদের সরানোর জন্য কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তবে তা ভাল হবে না। আমি চাই না আমার সামনে কোন শিক্ষার্থীকে আঘাত করা হোক।”
সমাজকর্ম বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মোস্তফা হাসান জানান, “আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবি নিয়ে কাকরাইলে আন্দোলন করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন শুধু অফিস খুলে রয়েছে, ক্লাস বা পরীক্ষা কিছুই হচ্ছে না। এটি বলতেই হবে যে, বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রম পরিচালনা করছে না। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে শাটডাউন ঘোষণা করা হয়নি, তবে পরিস্থিতি এমন যে, এটি আনঅফিশিয়ালি শাটডাউন হয়ে গেছে। কেননা, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা সবাই রাস্তায়, আর এ অবস্থায় ক্লাস বা পরীক্ষা কীভাবে চলবে?”
তিনি আরো বলেন, “শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো যৌক্তিক। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় আমাদের শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের শিকার। সরকার চাইলেই শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিতে পারে। বাজেট ঘোষণা হতে চলেছে, সেখানে এসব দাবি বাস্তবায়ন সম্ভব।”
শাটডাউন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক জানান, “অফিশিয়ালি বিশ্ববিদ্যালয় শাটডাউন ঘোষণা করা হয়নি এবং আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। তবে, বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন ক্লাস বা পরীক্ষা হচ্ছে না। শিক্ষার্থীরা শাটডাউন ঘোষণা করে থাকতে পারেন।”
এ সময় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দেয়, যেমন—“আবাসন চাই, বঞ্চনা নয়”, “বাজেট কাটছাঁট চলবে না”, “হামলার বিচার চাই” ইত্যাদি।
গত দুই দিন ধরে শিক্ষার্থীরা কাকরাইলে অবস্থান করছেন। অনেক শিক্ষার্থী ক্লান্ত হলেও আন্দোলন থেকে সরে আসেননি। কেউ কেউ রাতভর রাস্তায় ঘুমিয়ে আজ সকালেও অবস্থান করছেন।
শিক্ষার্থীদের চার দফা দাবি হলো:
২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০% শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি চালু করা।
জবির প্রস্তাবিত বাজেট কাটছাঁট না করে অনুমোদন করা।
দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ একনেক সভায় পাশ ও বাস্তবায়ন।
১৪ মে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের অতর্কিত হামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি প্রদান।
এদিকে, গতকাল (বুধবার) সকাল ১১টায় তিন দফা দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে লং মার্চ শুরু করেছিল শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গুলিস্তান ও মৎস্য ভবন পার হয়ে কাকরাইল মসজিদের সামনে এসে পৌঁছালে পুলিশ তাদের ওপর টিয়ার গ্যাস এবং সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ গরম পানি ছোড়ে এবং পরে লাঠিচার্জও করে। এতে শতাধিক শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক আহত হন।
এমএইচ/