মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫ ।। ২২ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ৮ জিলকদ ১৪৪৬


দু'বেলা আহার জুটাতে লেবু নিয়ে রাস্তায় মুয়াজ্জিনের ছেলে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সুফিয়ান ফারাবী।।

দরিদ্রদের মুখে হাসি নেই। নেই পেটে খাবার। সরকারি ত্রাণ তহবিলের ডালে চালে বেঁচে আছেন কিছু মানুষ। অনেকের ভাগ্যে তা-ও জুটছে না । অনেকে অভাব-অনটনের কথা প্রকাশ করতেও পারছেন না। একজন মাদ্রাসার শিক্ষক বা মসজিদ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কীভাবেই বা তার অভাব অনটনের কথা মানুষের কাছে বলবেন?

যাকে মানুষ দেখে সম্মানের চোখে। শ্রদ্ধা করে অন্তর থেকে। ভালোবাসায় হৃদয় দিয়ে, সে কিভাবে হাত পাতবে?

এরকম একজন সাভারের আবু রেজা (ছদ্মনাম)। চার ছেলেমেয়ে নিয়ে তার ছয় সদস্যের পরিবার। পেশায় মসজিদের সানি মুয়াজ্জিন। সাভারের কোন একটি মসজিদে চাকুরী করেন তিনি। কিন্তু ছয় সদস্যের পরিবারের দুবেলা ভালো-মন্দ খাবার জোটে না এই বেতনে। তাই তিনি আলাদা একটি ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করেছেন। মসজিদের সামনে প্রতিদিন বসেন শরবত ও সেদ্ধ ছোলা-বুট নিয়ে। তাতে স্বচ্ছলতা না আসলেও দিন কেটে যাচ্ছিল মুয়াজ্জিন আবু রেজার।

হঠাৎ করোনার আক্রমণে তার ব্যবসাটি বর্তমানে বন্ধ। মসজিদের বেতনও বাকি। সংসারে আরো বেশি টানাপোড়ন শুরু হল। দুবেলা চালডাল জোগাতে অক্ষম হয়ে পড়েন তিনি। হুজুর হওয়ার কারণে এলাকার ত্রাণের লিস্টে নাম লেখাতে পারেননি লজ্জায়। ৬ জন মানুষের পেট তো আর একথা শুনবে না।

তাই আবু রেজা সাহেব সিদ্ধান্ত নিলেন তার ছোট ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে সাভার বাসস্ট্যান্ডে লেবু বিক্রি করবেন। ‌

আমি সাভার বাসস্ট্যান্ডে এসেছিলাম জরুরি একটি কাজে। হঠাৎ চোখে পড়ল আনুমানিক ৮-১০ বছরের একটি ছেলে অল্প কয়েকটি লেবু নিয়ে বসে আছে। সাভারের বলিয়ারপুর মাদ্রাসায় নাজেরা বিভাগে পড়ছে ছেলেটি। আমি এগিয়ে গেলাম তার দিকে। জিজ্ঞেস করলাম কেমন আছো?

উত্তরে সে বলল, আলহামদুলিল্লাহ। ভালো আছি।

আচ্ছা তোমার কি ভয় হয় না কঠিন এই পরিস্থিতিতে কোন রকম নিতাপত্তা ছাড়া সাভার স্ট্যান্ডের মত জনাকীর্ণ বাজারে লেবুর ব্যবসা করছ?

তার উত্তরটি আমাকে অবাক করে দিলো। ছেলেটি বলল, বিপদ মুসিবত আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে এবং আমার প্রভু চাইলেই আমাদেরকে বিপদ থেকে মুক্ত করতে পারেন। আমি যদি ব্যবসা না করি তাহলে আমার পরিবার অনাহারে থাকবে। বাসায় আমার মা আছে, ছোট ছোট ভাই-বোন আছে, তারা কী খাবে? আপনি খাওয়াবেন?

প্রতিমাসে মোটা অংকের ঘর ভাড়া দিতে হয় আমার বাবাকে। বাবার একার পক্ষে পরিবারের সব খরচ চালানো সম্ভব নয়। খুব কষ্টে দিন যায়। ওসব আপনি বুঝবেন না। আপনারা তো বড়লোক মানুষ।

ছেলেটির উত্তর শুনে মনে হল আসলেই সত্যি। দারিদ্রতা বই পড়ে শেখার বিষয় নয়। দারিদ্রতা কী এটা বই শেখাতে পারবে না। একমাত্র দরিদ্র অবস্থাই শেখাতে সক্ষম দারিদ্রতা কী জিনিস!

আবু রেজা সতর্ক ও সচেতন একজন মানুষ। অত্যন্ত ধর্মভীরু মানুষ। তবুও এই দুরবস্থায় লজ্জায় মানুষের কাছে হাত পাততে না পেরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাভারের অস্থায়ী কাঁচাবাজারে ক্ষুদ্র ব্যবসা করছেন। যেই বাজারে সামাজিক দূরত্ব বলে কিছু নেই!

অসহায়, দ্বীনদার পরিবারটির পাশে কেউ কি এসে দাঁড়াবেন? আপনার গোপন সহযোগিতা পরিবারটিকে নিশ্চিন্তে রমজানে ইবাদত-বন্দেগী করার সুযোগ করে দিবে। ‌পরিবারের স্বস্তি ফিরবে। ছোট এই ছেলেটাকে রাস্তার পাশে বসতে হবে না দু'চারটা লেবু নিয়ে!

নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশীলদের আমল বিনষ্ট করেন না। অবশ্যই তিনি তার প্রতিদান দিবেন। সাহায্য পাঠানোর ঠিকানাঃ ০১৯১৮৬০০৪৭৭। (পার্সোনাল)

-এটি


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ