সোমবার, ১৯ মে ২০২৫ ।। ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ ।। ২১ জিলকদ ১৪৪৬

শিরোনাম :
আমরা কখনোই ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেব না: পাকিস্তান নির্বাচন হতে পারে ডিসেম্বরেই তবে জুনের পরে নয় : প্রধান উপদেষ্টা ‘সমমনা ইসলামী দলগুলো একত্রে নির্বাচন করলে বিজয় সম্ভব’ আরও সাঁড়াশি ইসরায়েল, গাজায় ব্যাপক স্থল হামলা শুরু জমিয়ত সহ-সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস কাসেমীকে দেখতে হাসপাতালে জমিয়ত মহাসচিব  সৌদি-ইসরায়েলের সম্পর্ক ঠেকাতে গাজায় ঝরল ৫৩ হাজার প্রাণ এবার খুলনা সিটি নির্বাচনের ফলাফল বাতিলের দাবিতে হাতপাখার প্রার্থীর মামলা ‘আত্মস্বীকৃত পতিতাদের অনতিবিলম্বে গ্রেফতার করুন’ বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস কুমিল্লা পশ্চিম জেলা কমিটি গঠন মানবিক করিডর ও সমুদ্র বন্দর সিদ্ধান্ত জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী: ইসলামী ঐক্যজোট 

মোগল আমলের নয়; নববী আদর্শের ঈদ চাই 

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| মুফতি জুবায়ের বিন আব্দুল কুদ্দুস ||

গত সোমবারে (৩১শে মার্চ) মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হয়। এই দিনকে কেন্দ্র করে মুসলিম সমাজ নানা উৎসব-আয়োজন করে। তারই ধারাবাহিকতায় এবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ঈদ আনন্দ মিছিলের আয়োজন করা হয়। যার মাঝে উল্লেখযোগ্য ছিল সুলতানি মোগল আমলের আনন্দময় ঈদ উপহার দেওয়া। কিন্তু আমরা তাতে কুরআন, সুন্নাহ বিরোধী অনেক কাজ দেখতে পাই। যা মোগল আমলের ঈদ উৎসবকেও অতিক্রম করে।

যাহোক আমরা যারা মুসলিম। নিজেদেরকে মুসলমান বলে দাবি করি, আমাদেরকে একমাত্র প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্রতম সুন্নাহের অনুসরণ অনুকরণ করতে হবে। অন্য কারো আদর্শের অনুসরণে আমরা আল্লাহকে রাজি খুশি করতে পারব না এবং পরকালেও জান্নাত লাভ করতে পারবো না।

কারন যখন বিশ্বধরায় জাহেলিয়াত, মূর্খতা এবং অজ্ঞতার কারণে মানুষ নিজেদের মনুষ্যত্ব, সত্তিকারের আদর্শ, স্বকীয়তা ভুলে বসেছিল, তখনই বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তাআলা সুন্দর, সুমহান, আদর্শ ও সংস্কৃতি দিয়ে দুনিয়াতে প্রেরণ করেন।
 
বিজাতীয় সকল অপসংস্কৃতি দূর করে তিনি মানুষের মাঝে সুন্দর ও সুস্থ সংস্কৃতির প্রবর্তন ঘটান। তাঁর আদর্শ অনুসরণেই রয়েছে আমাদের ইহকাল ও পরকালে শান্তি ও মুক্তি। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, 

عَنْ جَابِرٌ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قا ل ، إِنَّ اللَّهَ بَعَثَنِي لِتَمَامِ مَكَارِمِ الْأَخْلَاقِ وَكَمَالِ محَاسِن الْأَفْعَال

হযরত জাবির (রা.) হতে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন- আল্লাহ তাআলা আমাকে যাবতীয় উত্তম চরিত্র ও উত্তম কার্যাবলি পরিপূর্ণ করার জন্যই প্রেরণ করেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদিস: ৫৭৭০)

আমরা যদি নবীজির সুন্নত ছেড়ে সুলতানি মোঘলীয় আমলের ঈদের দিকে ফিরে যাই তাহলে আমরা অবশ্যই পথভ্রষ্ট হতে থাকবো। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,

وَلَوْ تَرَكْتُمْ سُنَّةَ نَبِيِّكُمْ لَضَلَلْتُمْ

অর্থাৎ আর তোমরা যদি তোমাদের নবীর সুন্নাত বা পদ্ধতি পরিত্যাগ করো তাহলে অবশ্যই তোমরা পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে। (সহীহ মুসলিম হাদিস: ১৩৭৪)

দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর ঈদ আনন্দ মিছিলের নামে যা হয়েছে তার অধিকাংশ কাজকেই ইসলাম সমর্থন করে না। উপরন্ত ইসলামে এগুলো নিষিদ্ধ ও হারাম। যেমন, কোন প্রাণীর প্রতিকৃতি তথা মূর্তি তৈরি করা। ঢোল, তালি, বাঁশি ও শিস বাজানো, বেপর্দা নারী-পুরুষের সমাবেশ ঘটানো ইত্যাদি। 

তালি বাজানো সম্পর্কে ইসলামের বিধান:

শিস দেওয়া এবং তালি বাজানোকে কাফেরদের কাজ, কাফেরদের এবাদত আখ্যায়িত করে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন,

وَ مَا کَانَ صَلَاتُہُمۡ عِنۡدَ الۡبَیۡتِ اِلَّا مُکَآءً وَّ تَصۡدِیَۃً ؕ فَذُوۡقُوا الۡعَذَابَ بِمَا کُنۡتُمۡ تَکۡفُرُوۡنَ

আর কা’বা গৃহের নিকট শুধু শিস ও করতালি দেওয়াই ছিল তাদের নামায। সুতরাং অবিশ্বাসের জন্য তোমরা শাস্তি ভোগ কর। (সূরা আনফাল আয়াত নং ৩৫)

মূর্তি ও ভাস্কর্য সম্পর্কে ইসলামের বিধান: 

মূর্তি এবং ভাস্কর্য একই জিনিস। ইসলামে উভয়টাই অকাট্যভাবে নিষিদ্ধ এবং হারাম। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন,

فَاجۡتَنِبُوا الرِّجۡسَ مِنَ الۡاَوۡثَانِ وَ اجۡتَنِبُوۡا قَوۡلَ الزُّوۡرِ

অর্থাৎ সুতরাং তোমরা দূরে থাক মূর্তির অপবিত্রতা হতে এবং দূরে থাক মিথ্যা কথন হতে। (সূরা হজ্জ, আয়াত: ৩০)

বাঁশি সম্পর্কে ইসলামের বিধান:

হাদিস শরীফে এসেছে

 ، عَنْ نَافِعٍ، قَالَ: سَمِعَ ابْنُ عُمَرَ، مِزْمَارًا قَالَ: فَوَضَعَ إِصْبَعَيْهِ عَلَى أُذُنَيْهِ، وَنَأَى عَنِ الطَّرِيقِ، وَقَالَ لِي: يَا نَافِعُ هَلْ تَسْمَعُ شَيْئًا؟ قَالَ: فَقُلْتُ: لَا، قَالَ: فَرَفَعَ إِصْبَعَيْهِ مِنْ أُذُنَيْهِ، وَقَالَ: كُنْتُ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَمِعَ مِثْلَ هَذَا فَصَنَعَ مِثْلَ هَذَا

হযরত নাফি (রহ.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা সাহাবী হযরত ইবনু উমার (রাঃ) বাঁশির শব্দ শুনতে পেয়ে উভয় কানে আঙ্গুল ঢুকিয়ে রাস্তা থেকে সরে গিয়ে আমাকে বললেন, নাফি! তুমি কি কিছু শুনতে পাচ্ছো? আমি বললাম, না। অতঃপর তিনি কান থেকে হাত সরিয়ে বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলাম। তখন তিনি এ ধরণের শব্দ শুনে এরূপ করেছিলেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৯২৪)

ঢোল সম্পর্কে ইসলামের বিধান: 

হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে,

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رض عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى حَرَّمَ الْخَمْرَ وَالْمَيْسِرَ وَالْكُوبَةَ وَقَالَ: كُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ . قِيلَ: الْكُوبَةُ الطَّبْلُ.

হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা মদপান করা, জুয়া খেলা এবং ঢোল বাজানো হারাম করেছেন এবং বলেছেন, প্রত্যেক নেশা সৃষ্টিকারী বস্তু হারাম। কেউ কেউ বলেছেন, কূবাহ অর্থ ‘তবলা। (মিশকাতুল মাসাবিহ হাদিস নং৪৫০৩)

বিধর্মীদের সাদৃশ্যতা: 

সর্বোপরি এ মিছিলের কিছু কর্মকাণ্ডে বিধর্মীদের সাদৃশ্যতা পরিলক্ষিত হয়েছে। অথচ আমাদের ঈদ আমাদেরই উৎসব। এতে বিধর্মীদের সাথে কোন কাজের সাদৃশ্যতা কিছুতেই আল্লাহ ও তাঁর রসূলের কাছে পছন্দনীয় নয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

 مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ 

যে ব্যক্তি বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের দলভুক্ত গণ্য হবে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস: ৪০৩১)

রাসুল সা. এর হাদিস থেকে বোঝা যায়, যা সুন্দর অথবা সাময়িক আনন্দ দেয় তাই গ্রহণ করা যাবে না। বরং আমাদেরকে সতর্কতার সাথে আল্লাহর নির্দেশ মতো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন যাপন করতে হবে। নতুবা আমরা বিপথগামী হয়ে যাব এবং আমাদের ঈমান-আমল নষ্ট হয়ে যাবে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,

مَاۤ اٰتٰىکُمُ الرَّسُوۡلُ فَخُذُوۡہُ ٭ وَ مَا نَہٰىکُمۡ عَنۡہُ فَانۡتَہُوۡا ۚ وَ اتَّقُوا اللّٰہَ ؕ اِنَّ اللّٰہَ شَدِیۡدُ الۡعِقَابِ ۘ 

অর্থাৎ রাসুল তোমাদেরকে যা দেন, তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা হতে তোমাদেরকে নিষেধ করেন, তা হতে বিরত থাক। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি দানে কঠোর। (সূরা হাশর, আয়াত নং ৭)

বর্তমানে আমাদের মধ্যে নফসের অনুসরণ বেশি হচ্ছে। নফসের অনুসরণের মাধ্যমেই ফিতনার প্রসার বেশি হয়। এতে ঈমানও ক্ষতিগ্রস্ত হয় সমানহারে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিতনার প্রচন্ডতা এবং ঈমান হেফাজত সম্পর্কে সতর্ক করে এরশাদ করেন,

 بَادِرُوا بِالأَعْمَالِ فِتَنًا كَقِطَعِ اللَّيْلِ الْمُظْلِمِ يُصْبِحُ الرَّجُلُ مُؤْمِنًا وَيُمْسِي كَافِرًا أَوْ يُمْسِي مُؤْمِنًا وَيُصْبِحُ كَافِرًا يَبِيعُ دِينَهُ بِعَرَضٍ مِنَ الدُّنْيَا ‏"‏ ‏.‏

আঁধার রাতের মতো ফিতনা আসার পূর্বেই তোমরা সৎ আমলের দিকে ধাবিত হও। সে সময় সকালে মুমিন হলে বিকালে কাফির হয়ে যাবে। বিকেলে মু'মিন হলে সকালে কাফির হয়ে যাবে। দুনিয়ার সামগ্রীর বিনিময়ে সে তার দীন বিক্রি করে বসবে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২১৩)

তাই নিজেদের ঈমান আমল হেফাজতের জন্য ওলামায়ে কেরামের সাথে পরামর্শ করে দ্বীনি দুনিয়াবী সকল কাজকর্ম পরিচালনা করা উচিত। সুলতানি মুঘলীয় আমলের ঈদ উদযাপন রীতির পরিবর্তে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সালামের শান্তিময় আদর্শের ঈদ উদযাপন করি। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাওফিক দান করেন। 

লালবাগ মাদ্রাসা ঢাকা 
খতিব, আজিমপুর ছাপড়া মসজিদ, ঢাকা

এমএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ